বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ একটি তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এই ব্যাংকের সহকারী পরিচালক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ৭৪৫ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য যে চূড়ান্ত প্যানেল তৈরি করা হয়েছিল, তা থেকে দুজনের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে দুজনের নাম ঢুকানো হয়েছে।
এই দুর্নীতি করতে গিয়ে উত্তরপত্রে কম নম্বর পাওয়া দুজনকে বেশি নম্বর দিয়ে নতুন করে নিয়োগের প্যানেল চূড়ান্ত করা হয়। পরে অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিটে এ ঘটনা ধরা পড়ায় নম্বর জালিয়াতি করে যে দুজনকে প্যানেলে ঢুকানো হয়েছিল, তাদের আর নিয়োগ দেওয়া হয়নি; যে দুজন চূড়ান্ত প্যানেলে ছিলেন, তাদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ জালিয়াতির ঘটনাটি বেশ পুরনো, ছয় বছর আগের। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এত দীর্ঘ সময়ে এই দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? তদন্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসন বিভাগের ৬ কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিয়োগ বিভাগের তৎকালীন ডিজিএম তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে স্বীকারোক্তি করেছিলেন যে, প্রভাবশালী মহলের চাপে দুজন প্রার্থীর উত্তরপত্রে প্রাপ্ত নম্বর কাটাকাটি করে বাড়িয়ে তাদের প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
আমাদের প্রশ্ন হলো, তৎকালীন ডিজিএমের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যের পরও তার এবং সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? ঘটনাটি মোটেও ছোট নয়। উত্তরপত্রে নম্বর টেম্পারিংয়ের মতো ঘটনা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
আমরা চাইব, দেরিতে হলেও বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা দুর্নীতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা না হলে ভবিষ্যতেও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ঘটার আশঙ্কা থেকে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অভিভাবক। একইসঙ্গে এই ব্যাংক দেশের অর্থনীতির দেখভালের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এটাই যখন বাস্তবতা, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটে থাকলে তা নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তার বিষয়।
সবচেয়ে বড় কথা, তৎকালীন ডিজিএম প্রভাবশালীদের যে চাপের কথা বলেছেন, সেই বক্তব্যও উদ্বেগের। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালীরা তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না।
আমাদের সর্বশেষ কথা হলো, শুধু বাংলাদেশ ব্যাংক নয়, দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার স্বার্থে স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা জরুরি। এটা হতে হবে এমন ব্যবস্থাপনা, যাতে কেউ চাইলেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসৎ অভিপ্রায়ে হস্তক্ষেপ করতে না পারে।
Leave a Reply