মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজের লিজ গ্রহণ ও রি-ডেলিভারি পর্যন্ত ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক এমডিসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে দুদকের উপপরিচালক আনোয়ারুল হক চার্জশিট দাখিল করেন।
২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিমানের মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক।নতুন চার্জশিটে এদের মধ্যে থেকে ১৪ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।আর নতুন করে সাতজনকে আসামি করে দুদক।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন জন স্টিল, সাবেক পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনস ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ, সাবেক ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম সিদ্দিক (মো. এসএ সিদ্দিক), সার্ভিসেস অ্যান্ড অডিটের সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ, সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার দেবেশ চৌধুরী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশলী কর্মকর্তা মো. সাদেকুল ইসলাম ভূঁইয়া, প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার (স্ট্রাকচার) শরীফ রুহুল কুদ্দুস, সাবেক উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, সাবেক ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহিদ হোসেন, প্রকৌশলী কর্মকর্তা হীরালাল চক্রবর্তী ও মো. লুৎফর রহমান এবং প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার অশোক কুমার সর্দার।
এছাড়া, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (এওসি-এয়ারওয়ার্দিনেস) মোহাম্মদ সফিউল আজম, সহকারী পরিচালক (অ্যারোস্পেস/এভিয়নিক্স) দেওয়ান রাশেদ উদ্দিন, উপপরিচালক মো. আব্দুল কাদির ও এয়ারওয়ার্থনেস কনসালট্যান্ট গোলাম সারওয়ারকেও আসামি করা হয়েছে।
যে ১৪ জনকে আসামির তালিকা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান, মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুর রহমান ফারুকী, ডিজিএম কামাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ক্যাপ্টেন মো. নজরুল ইসলাম শামিম, উপমহাব্যবস্থাপক জিয়া আহমেদ, সাবেক চিফ পার্সার কাজী মোসাদ্দেক আলী, ফ্লাইট পার্সার মো. শহিদুল্লাহ কায়সার ডিউক, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আজাদ রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল কাদির, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক বসুনিয়া, ব্যবস্থাপক মো. আতাউর রহমান, চিফ পার্সার মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হক (শাহিন), ফ্লাইট পার্সার শাহনাজ বেগম ঝর্ণা ও সাবেক চিফ ইঞ্জিনিয়ার গাজী মাহমুদ ইকবাল।
মামলায় বলা হয়, ২০১০ সালে অনুসন্ধানের সময় সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র ও তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের অভ্যন্তরীণ তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় আখতার উদ্দিন আহমেদ ১৯৯৩-১৯৯৮ সালে বিমানের লন্ডন স্টেশনে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিটি অফিসের জন্য অফিস ইকুইপমেন্ট ও টেলিফোন সিস্টেমের জন্য ত্রৈমাসিক ২ হাজার ১২৫ পাউন্ড স্টারলিং ভাড়ার ভিত্তিতে তিনটি কোম্পানির সঙ্গে লিজ চুক্তি করেন। যার মেয়াদ ছিল ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু তিনি এবি সার্ভিসেসের পক্ষে কেভিন লুইসের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিরাজমান সব চুক্তি অবসান করে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। নতুন চুক্তিতে ত্রৈমাসিক ভাড়া ওই পাউন্ডের স্থলে ১০ হাজার ৫০৬ ইউকে পাউন্ড করা হয়। একইসঙ্গে ব্যাংক হিসাব খাত থেকে সরাসরি ডেবিট পদ্ধতিতে ভাড়া পরিশোধের শর্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা আগের চুক্তিতে ছিল না।
আরও বলা হয়, আক্তার উদ্দিন আহমেদ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন না নিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে কেবিন লুইস এর বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং ওই চুক্তির অধীনে ভাড়া দেওয়া বন্ধ রাখেন। কিন্তু চুক্তিপত্রে আক্তার উদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষর থাকায় সব পক্ষের সম্মতিতে Centre for Dispute Resolutions এর মাধ্যমে প্রতি ত্রৈমাসিক ৭ হাজার ১৫৬ ইউকে পাউন্ড ভাড়া পরিশোধ নিষ্পত্তি হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন বহির্ভূত চুক্তিপত্রের ভিত্তিতে ২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত লিজ রেন্ট বাবদ বিমানকে ১ লাখ ২০ হাজার ৭৪৪ ইউকে পাউন্ড সমপরিমাণ ৯৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়।
Leave a Reply