1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন

দু’টুকরো আমেরিকা!

মার্টিন কেটল
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২০

ফলাফল যা-ই হোক, এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের (২০২০) যে পরিসংখ্যান রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালের মতো এবারও মার্কিন সমাজ বিভক্ত। প্রায় অর্ধেক ভোটার মত দিয়েছে জো বাইডেনের পক্ষে; বাকি অর্ধেকের জোর সমর্থন ট্রাম্পের পেছনে। অনেকটা গতবারের মতোই এবারের নির্বাচন ঘিরেও যে এমন হাড্ডাহাড্ডি কাণ্ড ঘটবে সেটি খুব কমসংখ্যক ব্যক্তিই ভাবতে পেরেছিলেন বলে মনে হয়।

অথচ এমনটি ঘটতে পারে সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা কখনও সতর্ক করেননি, তেমন কথাও বলা যাবে না। তবু অনেকের কাটছে না বিস্ময়ের ঘোর। তারা সম্ভবত মেনেই নিতে পারছেন না, চলতি নির্বাচনটি হয়ে গেল ২০১৬ সালের মতোই! আমি মনে করি, এ নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওই আশাবাদীরা সম্ভবত অভিজ্ঞতার ওপর আশাকে স্থান দিয়েছিলেন এবং ভুলে গিয়েছিলেন, রাজনীতিতে কখনোই ক্ষমতার স্থান দখল করতে পারবে না প্রত্যাশা।

বিভিন্ন জরিপ সংস্থার হালও মোটামুটি একই রকম। জয়-পরাজয় নির্দেশক কোনো আত্মবিশ্বাস নেই সেখানে। ভোটের ফল যে মার্কিন সমাজের বিভক্তির দিকে ইঙ্গিত করতে পারে, তেমন কোনো অনুমানও ছিল না সেগুলোয়। এ ত্রুটির জন্য আমি বলব অংশত মিডিয়াগুলো নিজে দায়ী। জরিপ দিয়ে মিথ্যা ফল তুলে আনতে চায় না কেউই। কিন্তু তাদের নিযুক্তকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যে লুক্কায়িত স্বার্থ থাকতে পারে, কিছু ভোটার যে মিথ্যা বলতে পারে এবং সঠিক ভোটারকে সঠিক প্রশ্নটি করা নাও হতে পারে-এসব বিষয় বোধকরি মাথায় ছিল না তাদের।

ফলে এবারের নির্বাচনকে ২০১৬ সালের নির্বাচনের যমজ ভাই মনে হচ্ছে আমার। এখন যদি জো বাইডেন জিতে যান তাহলে বলব, এতদিন ভুল ইস্যুকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। জো বাইডেন অবশ্যই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু তার প্রচারণার লক্ষ্যবস্তু? নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত তার কথা শুনে মনে হয়েছে, কোভিড-১৯ ছাড়া মার্কিন ভোটারদের চিন্তার আর কোনো বস্তু নেই! আমি জানি, বহু উদারপন্থী তার সঙ্গে একমত। কিন্তু সাধারণ শ্বেতাঙ্গ শ্রমজীবী, বিশেষত পুরুষ ভোটাররা, যারা ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে জয় তুলে দিয়েছিলেন? এখনও ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন অটল তাদের। তারা এখনও অনুভব করেন, নিজ সমাজে তারা অবহেলিত। আমেরিকা যেখানে অভিবাসীদের স্বপ্নপুরী হয়ে উঠেছে, সেখানে তাদের দশা বেহাল, তারা কর্মহীন। তাদের পক্ষে বলার নেই কেউ; বহু আগেই তাদের পরিত্যাগ করেছে ডেমোক্রিটিক পার্টি।

সে জন্য ২০২০ সালেও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতি বদলায়নি তাদের মনোভাব। তাদের মনোভাব বদলায়নি মিডিয়ার প্রতিও। হয়তো ভূরি ভূরি রিপোর্ট করেছে মিডিয়া। অথচ শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের সিরিয়াস সমস্যাগুলোর প্রতি মিডিয়ায় দেখা যায়নি তেমন সহানুভূতি। ইচ্ছা করেই যেন তাদের পিছিয়ে রাখা হচ্ছে; অবজ্ঞা করা হচ্ছে; এড়িয়ে চলা হচ্ছে বর্জ্যরে মতো। আর এ অবস্থাটিই সর্বব্যাপী, গভীর ও মূল আলোচ্য। ট্রাম্প হয়তো বাইডেনের মতো সুন্দরভাবে কোনো কিছু উপস্থাপন করতে পারেন না। কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের অভিযোগগুলো তুলে ধরার বেলায় ট্রাম্প কি পটু নন হিলারির চেয়ে?

খেয়াল করার মতো বিষয়, এ নির্বাচনে কিছু কিছু রাজ্যে অনুমানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়েছে ট্রাম্পের বর্তমান অবস্থান। অর্থাৎ, ওসব এলাকায় কোভিড-১৯ বা জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু নির্বাচনী জয়-পরাজয়ে কোনো নির্ধারক ভূমিকায় ছিল না। বরং আগের মতোই মুখ্য ইস্যু ছিল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তথা ২০০৮ সালে সৃষ্ট বিপর্যয়ের ধস এবং আর্থসামাজিক বৈষম্য কাটিয়ে ওঠার প্রয়াস।

আমি বলছি না, এ নির্বাচনে পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক ছিল কোভিড-১৯। বৈশ্বিক সংক্রমণটি মোকাবেলায় ট্রাম্পের ক্রমাগত খামখেয়ালিপনাপূর্ণ মন্তব্য অবশ্যই কিছু ক্ষেত্রে এগিয়ে দিয়েছে বাইডেনকে। তদুপরি কিছু ভোটার আছেই, যারা শত প্রলোভন বা সমালোচনায়ও ভোট দিতেন ডেমোক্রেটিক পার্টিকে। লক্ষণীয়, শেষ পর্যায়ে কোভিড ইস্যুকে অগ্রাহ্য করেননি ট্রাম্পও। বিশেষত প্রচারণার শেষ কয়েক সপ্তাহে রাজনৈতিক ক্ষতিটুকু অনেকটাই পুষিয়ে আনতে সক্ষম হন তিনি।

হয়তো কোভিড বিষয়ে ট্রাম্পের জনস্বাস্থ্য ভাবনাগুলোকে বিশেষজ্ঞরা বলবেন উসকানিমূলক, বেপরোয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন; কিন্তু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেগুলো ব্রিলিয়ান্ট। তিনি শেষ কয়েক সপ্তাহে লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হন যে, তার নেতৃত্বে করোনাভাইরাস অগ্রাহ্য করেই অর্থনীতিকে টেনে তুলবে আমেরিকা। মিডিয়া এটি দেখতে পায়নি। কারণ, ট্রাম্পের শক্তির ওপর তাদের বিশ্বাস কম!

এও বলছি না, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুও কোনো ইস্যুই ছিল না। অবশ্যই ছিল। কিন্তু কোভিড ও ফ্লয়েড দুই কার্ডই বেশি খেলে ফেলেছিলেন বাইডেন। সে জন্য হয়তো কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট বেশি পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তার মাথায় রাখা উচিত ছিল, মোট ইলেকটরেটের বেশিরভাগই শ্বেতাঙ্গ এবং শক্তভাবে দাঁড়িয়েছেন ট্রাম্পের পেছনে।

ফলে তুলনামূলকভাবে হিসপ্যানিক ও অন্য সংখ্যালঘুদের ভোট বাইডেন বেশি পেলেও মজার বিষয় হচ্ছে, শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত সংখ্যালঘু এলাকায়ও ২০১৬ সালের তুলনায় ভোট বেড়েছে ট্রাম্পের। দু-টুকরো আমেরিকার এ চিত্র গত নির্বাচনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এবারের নির্বাচনে জাতিগত বিভক্তির এ চিত্র আরও বেশি প্রকট।

অবশ্য যে-ই জিতুন এ নির্বাচনে, দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব থাকবে তার। বাইডেন জিতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র এবং সারা বিশ্বের জন্য কিছু নীতিগত পরিবর্তন আসবে। কিন্তু তিনি হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পর থেকেই সমালোচনা বাড়বে পার্টির অভ্যন্তরে। বাইডেনের বয়স নিয়ে নিন্দা হবে। হার্ডলাইনার ডেমোক্র্যাটরা বলবেন, বাইডেনের চেয়ে আরেকটু কড়া ডেমোক্র্যাট হলে ভালো হতো। এদিকে ট্রাম্প যদি জিতে যান, কাউকেই ছাড় দেবেন না তিনি।

তিনি গতবার প্রেসিডেন্টশিপের বাণিজ্যিকীকরণ শুরু করেন; এবার মাত্রা বাড়বে তার। ট্রাম্পের প্রতি আরও বাড়বে পার্টি সদস্যদের আনুগত্য। ট্রাম্প হয়ে পড়বেন আগামী প্রজন্মের রিপাবলিকান সমর্থকদের আইকন!

অনেকের ধারণা ছিল, কারও কারও মনে আশাও ছিল, ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচন মোড় ঘুরিয়ে দেবে বিশ্ব ইতিহাসের। বাস্তবতা বোধকরি তেমন নয়। বরং যে ট্রাম্পকে গত গ্রীষ্মেও হোয়াইট হাউসে অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছিল, নির্বাচনের পর এখন মনে হচ্ছে, অত সহজে ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না ওভাল অফিস।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর : জায়েদ ইবনে আবুল ফজল

মার্টিন কেট্ল : ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com