1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৮ অপরাহ্ন

রাজনীতির বলয় থেকে বের করতে হবে জনপ্রশাসনকে

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে বিজয়ী করতে প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন ভূমিকা রাখতে দেখা যায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসারসহ মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বকালে কর্মকর্তাদের মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীর মতো আচরণ করতেও দেখা যায়। আবার পদোন্নতি-বদলিতেও দলীয় পরিচয় বা প্রভাব খাটানোর ঘটনা ঘটে অহরহ। প্রশাসনের শীর্ষপর্যায় থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত সর্বত্র একই চিত্র। অথচ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ ধরনের কাজ করার আইনত কোনো সুযোগই নেই। তাই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত জনপ্রশাসনে গুরুত্বারোপের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে জনপ্রশাসন সংস্কারসহ ছয়টি সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে গত শনিবার। এর আগে, গত বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসনকে রাজনীতিমুক্ত করতে হবে। যে কোনো সংস্কার কার্যক্রম অথবা পরিবর্তন অথবা আইন বিধিবিধান প্রণয়নের আগে কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রচলিত পদ্ধতি ও পরিবর্তন এবং ভূ-রাজনীতি প্রভাবক বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক-প্রশাসনিক প্রভাবক, চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করাও আবশ্যক। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার কাঠামোতে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি। ফলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে নির্বাচিত সরকারের নীতি ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেননি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক বা সামরিক শাসন সব সরকারই কমবেশি স্বৈরতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী আচরণ করেছে। তারা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অনুশীলন কম করেছে এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার পূর্ণাঙ্গভাবে দেয়নি। আবার সব সরকারের বিরুদ্ধেই কমবেশি দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। এক্ষেত্রে আমলারাও পিছিয়ে নেই। জনবিরোধী সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল। সরকারি কর্মচারীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে ছিল জিম্মি। যেমন- তাদের নিয়োগ, বদলি বা পদোন্নতি সব কিছুতেই মুখাপেক্ষী থাকতে হতো। কোনো সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা নিয়মমাফিক কাজ করতে চাইলে তাকে অপছন্দের জায়গায় বদলি করা হতো। এমন উদাহরণ পাওয়া কঠিন নয় যে, প্রকল্পব্যয় বৃদ্ধির জন্য কর্মকর্তাদের অনৈতিক চাপ দেওয়া হতো এবং তাতে সম্মত না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। জনপ্রশাসনকে নাগরিকদের স্বার্থে কাজ করতে না দেওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে দুর্নীতির বিস্তার। সরকারি কর্মকর্তারা কখনও কখনও এমন সব একচ্ছত্র ক্ষমতা পেয়ে যান, যার মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কোনো ব্যবস্থা থাকে না। কর্মকর্তাদের কোনো বিষয়ে কতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে যুক্তিসঙ্গতভাবে দেওয়া উচিত এবং সঙ্গে থাকতে হবে জবাবদিহিতার সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে পূর্ববর্তী সরকারের অবসানের পর রাষ্ট্রব্যবস্থার সব ক্ষেত্রে অর্থবহ সংস্কার ও পরিবর্তন আনার আকাক্সক্ষা দেখা দিয়েছে। এখন সময়ের দাবি হচ্ছে, এমন একটি জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যা স্বাধীন দেশের নাগরিকদের সাধারণ আশা-আকাক্সক্ষা, বিশেষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আকাক্সক্ষা ও সাম্য, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদার সর্বোচ্চ মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে দৃঢ়প্রত্যয়ী হবে।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়- জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ তথা বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে তিনটি বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রয়োজন। উন্নত ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্য থেকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভারসাম্য রক্ষার একটি পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রশাসনিক সংস্কারে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক কমিশন/কমিটি গঠিত হয়েছে এবং প্রশাসন ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশন/কমিটি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রেক্ষাপটে প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। এসব কমিশনের অনেক সুপারিশই বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রক্রিয়া কখনো থেমে থাকেনি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের পতনের পর অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বভার গ্রহণের পরপরই জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনসহ প্রথমে ছয়টি ও পরবর্তী সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com