1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল নিয়ে কিছু কথা

মো: সরোয়ার উদ্দিন
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০

অবশেষে বাতিল করা হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও। ৭ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এ ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় মেধার মূল্যায়ন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ সিদ্ধান্তে মেধার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে তা নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ কিংবা বিষয়ে ভর্তি এমনকি বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অটোপাস করেছেন। মূল্যায়ন ও ফল তৈরি হবে এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি এ নিয়ে বিস্তারিত কাজ করছে- যা আগামী ডিসেম্বরের ভেতর পরীক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করবে। বিভাগ পরিবর্তনও বিশেষজ্ঞ কমিটি করবে এবং নভেম্বরের মধ্যে পরামর্শ ও মতামত দেবে। গ্রেড নির্ধারণ সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী কোনো সুনির্দিষ্ট মতামত দেননি। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, শিক্ষা বোর্ড ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করার কথা উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী। অনেক শিক্ষার্থী এক বা দুই বিষয়ে বা পুরো ফল আশানুরূপ না হওয়ায় আবারো পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন- এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সব শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে একইভাবে মূল্যায়নসহ গ্রেড নম্বর দেয়া হবে কেবল কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে’। পরীক্ষা বাতিল প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিয়াউল হক বলেন, ‘বড় পরীক্ষা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি। পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলে সবাই পাস করবে।’

উল্লিখিত সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক পরীক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যৎ পাঠপরিকল্পনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যেমন- এসএসসিতে ভালো ফল করতে পারেননি; কিন্তু এবারের এইচএসসিতে ভালো প্রস্তুতি এবং ভালো রেজাল্ট প্রত্যাশা করছিলেন। এসব পরীক্ষার্থী কিভাবে তাদের সে ঘাটতি পূরণ করবেন? করোনার কারণে একাদশ ও দ্বাদশে ক্লাসসহ পড়াশোনা তেমন হয়নি; নির্ধারিত কোর্সগুলোর ওপর শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের গভীরতা যাচাই এবং পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ছাড়ায় সবাইকে অটোপাস ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে যোগ্য ও অযোগ্য সবাই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। এ ধারা যদি আগামীতে চলমান থাকে তা হলে পড়াশোনা, প্রস্তুতি, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ছাড়াই শিক্ষার্থীরা অনার্স কোর্স সম্পন্ন করবেন- এটি জাতির জন্য কখনোই কাম্য নয়।

সরকার পরীক্ষা বাতিলের ধারাবাহিকতা চলমান রাখলে, গত শিক্ষাবর্ষে যে সব শিক্ষার্থী অনার্স কোর্স পাস শেষে মাস্টার্স শেষ পর্বে ভর্তি হয়েছেন, কিন্তু করোনার কারণে ক্লাসসহ পড়াশোনা এবং তেমন প্রস্তুতিও নেই, পরীক্ষা গ্রহণ এবং চূড়ান্ত মূল্যায়ন ছাড়ায় এ বছর সরকার অটোপাস ঘোষণা করলে এ অবস্থায় পূর্ববর্তী সময়ে মাস্টার্স পাস (স্বাভাবিক নিয়মে পরীক্ষা) প্রার্থীদের সাথে বর্তমান ঘোষিত মাস্টার্সধারীদেরও (অটোপাস) কলেজে প্রভাষক হিসেবে আবেদন, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ এবং চূড়ান্তভাবে নিয়োগপত্র পেলেন। অটোপাস সনদধারী প্রভাষককে কলেজে মাস্টার্স শেষ পর্বের ক্লাসে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে ঠিকমতো পাঠদান করতে পারবেন কি? কখনো না, কারণ এ অটোপাসধারী শিক্ষকরা নিজেও মাস্টার্সের শেষ পর্বের বিষয়গুলো পড়েননি এবং জানেন না, বিধায় কী পড়াবেন!

সুপারিশ : এক. করোনাকালে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া কিংবা পরীক্ষার্থীদের অটোপাস ঘোষণা দেয়া সঠিক হবে না। পরিবেশ ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এ পরীক্ষা নেয়া, যথাযথভাবে মূল্যায়ন শেষে যোগ্য শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে যোগ্য বলে ঘোষণাসহ ভর্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি এসব ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা করোনা বা আপদকালীন সময় যোগ করে চাকরিতে প্রবেশের চূড়ান্ত বয়সসীমা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকারই পারে সব দায়িত্ব পালন করতে। প্রেসিডেন্ট এরশাদের শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা পর্ব শেষ করতে ব্যর্থ হন। ফলে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
দুই. বর্তমানে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সেশনজট নেই। তাই উচ্চশিক্ষা পর্ব শেষ হওয়ার সাথে আরো অতিরিক্তভাবে সর্বাধিক তিন বছর চাকরিতে প্রবেশের প্রস্তুতির জন্য সময় যোগ করে চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ চূড়ান্ত বয়সসীমা পুনর্নির্ধারণ করাই যুক্তিসঙ্গত।

তিন. সরকারি কলেজে চাকরির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৯ বছর। এ চাকরি ত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করায় চাকরির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৬৫ বছর। একটি স্বাধীন দেশে চাকরির বয়সসীমার ক্ষেত্রে বৈষম্য নীতি কতটুকু গ্রহণযোগ্য? যেকোনো সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমান সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।

লেখক : গবেষক ও কলেজশিক্ষক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com