এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না। করোনা জীবনকে বিপন্ন করেছে। সীমান্তহীন এ আগ্রাসনের শিকার গোটা বিশ্ব। তবে এ মুহূর্তে একমাত্র শিক্ষা ছাড়া অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে আবার স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করেছে।
তবে সংক্রমণের তীব্রতা কমছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। বৈরী প্রকৃতিকে মানিয়ে নেয়া মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর সর্বত্রই তাই আত্মরক্ষায় নিত্যনতুন কৌশলের উদ্ভব ঘটেছে। একদিকে প্রতিষেধক তৈরির প্রাণপণ প্রচেষ্টা; অন্যদিকে অসুখের এ সর্বনাশা বিস্তারকে থামিয়ে দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি।
মাঝে মধ্যে বাদ সেধেছে মানুষেরই খামখেয়ালিপনা, ঔদাসীন্য বা কখনও স্বার্থপরতা। ঘরোয়া কিংবা বিশ্বপরিসর- সর্বত্রই তা দৃশ্যমান।
নীতিগতভাবে সাংঘর্ষিক মনে হলেও একথা হয়তো ঠিক যে, মহামারীকে সামাল দিতে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলো বেশি সুবিধা ভোগ করেছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বহুমত ও ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিসরকে লালন করে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও এ সরকারগুলোকে সতর্ক থাকতে হয়েছে। অনেক সময় বেকায়দায়ও পড়তে হয়েছে। উন্নত, সভ্য ও শৃঙ্খলাবদ্ধ সমাজেও এ অস্থিরতা দেখা গেছে। তবে সংকটের তীব্রতা আমাদের মতো দেশে বেশি দেখা গেছে। কারণ এখানে নাগরিক সচেতনতা, শৃঙ্খলাবোধ বা সামাজিক দায়বদ্ধতা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন চালু ছিল, তখন বন্ধ করার দাবি উঠেছিল জোরেশোরে। বন্ধ হলে বিপরীত চিত্র ভেসে উঠেছে অবলীলায়। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বলপ্রয়োগ হলে সমালোচনা, পক্ষান্তরে মানুষের ভাবলেশহীন চলাফেরাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের অন্ত নেই। এমন বৈপরীত্যে ভরা সমাজ বাস্তবতায় শুধু স্বাস্থ্যবিধি কেন, পরীক্ষা নিয়ে যে সিদ্ধান্তই হবে, তাকে ঘিরে সমালোচনা হবে- এটা ধরে নিয়েই সংকট থেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
এইচএসসি পরীক্ষা আমাদের শিক্ষাকাঠামোয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষার প্রবেশদ্বার। যদিও এটা স্বীকার্য যে, বিশেষায়িত বা সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ পরীক্ষার ফলাফলকে ভর্তির ক্ষেত্রে সেভাবে আমলে নেয় না। তবু এর একটা মনস্তাত্ত্বিক গুরুত্ব আছে। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য আছে। একাডেমিক অর্জনের মানদণ্ডেও এর নির্ণায়ক তাৎপর্য আছে। এও ঠিক যে, মানবসভ্যতা এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অনেক অস্বাভাবিক বাস্তবতাকে ‘অতি স্বাভাবিক’ হিসেবে মেনে নিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এমন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিল দেশ। বর্তমান অবস্থা যদিও সেসময় থেকে নানা বিবেচনায় আলাদা।
দেশের শিল্প-কারখানা, হাট-বাজার, অফিস-আদালত, যানবাহন, চাষবাস- প্রায় সবকিছুই ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। একমাত্র ব্যতিক্রম শিক্ষা। অনানুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম চললেও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াগুলো এখনও বন্ধ। অনেক দেশে এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। চালুর চেষ্টাও হচ্ছে। বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় আবার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়েছে। কারণ সহজেই বোধগম্য। গুরুত্বপূর্ণ এ সেবার উপভোক্তা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ফলে বিষয়টি স্পর্শকাতর। কোভিড-১৯-এর সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক অভিঘাত হল- শিশুমৃত্যুর হার নগণ্য। কিন্তু বাস্তবতা হল- সঙ্গত কারণে মানুষ এ ন্যূনতম ঝুঁকিটুকুও নিতে চায় না। প্রতিষ্ঠান চালু রাখার ব্যাপারে সেবাদানকারী ও গ্রহীতা- উভয়েরই স্বাধীনতা আছে।
নিজেকে প্রয়োজন হলে নিরাপদে সরিয়ে রাখারও সুযোগ আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে, দরকার পড়লে সেকশন খুলে প্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ নেয়া যায়। কিন্তু কোনো পরীক্ষা, বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক বা শিক্ষার্থী- সবার স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে যায়। অর্থাৎ নিয়ম ও নির্ঘণ্ট মেনে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর যথাসময়ে পরীক্ষা হলে উপস্থিত হওয়ার কোনো বিকল্পই থাকে না। এখানেই প্রতিষ্ঠান খোলা ও পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য।
এবার প্রায় ১৩ লাখ পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। এরা যে সবাই সমগোত্রীয় বা একই সামাজিক শ্রেণিভুক্ত, তা নয়। গ্রাম-শহর, পাহাড়-সমতল, হাওর-বনাঞ্চল, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার জীবযাত্রা বা জীবনমান একরকম নয়। পরীক্ষা কেন্দ্রে কেউ আসে নিজের গাড়িতে, কেউ গণপরিবহনে, কেউ নৌকায় বা কেউ হেঁটে। কেউ পরীক্ষাকালে হোস্টেলে বা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। সঙ্গে থাকে অভিভাবকদের বিশাল বহর। পরীক্ষায় অংশ নেয়ার পথে প্রাথমিক অন্তরায় গন্তব্যে পৌঁছানোর উপায়; যা করোনাকালে অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ অথবা দুঃসাধ্য হয়ে উঠতে পারে।
বৈশ্বিক এ মহামারী পরীক্ষার ব্যবস্থাপনাকেও বেশ শক্ত পরীক্ষার মুখে ঠেলে দিয়েছে। পরীক্ষায় নকল বন্ধ করতে জাতিকে অনেক খড়কুটো পোড়াতে হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে অনেক পদক্ষেপ নিয়ে পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতা যাচাই করতে হয়েছে। কখনও পরিদর্শক বিনিময়, কখনও পরীক্ষার্থী। এরপর সমন্বিত উদ্যোগ। মন্ত্রণালয়, বোর্ড, জেলা প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ- সবাই একযোগে মাঠে নেমেছে। তবে পরীক্ষার্থী বিনিময়েই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সে অবস্থাকে ধরে রাখাই যখন সময়ের অগ্রাধিকার, তখনই জুড়ে এসে বসেছিল আরেক উপদ্রব। সমাজের দুর্বৃত্তায়িত অংশের আরেক অনাসৃষ্টি- প্রশ্নফাঁস। দেখা গেল এ নেক্সাসে জড়িত প্রায় সব উপকারভোগীর একটা বড় অংশ।
একসময় গণটোকাটুকি, পরে বাইরে থেকে লিখে আনা উত্তরপত্র ভেতরে সংযোজন এবং সবশেষে প্রশ্নফাঁসের প্রতিযোগিতা। এ অশুভ চক্রটির দৌরাত্ম্য এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, এরা রাষ্ট্রকেই রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে বসেছিল। ঘোষণা দিয়ে প্রশ্নফাঁস। প্রযুক্তির সাহায্যে এ অসুখ সর্বনাশা চেহারা পেয়েছিল। সুখের কথা, গেল দু’বছর সে প্রবণতাকে রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সেজন্য দরকার পড়েছে বোর্ড, প্রশাসনের কিছু বাড়তি প্রস্তুতি ও কার্যক্রম। পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টা আগে সব পরীক্ষার্থীর হলে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। এরপর বিশেষভাবে প্রস্তুত প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা। প্রশ্নপত্র হলে যাবে পরীক্ষা শুরুর ঠিক ১০ মিনিট আগে।
তাহলে ভেন্যুর সংখ্যা যদি বাড়ানো হয়- প্যাকেট খুলে প্রত্যেক ভেন্যুর জন্য প্রশ্ন আলাদা করে নিরাপদ গন্তব্যে তা সঠিক সময়ে পৌঁছানো সহজসাধ্য হতে পারে না। কেন্দ্র বা ভেন্যুর সংখ্যা বাড়ালে প্রশাসনিক জনবলের ওপরও একটা বাড়তি চাপ পড়ে। আর অনেক হাতবদলের ফাঁক গলে সমাজমনে অবদমিত অসুখ আবার যদি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায়, তা শুধু করোনাকালের জন্য নয়, অনাগত ভবিষ্যতের জন্যও ভুল বার্তা বয়ে নিয়ে যাবে।
পরিবর্তিত বাস্তবতায় অভ্যন্তরীণ হল ব্যবস্থাপনায়ও নতুন নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। পরীক্ষার্থীদের সবাই কমবয়সী। এরা যখন হলের বাইরে অথবা পথিমধ্যে, তখন স্বাভাবিক প্রবৃত্তির তাড়নায় তারা দলবদ্ধই থাকবে। সামাজিক মনস্তত্ত্ব বলে, এরা হলের বাইরে মাস্ক পরবে না। আর হলের ভেতর যে মাস্ক তারা ব্যবহার করবে তা স্বাস্থ্যসম্মত বা অব্যবহৃত নাও হতে পারে। কোনো শিক্ষার্থীর শরীরে সংক্রমণ আছে কিনা তা শনাক্ত করাও কঠিন।
কারণ, এরা অধিকাংশই উপসর্গহীন হতে পারে। আবার জ্বর হলেই যে তা করোনা- এমন সিদ্ধান্ত কে দেবে? বড় কথা, পাবলিক পরীক্ষায় তাকে বসানো বা না বসানো দুটোই আইনগত বা নৈতিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। আর কোনো শিক্ষার্থী বা পরিদর্শকের দেহে যদি উপসর্গ সত্যিই প্রমাণিত হয়, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সংস্পর্শে আসা সবাইকে আইসোলেশনে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য পরীক্ষার্থী বা পরিদর্শকের ক্ষেত্রে কী করণীয় হবে, তা গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা দরকার।
পাবলিক পরীক্ষা আইনে স্বাভাবিকভাবেই সংক্রামক ব্যক্তির ক্ষেত্রে বলা আছে- অসুস্থ ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পৃথক কক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নিতে হবে। পরীক্ষা শেষে তার ব্যবহৃত উত্তরপত্রকে উপযুক্ত ল্যাবে জীবাণুমুক্ত করে প্যাকেট করতে হবে। মহামারীকালে পরিস্থিতির গুরুত্ব ও আশঙ্কার জায়গাটা সংবেদনশীলতার সঙ্গে ভাবনার দাবি রাখে।
পরীক্ষার হলে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কেতাবি ছকে সম্ভব; কিন্তু বাস্তবে পরিদর্শকদের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের সে দূরত্ব মেনে চলা কঠিন। প্রশ্নপত্র-উত্তরপত্র দেয়া-নেয়া, প্রবেশপত্র-নিবন্ধনের সঙ্গে মিলিয়ে স্বাক্ষর করা, অতিরিক্ত উত্তরপত্র দেয়া ও রেকর্ড রাখা, এমসিকিউ প্রশ্ন বা উত্তরপত্র দেয়া-নেয়া, এমনকি খাতা সেলাইয়ের মতো কাজটাও পরিদর্শকদেরই করতে হয়। এরপর উত্তরপত্র হতে ওএমআর অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ছিঁড়ে বান্ডিল করার কাজটিও তারাই করে থাকেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল- একটি কক্ষে চার ঘণ্টার বেশি সময় অনেককে একসঙ্গে থাকতে হবে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট সহায়ক। দেশের সব কেন্দ্রের অবকাঠামোগত সুবিধা একরকম নয়। প্রশস্ত, খোলামেলা বা স্বাস্থ্যসম্মত কক্ষসম্পন্ন পরিবেশ সব ক্ষেত্রে নাও পাওয়া যেতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে অসুখ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আরও বেশি।
শিক্ষার্থী যদি পরীক্ষার হল থেকে ভাইরাস বহন করে বাড়ি যায় এবং তা যদি তার বাড়িতে অবস্থানরত বয়স্ক সদস্যদের সংক্রমিত করে- সেটাও খুব দুর্ভাগ্যজনক হবে। আমরা যেসব দেশে স্কুল-কলেজ চালু হতে দেখেছি, সেখানে সবাই এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে; শুধু তাই নয়, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে নিখুঁত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার আয়োজনও সম্পন্ন আছে। থার্মাল স্ক্যানারে যদি কারও তাপমাত্রায় উপসর্গ ধরা পড়ে, তাহলে জরুরিভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে আইসোলেট করা হচ্ছে, যা আমাদের বাস্তবতায় অলীক কল্পনা।
অনেকে বলছেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, পত্র বা পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে। পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ের বিভিন্ন পত্রে পৃথকভাবে বিভিন্নরকম ফল করে। গড় নম্বরের ভিত্তিতে তার গ্রেড নির্ধারিত হয়। একদিকে পত্রের সংখ্যা কমলে পড়াশোনার চাপ কমে না, অন্যদিকে এক পত্রে খারাপ হলে অন্য পত্রে পুষিয়ে নেয়ার সুযোগও সীমিত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ ভাবছেন রচনামূলক অংশ সংক্ষিপ্ত করে এমসিকিউর পরিসর বৃদ্ধি করার কথা। সেখানেও কৌশলগত ঝুঁকি আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রমার্জন বা মানবিক সমর্থনের জায়গাটাও সেখানে ছোট হয়ে আসে। আসলে খণ্ডিত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলে পরীক্ষার্থীরা বৈষম্যের মুখে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে চলে যায়।
উত্তরপত্র মূল্যায়নের বিষয়টাকেও হালকাভাবে দেখা উচিত নয়। শিক্ষকরা যেভাবে বোর্ডে জড়ো হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে বস্তায় ভরে উত্তরপত্র নিয়ে আসেন বা সমন্বয় সভায় যোগ দেন, তা স্বাস্থ্যবিধির অনুকূল নয়। এরপর যদি সেই উত্তরপত্রগুলো তাড়াহুড়ার মধ্যে সঠিকভাবে মূল্যায়ন না হয়, তাহলেও এ পরীক্ষার আনুষ্ঠানিক মূল্যই থাকবে, পরীক্ষা বলতে আমরা যা বোঝাতে চাই তার কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
সংক্রমণ যে এখন দেশের আনাচে-কানাচে পৌঁছে গেছে, তা আমরা সবাই টের পাচ্ছি। স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কম। চিকিৎসা একদিকে ব্যয়বহুল, অন্যদিকে অপ্রতুল। টেস্ট এড়িয়ে আমরা একটা আরোপিত স্বস্তির জায়গা তৈরি করে চলেছি। বাস্তব অবস্থা যে খুব খারাপ তাও নয়। অন্তত নিুবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের ইমিউনিটি, জলবায়ু, বয়স কিংবা ভাইরাসের চরিত্র বদল- যে কারণেই হোক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক দেশের তুলনায় আমাদের কম। তবে কেউই বলতে পারে না ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত এ অবস্থা কতদিন থাকবে। অথচ আমরা স্বাস্থ্যবিধিকে মোটেই পাত্তা দেই না। এক ধরনের নিয়তিনির্ভরতা বা পরিণামহীনতা আমাদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলছে। আর এ অবস্থায়ও লোভ ও সুবিধাবাদী প্রবৃত্তি পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে ফেলছে। দায়িত্বশীলতা ও সংবেদনশীলতার অভাব সমাজের ছত্রে ছত্রে দৃশ্যমান। এমন পরিবেশে এইচএসসি পরীক্ষার মতো দেশের অন্যতম বৃহত্তম একটা রাষ্ট্রীয় আয়োজনে সামান্য কোনো বিচ্যুতি জনমনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিতে পারে।
অমিত রায় চৌধুরী : সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ
principalffmmc@gmail.com
Leave a Reply