ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে প্রায় এক যুগ ধরে ইউরো অনকোলজি, তথা কিডনি, মূত্রনালি. মূত্রথলি, প্রস্টেট, প্রস্রাবের রাস্তা, লিঙ্গ, অ-কোষ ইত্যাদি স্থানের ক্যানসার রোগীর সেবা প্রদানের সুযোগ হয়েছে। দেশের সব জায়গা থেকে বিশেষায়িত হাসপাতালে শরীরের ভিন্ন স্থানের ক্যানসার নিয়ে সেবা নিতে আসছেন, তার মধ্যে মূত্রথলির ক্যানসার রোগীর সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। এবার জানব কিছু অজানা তথ্য।
রোগের উৎপত্তি বা লক্ষণ : মূত্রথলির ক্যানসার রোগী যেসব লক্ষণ নিয়ে আসেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো- প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া (যা সাধারণত ব্যথাবিহীন), চাকা চাকা দুর্গন্ধযুক্ত জমাট রক্ত (যাতে প্রস্রাব আটকে যেতে পারে)। তবে প্রস্রাব জ্বালাপোড়া, ঘনঘন প্রস্রাব, তলপেটে ব্যথা, কোমরে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণও হতে পারে। কাজেই যে কোনো বয়সের নারী বা পুরুষের প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে গুরুত্বের সঙ্গে দ্রুত ইউরোলজি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মূত্রথলির ক্যানসার যদি জটিল আকার ধারণ করে, তবে কাশি, পেটব্যথা, হাড়ব্যথা, জন্ডিস ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ মূত্রথলির ক্যানসার রোগী পুরুষ এবং তাদের বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।
সতর্ক সংকেত : মূত্রথলির ক্যানসার হওয়ার কারণ সব সময় জানা না গেলেও কিছু কিছু কারণ স্পষ্ট। যেমন- ধূমপান করলে বা তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন, পেশাদার রঙমিস্ত্রির কাজ, মূত্রথলির স্থায়ী প্রদাহ বা পাথর থাকলে মূত্রথলিতে টিউমার হতে পারে। আবার কোনো কোনো সময় অন্য ক্যানসারের ওষুধ সেবন বা রেডিওথেরাপি নিলে এমনকি বংশগত কারণেও হতে পারে।
চিকিৎসা : মূত্রথলির ক্যানসার চিকিৎসা সব সময় ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করতে পারলে ইউরো অনকোলজি চিকিৎসায় শতভাগ রোগমুক্তি সম্ভব। কিন্তু নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। কাজেই প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে বা অন্য সমস্যা থাকলে দ্রুত ইউরোলজি ডাক্তারের পরামর্শে রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থ করা প্রয়োজন। প্রস্রাব পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাম, সিটিস্ক্যান, এমআরইউরোগ্রাফি, যন্ত্রের সাহায্যে প্রস্রাবের থলি পরীক্ষা ও প্রয়োজনে টিউমার কেটে পরীক্ষা করে ক্যানসার নির্ণয় করা যায়। অ্যান্ডস্কোপিক পদ্ধতিতে মূত্রথলির ক্যানসার সঠিকভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা একসঙ্গে করা যায়।
শুরুতে ধরা পড়লে : মূত্রথলির টিউমার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, ভালো ধরনের হয় এবং থলিতে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে যন্ত্রের সাহায্যে পূর্ণাঙ্গভাবে টিউমার কাটা যায়। যদি বিলম্ব হয়, ক্যানসার জটিল আকার ধারণ করে বা থলি থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে যায়, তখন কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির সাহায্যে চিকিৎসা করা যায়। সব ধরনের চিকিৎসাতেই সাফল্য রয়েছে। কাজেই মূত্রথলির টিউমার বা ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দিলে অথবা রোগ ধরা পড়লে হতাশ না হয়ে দ্রুত ইউরো অনকোলজি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসা নিয়ে জটিলতা ছাড়াই আরোগ্য লাভ সম্ভব।
Leave a Reply