উত্তর লেবাননে হিজবুল্লাহর এক সিনিয়র কমান্ডারকে আটক করার দাবি করেছে ইসরাইল।
শনিবার দিনের আরো আগের দিকে লেবাননের কর্তৃপক্ষ জানায়, লেবাননের একটি জাহাজের ক্যাপ্টেনকে আটক করার পেছনে ইসরায়েল ছিল কি না সেটি তারা তদন্ত করে দেখছে। একদল সশস্ত্র লোক শুক্রবার বাত্রুন শহরের অদূরে উপকুলে নেমে এসে ওই ক্যাপ্টেনকে ধরে নিয়ে যায়।
ইসরাইলের এক সামরিক কর্মকর্তা আটক লোকটির নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘এই কমান্ডারকে ইসরাইলে নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
লেবাননের দুজন সামরিক কর্মকর্তা এসোসিয়েটেড প্রেসকে এটা নিশ্চিত করেছেন যে বৈরুত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বাত্রুমে একটি নৌবাহিনীর কয়েক ব্যক্তি নেমে এসে এক লেবাননী নাগরিককে অপহরণ করে। তবে তারা কেউই লোকটির পরিচিতি জানাননি এবং এটাও জানাননি যে লেবাননের হিজবুল্লাহ গ্রুপের সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততার কথা তারা মনে করেন কিনা। তারা এটাও নিশ্চিত করেননি যে ওই সশস্ত্র লোকজন ইসরাইলি বাহিনীর লোকজন ছিল কী না।
লেবাননের আল-জাদিদ টিভির সাথে কথা বলতে গিয়ে লেবাননের গণ পূর্ত ও পরিবহন মন্ত্রী আলী হামি বিস্তারিত কিছু বলতে কিংবা এটিকে ইসরাইলি অভিযান বলে মনে করা হচ্ছে কিনা তেমনটি বলতে অস্বীকৃতি জানান।
বার্তা সংস্থা এপিকে লেবাননের বিচার বিভাগের তিন কর্মকর্তা বলেন যে ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার ভোরে । তারা আরো বলেন যে এই ক্যাপ্টেনের হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকতেও পারেন। ওই কর্মকর্তারা বলেন যে এ লোকটি হিজবুল্লাহর সঙ্গে জড়িত নাকি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত যে ইসরাইলি বাহিনী তাকে রক্ষা করতে এসেছিল- সে সব ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সামরিক ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন। কারণ এই ঘটনা কিংবা চলমান তদন্ত সম্পর্কে কিছু বলার জন্য অনুমতি তাদের নেই।
হিজবুল্লাহ একটি বিবৃতি জারি করে। তারা এ ঘটনাকে ‘বাত্রুন অঞ্চলে ইহুদিবাদী আগ্রাসন’ বলে বর্ণনা করে। এই বিবৃতিতে ঘটনার বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি এবং এটাও নিশ্চিত করা হয়নি যে ইসরাইল যাকে ধরে নিয়ে গেছে, তিনি হেিবুল্লাহর সদস্য কিনা।
হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের হত্যা বা অপহরণ করার জন্য লেবাননের গভীরে ইসরাইল একাধিক কমান্ডো অভিযান চালিয়েছে।
যেখানে এই লোকটিকে আটক করা হয় তার পাশের বাড়ির লোক হোসেইন দেলবানি দ্য এসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের পাশের অ্যাপার্টমেন্টে জোর করে ঢুকছিল। আমি মনে করেছিলাম রাষ্ট্রের বাহিনী নিরাপত্তা অভিযান চালাচ্ছে।’ এক মাস আগে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ লড়াই শুরু হওয়ার সময়ে দেলবানিকে দক্ষিণ লেবানন থেকে বাস্তুচ্যূত করা হয়।
হামি আল জাদিদকে বলেন, লোকটি অসামরিক জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিল। তিনি ২০২২ সালে স্নাতক হন, আরো কিছু কোর্স পড়ার জন্য সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে বাত্রুমের ম্যারিটাইম সাইন্সেস এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে যোগ দেন। হামি বলেন, এ লোকটি ওই ইনস্টিটিউট থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরত্বে বসবাস করতেন।
হামির এই মন্তব্যের আগে সামাজিক মাধ্যমে দুজন লেবাননি সাংবাদিক একটি ভিডিও পোস্ট করেন। এতে মনে হচ্ছে, একটি বাড়ির সামনে থেকে এক লোককে ২০ জন সশস্ত্র লোক ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওই লোকটির মুখ শার্টে ঢাকা ছিল।
দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর মুখপাত্র ক্যান্ডিস আর্ডিয়েল কোনো কোনো সাংবাদিকের এই অভিযোগ অস্বীকার করেন, যারা বলেন যে এই অভিযানে নেমে আসা বাহিনীকে শান্তিরক্ষীরা সাহায্য করেছে। ইউএনআইফিল বলে পরিচিত জাতিসঙ্ঘে এই মিশনের নৌবাহিনী রয়েছে, যারা উপকূলে নজরদারি করে।
আর্ডিয়েল বলেন, ‘অপতথ্য ও গুজব দায়িত্বজ্ঞানহীন বিষয় এবং তা শান্তিরক্ষীদের ঝুঁকির মুখে ফেলে।’
সূত্র : ভিওএ
Leave a Reply