আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আসছে পরিবর্তন। এখন থেকে চার স্তরের মূল্যায়নের পাশাপাশি নতুন করে শুরু হবে বৃত্তি পরীক্ষা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘ দেড় যুগ পর ২০২৫ সাল থেকে পৃথকভাবে আয়োজন করা হবে বৃত্তি পরীক্ষার। সর্বশেষ ২০০৮ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে পৃথক বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল। এরপর ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয় অভিন্ন পদ্ধতিতে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা। তখন থেকে সমাপনী পরীক্ষায় ফলাফলের বিবেচনায় সর্বোচ্চ সীমায় নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য নির্বাচিত করা হতো। কিন্তু ২০১৯ সালের পর ২০২০ সালে করোনার কারণে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষাও বাতিল হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, যেহেতু প্রাথমিক স্তরে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর কারিকুলামে তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না তাই শুধুমাত্র চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণীর কারিকুলামে প্রয়োজনীয় সংস্কার বা সংশোধনের পরই এই বৃত্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের কারিকুলামে এ বিষয়ে এরই মধ্যে বেশ কিছু সংস্কার বা পরিমার্জনের কাজও শেষ করা হয়েছে। তাই চেষ্টা করা হচ্ছে আগামী বছর থেকেই প্রাথমিকে পৃথকভাবে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজনের।
এদিকে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে চার স্তরে। চলতি বছর প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়। তবে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই শিক্ষাক্রম বাতিল করে দেয়া হয়। এ অবস্থায় চলতি বছর থেকেই শ্রেণীভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি বার্ষিক পরীক্ষাও হবে। ফলাফলে থাকবে চারটি স্তর। এর মধ্যে ৩৯ নম্বর পর্যন্ত ‘সহায়তা প্রয়োজন’ স্তর ৪০ থেকে ৫৯ পর্যন্ত সন্তোষজনক; ৬০ থেকে ৭৯ পর্যন্ত উত্তম এবং ৮০ থেকে ১০০ নম্বর পর্যন্ত অতি উত্তম স্তর।
এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা প্রাথমিকের সিলেবাস পরিমার্জনের কাজ করছি। চলতি বছরে কিছু পরিমার্জন হয়েছে। বাকি কাজ আগামী বছরে হবে। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতটুকু পরিমার্জন হয়েছে তার ভিত্তিতেই ২০২৫ সাল থেকেই পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, প্রয়োজনীয় পরিমার্জন সাপেক্ষে আমরা ২০১০ এবং ১১ এর জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমে ফয়ে যাচ্ছি। কাজেই এর সাথে মিল রেখে আমরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার জন্য আমাদের প্রাথমিকভাবে সিদ্বান্ত গৃহীত হয়েছে। এই বছর আমরা এটি কার্যকর করব না, কারণ আমাদের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর পান্ডুলিপি আরো পরিমার্জন হচ্ছে।
অপরদিকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে তারা বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। সেভাবে তারা সিলেবাসও শেষ করছেন। অন্যদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড তথা এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে শুধু প্রাথমিকেই নয় এখন থেকে আগের নিয়মে অষ্টম শ্রেণীতেও বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। এর আগে অষ্টম শ্রেণীতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা চালু করা হয়েছিল। সেখানেও শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের সর্বোচ্চ দিক বিবেচনায় বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করা হতো। কিন্তু ২০১৯ সালের পর সেই জেএসসি পরীক্ষাও বাতিল করা হয়। এবং এতে করে বৃত্তির তালিকাও বাতিল করা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সাল থেকেই পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণীতেও আবার আগের নিয়মে বৃত্তি পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।
Leave a Reply