মিয়ানমারে আবার সামরিক বাহিনী শাসন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। সামরিক বাহিনী পরিচালিত টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্রেফতার করা হয়েছে দেশটির একসময়ের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং তাদের দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) অন্যান্য শীর্ষ নেতাকে। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের দৃশ্যত গত পাঁচ বছরের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান ঘটল। ২০১৫ সালের নির্বাচনে এনএলডি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে প্রথম দফা সরকার গঠন করে।
অবশ্য সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমেই ওই বেসামরিক সরকার গঠন করা হয়। এর আগে, ২০১১ সালে দেশটিতে গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরুর আগ পর্যন্ত অর্ধশতক কাল মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শাসনাধীনেই ছিল।
জানা যায়, গত বছর ৮ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর থেকে দেশটির বেসামরিক সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ নির্বাচনে এনএলডি সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়। কিন্তু নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী।
নভেম্বরের নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় সোমবার দেশটিতে নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন বসার কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী এই অধিবেশন স্থগিতের দাবি জানিয়েছিল। দু’পক্ষের মধ্যে এ উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে সেনা নিয়ন্ত্রণের ঘটনা ঘটল। বস্তুত গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতা দখল করবে এমন গুঞ্জন চলছিল।
মিয়ানমারে সেনা নিয়ন্ত্রণের ঘটনা দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির জন্য একটি বড় শিক্ষা বলে মনে করি আমরা। দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাকে দীর্ঘ ১৫ বছর গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। এ কারণে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
অথচ ক্ষমতার প্রলোভনে তিনি সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর চালানো জাতিগত নিধন ও তাদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে গেছেন। এ কারণে বিশ্বে তার ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। যে ক্ষমতার জন্য তিনি জেনেবুঝে এ ক্ষতি মেনে নিয়েছিলেন, এবার সেই ক্ষমতা তাকে হারাতে হলো, নিয়তির এ এক পরিহাসই বটে!
মিয়ানমার আমাদের নিকট প্রতিবেশী। কোনো রাষ্ট্রে বড় কোনো পরিবর্তন ঘটলে স্বভাবতই তার উত্তাপ প্রতিবেশী রাষ্ট্রে পড়ে। তার ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ ইস্যুর নিষ্পত্তির ব্যাপারে মিয়ানমারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলছে না; বিশেষ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে নানা রকম টালবাহানা করা হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এ ইস্যুতে আলোচনা চলছিল।
এখন সামরিক শাসন জারি হওয়ায় রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানের কী হবে তা একটি ভাবনার বিষয় বৈকি। এ বিষয়ে আমরা দেশটির সামরিক শাসকদের বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় আছি। আমরা আশা করব, মিয়ানমারের নতুন কর্তৃপক্ষ সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ দেখিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করবে।
Leave a Reply