কনকনে শীত ও ঠাণ্ডার তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাঁদপুর ও আশপাশের জেলাগুলোয় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া রোগী। বছরের প্রথম ১৩ দিনেই আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) মতলব হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪ হাজার ৩৫৯ শিশু। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গড়ে প্রতিদিন ৩০০ শিশু ভর্তি হয়েছে হাসপাতালটিতে, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চার গুণ। পচাবাসি খাবার খাওয়া, অনিরাপদ পানি পান ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এ হারে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আইসিডিডিআর,বি মতলব হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ দিনে ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয় ৪ হাজার ৩৫৯ জন। এর মধ্যে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৯৮০ শিশু। এসব শিশু শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী। ভর্তিকৃত মোট রোগীর ৯২ শতাংশের বেশি শিশু। এ ছাড়া বিভিন্ন বয়সী রোগী রয়েছে ৩৭৯ জন। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয়েছে প্রায় ২৯৫ শিশু। এ সংখ্যা বছরের স্বাভাবিক সময়ের প্রায় চার গুণ বেশি। স্বাভাবিক সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ শিশু ভর্তি হয়। বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সেখানে ভর্তি হয়েছে মোট ২৭৫ জন ডায়রিয়া রোগী। এর মধ্যে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ২২৫।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, মতলব আইসিডিডিআর,বিতে ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে চাঁদপুর সদরের ২৮৩, জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১১৬, হাজীগঞ্জের ৭৮, কচুয়ার ৬৭, মতলব উত্তরের ৭৫, মতলব দক্ষিণের ৭৩, কুমিল্লার বরুড়ার ৩৯০, বুড়িচংয়ের ৩১০, চান্দিনার ৩১৩, কুমিল্লা সদরের ২৭৭, দেবীদ্বারের ৩২০, দাউদকান্দির ৩১৭, লাকসামের ৩১৫, মুরাদনগরের ৩৩১, তিতাসের ৩৬০, লক্ষ্মীপুর সদরের ৩০১, রায়পুরের ২০৪ ও রামগঞ্জের ২২৯ জন। বাকিরা কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, শরিয়তপুরসহ আরও কয়েকটি জেলার।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ওয়ার্ডেই রোটা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের উপচেপড়া ভিড়। বহির্বিভাগেও আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চলছে। দম ফেলার যেন সময় নেই চিকিৎসক ও নার্সদের। এ ছাড়া রোগী ও রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনদের জন্য হাসপাতাল আঙিনায় তাঁবু টাঙিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কুমিল্লার কুচাইতলী এলাকার শিশু শেখ মুজাইয়ার মা ফারজানা বলেন, ‘গত শুক্রবার থেকে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হওয়ায় তার ১৯ মাসের শিশুকন্যাকে নিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে দুদিন থাকার পর সুস্থ না হওয়ায় চিকিৎকদের পরামর্শে রবিবার দুপুরে মতলব আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ভর্তি করাই। এখন আমার সন্তান অনেকটাই সুস্থ।’
হাসপাতালের কেন্দ্রপ্রধান ডা. আল ফজল খান বলেন, ‘বর্তমানে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর পাতলা পায়খানার সঙ্গে বমি ও জ্বর থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিশুকে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ এবং ছয় মাসের বেশি বয়সের শিশুদের প্রতিদিন একটি করে বেবিজিন ট্যাবলেট এক চামচ পানিতে গুলিয়ে ১০ দিন খাওয়াতে হবে। স্যালাইন খাওয়ানোর ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকতে হবে। এক প্যাকেট স্যালাইন অবশ্যই আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে নিতে হবে।’
Leave a Reply