1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ অপরাহ্ন

সম্পর্ক : প্রেম নাকি গুরুত্ব?

আফরোজা আঁখি
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২১

কতবারও ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া/তোমারও চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া -রবীন্দ্রনাথ। রবিঠাকুর প্রেম নিবেদনের গভীর আকুলতা প্রকাশ করতে এরূপ বহু গান লিখেছেন। ‘প্রেম নিবেদন’, ‘প্রেমের আকুলতা’-কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় মর্মস্পর্শী সব রচনা মানুষকে মুগ্ধ করে আসছে। আবার নজরুল ইসলাম বাবু লিখেছেন: ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে একটি কথাই জেনেছি আমি, পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই।’ কেমন সাংঘর্ষিক প্রেমের অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রগুলো! আমার মনে হয় এটি দৃষ্টিভঙ্গির বিষয় মাত্র। যে যেভাবে দেখেন। কবি-সাহিত্যিকদের প্রেমের সম্পর্ককে বিচার-বিশ্লেষণে রেখে আমাদের বাস্তবতার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে দেখা যাক সম্পর্কে ‘প্রেম’ নাকি ‘গুরুত্ব’-কিসের ভিত্তিতে চলছে জীবনের গতি?

প্রেম-ভালোবাসা একটি আপেক্ষিক বিষয়। কিসের ভিত্তিতে মাপা যেতে পারে এ অদৃশ্য প্রপঞ্চটি? এক গবেষণায় দেখা গেছে-গুরুত্ব। আপনি যখন কোনো বিষয় বা মানুষকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবেন, তখন তাকে আমরা বলি ভালোবাসা বা প্রেম। প্রক্রিয়াটি চলমান থাকলে এক সময় আসক্তিতে পরিণত হয়। মনে হতে পারে, এর থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সেই বিষয়টি থেকে গুরুত্ব কমিয়ে ফেলুন। দেখা যায়, আস্তে আস্তে তা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং জীবনের সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা মানুষ কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে, সেটা বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত। যেমন, আপনি দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে পছন্দ করেন; বা বই পড়তে বা লিখতে, গান শুনতে পছন্দ করেন; অথবা আপনি আপনার অনেক বন্ধুর মধ্যে হঠাৎ একজনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছেন বা দিচ্ছেন। এসব নানা বিষয়ে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়তে পারে, যাকে আমরা প্রেম, আসক্তি বা অভ্যাস বলতে পারি।

এখন বিবেচনা করে দেখতে হবে এসব আসক্তি বা অভ্যাস আপনার জীবনে কতটা ইতিবাচক গতি দিচ্ছে বা ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যদি ইতিবাচক হয়-তেমন আসক্তি বা অভ্যাস থাকতে পারে। তবে যদি তা আপনার সামাজিক পরিস্থিতি বা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাহলে তাকে গুরুত্ব দেওয়া ছেড়ে দিতে হবে। অন্য কিছুতে মনোযোগ বাড়াতে হবে। এতে মনঃসংযোগ কনভার্ট হতে বাধ্য। এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

ছোটবেলায় বিকালে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যাওয়ার স্মৃতি। সারা দিন-রাত ধরে প্রস্তুতি চলত বিকালে খেলব বলে। তখন খেলাটাই ছিল একটা বিশেষ অভ্যাস, আবার আসক্তিও বলা যেতে পারে। কিন্তু যখন একটা সময় মনে হলো, পরীক্ষা আসন্ন, এখন খেলার চেয়ে পড়ালেখা করা বেশি জরুরি। পরীক্ষায় ভালো ফল করা জরুরি। আস্তে আস্তে পড়ার প্রতি মনোযোগ চলে আসে। খেলার নেশা কেটে যায়।

এখানে বিষয়টি হলো ‘গুরুত্ব’। একটা সময় মনে হয়েছিল বিকালে খেলা গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী সময়ে পড়ালেখা গুরুত্ব পেল। সেই বিকালের খেলার নেশার কথা মনে পড়তে হাসি পায়। নিজে নিজেই হেসে উঠি। কত ছেলেমানুষ ছিলাম!

তেমনি গুরুত্ব সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব ফেলে। বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক বর-কনে পছন্দের বাইরে বা ইচ্ছার বাইরে বাবা-মার চাপে বা সামাজিক-পারিবারিক বিভিন্ন দিক চিন্তা করে বিয়ে করেন। এবং সংসারে মনোনিবেশ করেন, ভালো থাকেন, সংসার ও কর্মের মাঝে অতীত ভুলে যান অবলীলায়। তখনও অতীতের পাগলামির কথা মনে হলে হাসি পায়। এসব ঘটনা, অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে জীবনের অভ্যাস, আসক্তি নির্বাচন করা উচিত।

গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বিবেচনায় সম্পর্ক, ভালোলাগা, ভালোবাসায় গুরুত্ব দিলে জীবন হয় সুন্দর। বিচার-বিবেচনা বিসর্জনের মাধ্যমে কোনো কিছু ধরে রাখার ফল কখনো ভালো হয় না; হতে পারে না। জীবনের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ বা অপরিহার্য বিষয়ের বাইরেও জীবন গতিময়, জ্যোতির্ময়। জীবন উপভোগ করতে হবে, সেই সঙ্গে ঈশ্বরের সন্তুষ্টি। তাই প্রয়োজন সততার অনুশীলন।

জীবন-গতি আলোকিত করতে সততার পথ বেছে নিন। ঈশ্বরের প্রেমে-ইবাদতে মনোনিবেশ করলে জীবন চলার পথ যেমন মসৃণ হয়, তেমনি মনে আসে প্রশান্তি। ভালো কাজ করতে মানবকল্যাণে নিজেকে ব্রত করার মাধ্যমে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির পথে গুরুত্বারোপ করাই উত্তম পন্থা।

আফরোজা আঁখি : সাংবাদিক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com