ক্রমবর্ধমান হারে উত্তেজনাপূর্ণ হওয়া এশিয়া প্যাসিফিকে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র মহড়া শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ২৯টি দেশের ২৫ হাজারের বেশি লোকের অংশগ্রহণে এই মহড়া চলবে আগস্ট পর্যন্ত। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মধ্যে এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে।
রিম অব প্যাসিফিক (আরআইএমপিএসি) নামে অভিহিত এই মহড়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি ‘অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ বিকাশের প্রস্তুতি বাড়ানো এবং বহুপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার জন্য করা হচ্ছে।
এই মহড়া শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। তবে চলতি বছরের মহড়ায় দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া, ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলো এবং সাতটি ইউরোপিয়ান দেশ অংশ নিচ্ছে।
ইসরাইলও এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের এই অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের ফিলিস্তিনপন্থী গ্রুপগুলো প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
মহড়ায় ১৫০টি বিমান, ৪০টি রণতরী, তিনটি সাবমেরিন এবং ২৫ হাজারের বেশি সদস্য অংশ নেবে। তারা বিভিন্ন ধরনের মহড়ায় অংশ নেবে।
চীনের সাথে এই অঞ্চলে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এবারের মহড়াটি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সাথে নতুন নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি করছে, অন্যদিকে তার সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। আবার চীনো তাইওয়ানকে ঘিরে তার সামরিক মহড়া বাড়িয়েছে, বিরোধপূর্ণ দ্বীপগুলোতে ফিলিপাইনের সাথে সঙ্ঘাতে লিপ্ত হচ্ছে।
তাছাড়া রাশিয়াও এই অঞ্চলে আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হচ্ছে। গত দুই মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীন, উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম সফর করেছেন। তিনি এসব দেশের কাছ থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধের ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করছেন। তাছাড়া উত্তর কোরিয়ার সাথে তিনি যে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছেন, তা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রের সূচনা করতে পারে।
এদিকে এই মহড়ার মাত্র কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত বোমা মহড়া সম্পন্ন করেছে, কোরিয়ান উপদ্বীপে পরমাণু-চালিত বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে, তাইওয়ানে যুদ্ধমহড়া চালিয়েছে।
হাওয়াইভিত্তিক এশিয়া প্যাসিফিক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্যাসিফিক ফোরামের সভাপতি ও সিইও ডেভিড স্যানটোরো বলেন, ২৫ বছর ধরে সন্ত্রাসদমন এবং বিদ্রোহদমনের পর এখন ‘যুদ্ধের অপরিমার্জিত সমস্যা ফিরে এসেছে। আমরা এটি ইউরোপে দেখছি, মধ্যপ্রাচ্যে দেখছি, এবং ইন্দো-প্যাসিফিকে তা হওয়ার জোরাল আলামত দেখছি।’
তিনি বলেন, বিশ্ব দৃশ্যত অন্তর্ভুক্তিমূলক নিরাপত্তা থেকে কঠিন নিরাপত্তা অগ্রাধিকারের দিকে ছুটে যাচ্ছে। আর বৈশ্বিক জোটের রাজনীতি স্নায়ুযুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই উদ্বেগজনক, কঠিন পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, চনি ২০১৪ ও ২০১৬ সালের রিমপ্যাকে যোগ দিয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে সরে যায়। এ বছর তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সূত্র : আল জাজিরা
Leave a Reply