জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সাজেদুর রহমান ওমর নিহতের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, শাজাহান খান, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রটে মাহবুব আলম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এদিন একই থানার রিটন উদ্দিন হত্যা মামলায় ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে যাত্রাবাড়ী থানার রাসেল হত্যা মামলায় তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।

এদিকে গণঅধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মন হত্যাচেষ্টা মামলায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহাইলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এ ছাড়া একই আদালত পল্টন থানার রমজান মিয়া জীবন হত্যা মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামকে এবং মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলায় কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান (বাদশা) কে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

মামলায় আনিসুল হক, শাজাহান খান, সালমান এফ রহমানের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন পিবিআইর এসআই আমিরুল ইসলাম মীর। আর মনিরুল ইমলাম মনুর দুই মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। আসামি সোহাইলের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই বিমান তরফদার।

আসামি সোহাইলের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন,পল্টনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিল। পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করা হয়।আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি সমাবেশ পণ্ড করে দেয়। কয়েকজন মারা যায়। পুলিশও মারা যায়। অনেকে মারাত্মক আহত হয়। ঢাকা বারের শতাধিক আইনজীবীও আহত হয়। বদরুল আলমও আহত হন। আসামির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।

সোহাইলের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তার কিছু বলার আছে কি না জানতে চান আদালত। তখন আদালতকে সোহাইল বলেন, ‘ঘটনার সময় তো আমি চট্টগ্রাম বন্দরে ছিলাম, ঢাকায় ছিলাম না।’ পরে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

এরপর ওমর হত্যা মামলায় আনিসুল হক, শাজাহান খান, সালমান এফ রহমানের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে সবচেয়ে বেশি লোক যেসব জায়গায় নিহত হয়েছে তার মধ্যে যাত্রাবাড়ী অন্যতম। আন্দোলনের পর যখন যাত্রবাড়ী থানা অবমুক্ত করা হয়, সেখানে ১৮টি লাশের স্তূপ দেখা যায়। তারা ফ্যাসিস্টের অন্যতম সহযোগী। তাদের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।

শাজাহান খানের পক্ষে তার আইনজীবী আরিফ তালুকদার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তবে আনিসুল হক এবং সালমান এফ রহমানের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।পরে আদালত প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

এরপর মনিরুল ইসলাম মনুর দুই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। মনুর পক্ষে তার আইনজীবী বলেন, তিনি অসুস্থ। ২০২৪ সালের তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। ২০২৫ সালে চোখের অপারেশন করেন। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। আর রিমান্ড দিলে একদিন চাই সতর্কতার সঙ্গে।’

এ সময় মনিরুল ইসলাম মনু তার ওপেন হার্ট সার্জারির অপারেশনের জায়গা দেখান। নিজের অসুস্থতার কথা আদালতকে জানান।পরে আদালত রিটন হত্যা মামলায় তার এক দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। তবে রাসেল হত্যা মামলায় তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন।