করোনা ভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হোবেই প্রদেশের উহান থেকে আসা ৩১৬ বাংলাদেশীর স্থান হয়েছে আশকোনা হজ ক্যাম্পের গণরুমে। এদের মধ্যে শিশু ১৫ জন। শিশুদের মধ্যে দুই বছরের কম বয়সীর সংখ্যা দুই। বিমান বাংলাদেশের একটি বিশেষ ফ্লাইটে এরা এসেছেন। তাদের সভকে চারজন চিকিৎসকও রয়েছেন।
হজ ক্যাম্পে অবস্থানরতরা জানিয়েছেন, মশার উপদ্রবে টিকে থাকা কঠিন। নেই কোনো মশকনিধন ব্যবস্থা। মেঝেতে পাতা বিছানায় বসতেই হাজারো মশার আক্রমণ। করোনা ভাইরাসের ভয়ে তারা ভীত না হলেও তারা এখন ডেঙ্গু ভাইরাসের ভয়ে আতঙ্কিত।
সবারই স্থান হয়েছে হজ ক্যাম্পের ফ্লোরে। ছেলে-মেয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের সবাইকে এক সাথে থাকতে দেয়া হয়েছে। তারা বলছেন, আমরা এখানে চরম দুর্দশায় আছি। চীনেই ভালো ছিলাম। এখানে আমরা কেউ রোগী না। চীন থেকে আসার আগে চীনা কর্তৃপক্ষ আমাদের পরীক্ষা করেই ছেড়েছে। আমাদের মধ্যে কেবল দু’জনের শরীরে তাপ একটু বেশি ছিল। সে দু’জকে রেখে দিয়েছে সেখানে। তারা বলছেন, এখানে আমরা কেউ রোগী নই। আমাদের কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নই। আমরা সকলেই সুস্থ আছি।
এদের একজন নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এখানে আসার পর এখন অনেকেরই মনে হচ্ছে চীনে থাকলেই ভালো হতো। সেখানে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক এবং ঘরে বন্দী থাকা ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা ছিল না। মনে হচ্ছে এখানে এসে খুব ভুল করে ফেলেছি। উহানে বেশ ভালই ছিলাম। এখানে এক রুমে পঞ্চাশ জন ফ্লোরে অবস্থান করছি। সবচেয়ে বেকায়দায় আছেন মহিলারা। তাদের কোনো প্রাইভেসি নেই। তবে এখানকার কর্তৃপক্ষ আমাদের ফ্লোরে থাকার জন্য একটি করে ফোম দিয়েছেন। আজ দুপুরে শনিবার আমরা এক সাথে এসেছি ৩১৬ জন। তিনি জানান, এখানে মশা ভন ভন করছে সারাক্ষণ। একটা করে মশারি দেয়া হয়েছে কিন্তু বাজে ব্যবস্থাপনা। দুর্গন্ধ, সর্বত্র অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। বাথরুমে যাওয়া যায়নি দুর্গন্ধের জন্য। হজ ক্যাম্পে উহান ফেরত ওই বাংলাদেশী গতকাল রাতে জানান, দুপুরে এসেছি; কিন্তু কোনো চিকিৎসক এখনো আসেননি।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবশ্য চিকিৎসকের প্রয়োজনও নেই। আমরা এখানে কেউ অসুস্থ নই, তারা কেন আসবেন?’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ তত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের লক্ষ্মণ প্রকাশ না পেলে মানুষ বেশ সুস্থ থাকেন তা সত্ত্বেও তারা ভাইরাসটি অন্যের মধ্যে ছড়াতে থাকেন। লক্ষ্মণ প্রকাশ পেতে ১৪ দিন সময় লাগে। এর মধ্যে লক্ষ্মণ প্রকাশ না পেলে ধরে নেয়া হবে যে তিনি করোনা ভাইরাস মুক্ত।
চীন ফেরতদের দুপুরের খাবার হিসাবে দেয়া হয়েছে পাউরুটি আর কলা। বাথরুমের অবস্থাও খুব শোচনীয়। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে বাচ্চারা। হাজী ক্যাম্পের স্টাফদের বিরুদ্ধে চরম অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন অনেকেই। উদ্বেগ, ভয় আর উৎকণ্ঠায় প্রতিটা মিনিট পার করছেন বলে জানান তারা।
এ দিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কোনো জাহাজের কোনো নাবিক করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসায় বন্দরের মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। বন্দরে আসা প্রত্যেকটি জাহাজের মাস্টারকে জাহাজ পোর্ট লিমিটে আসার সাথে সাথে জানাতে হবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো নাবিক তার জাহাজে নেই। এ ছাড়া পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা জাহাজগুলোর শতভাগ নাবিকের পোর্ট হেলথ অফিসার কর্তৃক স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদ ঘোষণা করা ছাড়া কোনো জাহাজকে বন্দরে ঢোকার অনুমতিও দেয়া হবে না।
Leave a Reply