যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট হাউজ বা রাজ্য আইনসভার সামনে বিক্ষোভকারীদের ছোট ছোট দল দেখা গেছে, যাদের কেউ কেউ ছিল আবার সশস্ত্র। ওয়াশিংটন ডিসি’র ক্যাপিটল ভবনে সহিংস হামলার পর জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র নতুন করে সহিংসতার শঙ্কার মধ্যেই এসব ঘটনা ঘটছে।
টেক্সাস, ওরেগন, মিশিগান, ওহাইও ও অন্যান্য কিছু রাজ্যের স্থানীয় ক্যাপিটল ভবনের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে।
কিন্তু নিরাপত্তা কড়াকড়ি আরোপ করার পর আমেরিকার বহু সরকারি ভবনেই রবিবার দিনটি মোটামুটি নিরুত্তাপ কেটেছে।
এফবিআই সতর্ক করে বলেছে, বুধবার নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেককে সামনে রেখে সশস্ত্র বিক্ষোভ হতে পারে।
গত ৬ই জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকরা ওয়াশিংটন ডিসি’র ক্যাপিটল ভবনে লঙ্কাকাণ্ড ঘটানোর দু’সপ্তাহ পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন জো বাইডেন। ওই ঘটনায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫ জন নিহত হন।
এই সপ্তাহান্তে সম্ভাব্য সহিংসতার আশঙ্কায় বহু শহরেই নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। শহরগুলোতে ব্যারিকেড বসানো হয়েছিল। মোতায়েন করা হয়েছিল হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য।
ট্রাম্প সমর্থক ও কট্টর ডানপন্থীদের অনলাইন নেটওয়ার্কগুলোতে রবিবার সশস্ত্র বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়ে পোস্ট করা হয়। যদিও কিছু মিলিশিয়া তাদের সমর্থকদের এই বিক্ষোভে যোগ না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল এই যুক্তিতে যে, নিরাপত্তা কড়াকড়ির মধ্যে এসব বিক্ষোভে যোগ দেয়া হবে ফাঁদে পা দেয়ার শামিল।
যতদূর জানা যাচ্ছে, কয়েকটি শহরে অল্প কিছু বিক্ষোভকারীর ছোট জমায়েত দেখা গেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করছে, ওহাইও অঙ্গরাজ্যের কলাম্বাসের স্টেট হাউজের সামনে বুগালু বয়েস আন্দোলনের জনা পঁচিশেক সদস্য জড়ো হয়েছিল, যারা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ছিল।
তবে মার্কিন সরকারকে উৎখাত করতে চাওয়া এই চরমপন্থী গোষ্ঠীটি বলছে, তাদের এই জমায়েত ছিল আগ্নেয়াস্ত্রের অধিকারের পক্ষে অনেক আগে পরিকল্পনা করা একটি সমাবেশ।
এদিকে, মিশিগানে কুড়ি-পঁচিশজন মানুষকে দেখা যায় ল্যানসিংয়ের স্টেট হাউজের সামনে প্রতিবাদ করতে। এদের কয়েকজনের হাতে রাইফেল ছিল।
একজন বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আমি এখানে সহিংস হতে আসিনি এবং আমি আশা করি কেউই সহিংসতা দেখাবে না”।
ডজনখানেক বিক্ষোভকারীর একটি ছোট দল জড়ো হয়েছিল অস্টিন শহরে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ক্যাপিটলের সামনে। এদেরও কয়েকজনের হাতে রাইফেল ছিল।
ওয়াশিংটনের নিরাপত্তার জন্য ২৫ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সম্ভাব্য অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ে কর্মকর্তারা কতটা চিন্তিত তা বোঝার জন্য এই একটা তথ্যই যথেষ্ট।
আর্মি সেক্রেটারি রায়ান ম্যাককার্থি সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে রোববার বলেছেন, অভ্যন্তরীণ হুমকির আশঙ্কায় প্রত্যেক ন্যাশনাল গার্ড সদস্যের অতীত পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।
রোববারই নিউ মেক্সিকোর একজন কাউন্টি কর্মকর্তাকে ওয়াশিংটনে গ্রেফতার করা হয় ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল ভবনের দাঙ্গার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে।
কাউ বয়েজ ফর ট্রাম্প নামে একটি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা কুই গ্রিফিন প্রতিজ্ঞা করেছেন যে তিনি অভিষেকের দিন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ফিরে আসবেন।
হোয়াইট হাউজে প্রথম দিনেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দেয়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে নির্বাহী আদেশ জারি করবেন মি. বাইডেন, আর প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে আবারো অংশীদার করবেন যুক্তরাষ্ট্রকে।
বাইডেন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আলাদা হওয়া পরিবারগুলোকে একীভূত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
অভিষেকের আগে ওয়াশিংটন ডিসি’র অধিকাংশ এলাকাকেই লকডাউন করে রাখা হয়েছে।
অভিষেকের দিন সাধারণত ন্যাশনাল ম্যালে বহু মানুষের সমাগম ঘটে, তবে সিক্রেট সার্ভিসের অনুরোধে এবারে তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
বাইডেনের কর্মকর্তারা এরই মধ্যে আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে মহামারির কারণে তারা যেন অভিষেকে অংশ নেয়ার জন্য ওয়াশিংটনে না আসেন।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষের উচিত হবে দূর থেকে এই অনুষ্ঠান উপভোগ করা।
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply