চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রতীকের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিলেও শেষ পর্যন্ত নমনীয় অবস্থানে আছে কেন্দ্র। ফলে সরকার দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও বিরোধের ফসল ঘরে তুলতে চান মামলা-হামলায় জর্জরিত বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থীরা। তারা মনে করছেন, সরকারদলীয় প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে বিরোধ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ভোটারদের সমর্থন পাওয়া ধানের শীষের প্রার্থীদের জন্য সহজ হবে। এ ছাড়া বিরোধের কারণে স্থানীয় কর্তৃত্ব এবং দলের প্রার্থীকে হারাতে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে পারে। ফলে দলীয় বিশৃঙ্খলার সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে বিজয়ের ফসল ঘরে তুলতে চায় বিএনপি। এ ছাড়া সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিশৃঙ্খলার বিষয়টি পুলিশের একটি প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে।
বিএনপি নেতারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি না হলেও একাধিক দলীয় সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, আমরা সুযোগ নিতে চাই না। ভোটাররা কেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হলেই ধানের শীষের প্রার্থীরা জিতবে। তৃণমূল নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের বিরোধের সুযোগ কাজে লাগানোর পাশাপাশি ভোটারদের কেন্দ্রে আনার পরিকল্পনা হচ্ছে।
জানা গেছে, নগরীর ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে এবার ৫৫ জনকে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ। ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতে আসা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ১৯ জন এবার সমর্থন পাননি। তাদের ১৮ জনই এবার বিদ্রোহী প্রার্থী।
বাদপড়া গতবারের কাউন্সিলররা হলেন- দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে গাজী মো. তৌফিক আজিজ, জালালাবাদে শাহেদ ইকবাল বাবু, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে জহুরুল আলম, দক্ষিণ কাট্টলীতে মোরশেদ আক্তার চৌধুরী, সরাইপাড়ায় সাবের আহম্মদ, পাহাড়তলীতে মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, লালখানবাজারে এএফ কবির মানিক, রামপুরে এসএম এরশাদ উল্লাহ, দক্ষিণ আগ্রাবাদে এইচএম সোহেল, পাঠানটুলীতে আব্দুল কাদের, পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে মাজহারুল ইসলাম, আলকরণে তারেক সোলায়মান সেলিম, ফিরিঙ্গিবাজারে হাসান মুরাদ ও উত্তর পতেঙ্গায় জয়নাল আবেদিন। এর মধ্যে মোহাম্মদ হোসেন হীরণ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। তারেক সোলায়মান সেলিম সম্প্রতি মারা গেছেন। বাকিরা নির্বাচনের মাঠে আছেন। বিদ্রোহীদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী বেশি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নৌকার প্রতীকের প্রার্থীদের অনেককে মানতে পারেননি নগর আওয়ামী লীগের কিছু শীর্ষ নেতা। বিশেষত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত সাবেক কয়েকজন কাউন্সিলর দলীয় সমর্থনের তালিকা থেকে বাদ পড়ে। এ ছাড়া সমর্থনের তালিকায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের আধিক্যও সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। শুরুতে এ বিষয়ে নীরব থাকার কৌশল নিলেও করোনায় নির্বাচন ১০ মাস পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগে বিদ্রোহীদের পক্ষে প্রায় প্রকাশ্যেই সরব হয়েছেন। কয়েকজন বিদ্রোহীকে জিতিয়ে এনে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আধিপত্য প্রদর্শনের একটি সুযোগ নিতে চান তারা।
নৌকার প্রতীকের প্রার্থী ছাড়া আওয়ামী লীগের আর কোনো প্রার্থী নেই উল্লেখ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আওয়ামী লীগ নৌকার প্রার্থীদের জন্য কাজ করবে। বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বিএনপি দলীয় কোন্দলের সুযোগ নিবে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সুযোগতো নিচ্ছেই। তারা এখন আমাদের কর্মীদের ওপর হামলাও করছে।
নগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুুফিয়ান আমাদের সময়কে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের সুযোগ নিতে চাই না। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে আমাদের প্রার্থীরা জয়ী হবে। তাই ভোটকেন্দ্রে নির্বিঘ্নে যাওয়ার ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছি।
এদিকে কাউন্সিলর পদে সরকারি দলের পরিচয়ে একাধিক প্রার্থী থাকায় অর্ধেকের বেশি ওয়ার্ডে সংঘাতের আশঙ্কা করছে নগর পুলিশ। সূত্র জানায়, সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ একটি পুলিশ প্রতিবেদনে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কোন্দল এবং দল সমর্থিত ও ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কার চিত্র উঠে এসেছে।
Leave a Reply