আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যে অনেকে আশান্বিত, তবে আমি একটু আশাহত হয়েছি। আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় তার সমস্ত প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নির্বাচনের রূপরেখা দিবেন।’
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। মজলুম নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
মওলানা ভাসানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি ছিলেন আমাদের বটবৃক্ষ। তার উত্থান হয়েছিল সাধারণ পরিবার থেকে। তার অধীনে আমরা বসবাস করেছি। মানুষকে মহিমান্বিত করার মাধ্যমে তিনি সামনে চলে আসেন।
এসময় তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে কথা বলেন।
মাওলানা ভাসানী রাজনৈতিক দর্শন তুলে ধরে তিনি বলেন, মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন যে এদেশে ধর্মকে বাদ দিয়ে কোনো কাজ হবে না, এদেশের মানুষ ধর্মকে বাদ দিয়ে কোনো কাজ করে না। তাই তিনি ধর্ম কর্ম সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিলেন। তার জীবন পরিচালনা ছিল অত্যন্ত সাধারণ। জীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস করতেন তিনি। আমরা তাকে কি করে ভুলব? আমাদের পুরো অস্তিত্ব জুড়েই তো তিনি।
তিনি প্রথম আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিলেন। পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিন দিনের মাথায় আইয়ুব খান পদত্যাগ করেছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক পরিবর্তন বুঝতে হবে। ছেলেরা কি চায়? সত্যি কথা হলো আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই সংগ্রাম করেছি। কিন্তু জুলাই-আগস্টে শেষ গোলে কিক করেছে ছাত্ররা। বন্দুকের গুলির সামনে আবু সাঈদের বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকাটাই ছিল ‘টার্নিং পয়েন্ট অব মুভমেন্ট’। তাই বলছি, ছাত্রদের সাথে কোনো দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না। এই জিনিসগুলো চিন্তা করতে হবে। ছাত্রদের কথা বলার অধিকার আছে, তারা কথা বলবেই।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দ্রুত নির্বাচন হলেই দেশের জন্য মঙ্গলজনক। আমরা দেখেছি, ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের আমলে কিংস পার্টি করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল তারা। বর্তমান সরকার ক্ষমতা থাকায় কোনো ম্যানডেট নেই, তেমন কোনো শক্তি নেই। তাই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি। তা না হলে মানুষ ভাববে দীর্ঘদিন ক্ষমতার থাকার চেষ্টা করছেন আপনারা, যেমন করেছিলেন ফখরুদ্দিন-মঈনুউদ্দিন।
তিনি বলেন, ৩১ দফায় আমরা সব সংস্কারের বিষয় তুলে ধরেছি। ঘুষ ও দুর্নীতি দূর করতে না পারলে আমাদের সমাজ পরিবর্তন হবে না। ছাত্ররা চাইবে সবকিছু পরিবর্তন করতে, আমরা তো জানি কতটুকু পরিবর্তন করতে পারবে।
আমি কেন বার বার নির্বাচনের কথা বলছি- এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন দিলেই আমার অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, সেখানে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসুক আর না আসুক। যারা দেশের ক্ষতি করতে চাচ্ছে, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়, তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কারো নির্বাচিত সরকারের পিছনে জনগণের সমর্থন থাকবে। আমরা সংস্কার চাই, করব, তবে সেগুলো যেন সুন্দর হয়, সকলের কাছে যেন গ্রহণযোগ্য হয়, সেইভাবে এগিয়ে যান এটাই অনুরোধ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তো সরকারকে বাধা দিচ্ছি না বরং সমর্থন জানাচ্ছি। কিন্তু সচিবালয় বসে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের রেখে কিভাবে সংস্কার করবেন? দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট এখনো ভাঙতে পারেননি, মানুষ অশান্তিতে আছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে। তবুও মেনে নিয়েছে আপনাদেরকে। সিন্ডিকেটগুলো ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করেন। গভর্নেন্স ঠিক করেন। কোনো কাজে গেলে যেন টাকা না লাগে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিশ্বাস রেখে তিনি বলেন, সরকার পারবে, তরুণদের হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে। যেভাবে পেয়েছিলেন শহীদের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে ও কৃষক দলের নেতা এস কে সাদির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান প্রমুখ।
Leave a Reply