যুক্তরাজ্যে কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হতে চলেছে।
বুথ ফেরত জরিপের এই আভাসের মাধ্যমে ধরে নেওয়া হচ্ছে ঋষি সুনাককে সরিয়ে দিয়ে দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন কেইর স্টারমার।
নানা কারণে গত এক বছর ধরে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমছিল। সম্ভাব্য পরাজয়ের ঝুঁকি এড়াতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। এই দলের নেতারা আশা করেছিলেন, হঠাৎ করে নির্বাচন আহ্বান করা হলে লেবার পার্টির পরিকল্পনাগুলো মাঠে মারা যাবে। বিশেষ করে বর্তমানে কমে আসা মুদ্রাস্ফীতিকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করেছিলেন। সাধারণত মুদ্রাস্ফীতি আকাশছোঁয়া হলে সরকারকেই দোষারোপ করা হয়। বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির হার কমের দিকে। কিন্তু এসব কৌশল তাতে খুব একটা কাজ করেনি।
২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। নিয়মমাফিক পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অনেকে অক্টোবরে নির্বাচন হতে পারে, এমন অনুমান করলেও বাস্তবে তা হয়নি।
ঋষি সুনাক যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে উথাল-পাথাল অবস্থা চলছিল। ছয় বছরে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী বদল হয়েছে। ঋষি সুনাক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হবার পর থেকেই নানা চ্যালেঞ্জে সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি সবচেয়ে বড় জুয়াটি খেলেছেন আগাম নির্বাচন ডেকে। কিন্তু তেমন কোনো লাভ হয়নি।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা ঋষি সুনাক যে দেশ পরিচালনায় খুব খারাপ ছিলেন, তা বলা যাবে না। শিক্ষার মান, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও মূলধন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর ছাড়সহ নানা বিষয়ে দলটি ভালো করেছে। ৪৫ দিনের টোরি প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের চেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যথেষ্ট ভালো। ইউক্রেইন যুদ্ধ ইস্যুসহ নানা বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এই দল। কিন্তু দলীয় কোন্দল এখন দলটিকে খাদের কিনারে নিয়ে এসেছে।
যুক্তরাজ্যের সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, এই নির্বাচনে হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে মধ্য-বামপন্থি লেবার পার্টি ৪১০টি আসন পেতে যাচ্ছে। এর ফলে মনে করা হচ্ছে প্রয়োজনের চেয়ে ১৭০টিরও বেশি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১০ সালের পর আবারও ক্ষমতায় ফিরতে যাচ্ছে লেবার পার্টি।
জরিপ অনুযায়ী, ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি ১৩১ আসনে জয়ী হতে যাচ্ছে। অভিবাসন-বিরোধী নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকে পার্টি পেতে যাচ্ছে ১৩টি আসন। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত ছোট দল লিবারেল ডেমোক্রেট পেতে পারে ৬১টি আসন। এর ফলে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিকে হটিয়ে তৃতীয় অবস্থানে চলে আসছে লিবারেল ডেমোক্রেটরা। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ১০টি আসনে জয়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচনের এই প্রত্যাশিত সামগ্রিক ফলাফল ব্রিটেনের ঘনিষ্ঠ পশ্চিমা মিত্রদের ডানমুখী প্রবণতার বিপরীত ধারাকেই প্রতিফলিত করছে। কেননা ফ্রান্সে অতি-ডানপন্থিরা ক্ষমতায় চোখ রেখে কথা বলছে আর যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১০ সালে গর্ডন ব্রাউনের পর আবারও লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসছে এই ধরনের শিরোণামে ব্রিটিশ পত্রিকাগুলো ইতোমধ্যে তাদের খবর প্রকাশ করতে শুরু করেছে। লেবার পার্টির প্রতি সমর্থন দেওয়া ডেইলি মিরররে প্রধান শিরোনাম ছিল ‘কেইর উই গো’। এ ছাড়া ২০০৫ সালের পর প্রথমবারের মতো লেবার পার্টিকে সমর্থন প্রদানকারী রুপার্ট মারডকের ট্যাবলয়েড দ্য সান শিরোনাম করে ‘ব্রিটেন সিস রেড’।
এদিকে স্টারমার ও সুনাক দুই নেতাই নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় সমর্থন ও পরিশ্রম করার জন্য নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে লোবার পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারা এখনই আগাম কোনো উদযাপনে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।
যুক্তরাজ্য জুড়ে ৪০ হাজার নির্বাচন কেন্দ্রে নেওয়া ভোট গণনা শেষে স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার সকালে ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, জরিপের ফল প্রকাশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার অ্যাঞ্জেলা রেনার বলেন, ‘এই ফলাফল আমাদের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক। তবে এটি একটি জরিপ। পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
বুথ ফেরত জরিপের ফল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নির্বাচনী আসন ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডে তার বাড়ির আশপাশে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে।
ঋষি সুনাক এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘শত শত কনজারভেটিভ প্রার্থী, হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবং লাখো ভোটারদের কাছে আপনাদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য, সমর্থনের জন্য এবং আপনার ভোটের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।’
Leave a Reply