গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস জানিয়েছে ইসরাইলের সাথে দ্বিতীয় ধাপ-সংবলিত সমঝোতা ছাড়া তারা একজন পণবন্দীকেও মুক্তি দেবে না।
হামাসের এক সিনিয়র কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে কেএএন এই খবর প্রকাশ করেছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, দ্বিতীয় ধাপে অবশ্যই ‘বৈরিতার অবসান’ থাকতে হবে।
ত্রাণবাহী জাহাজ গাজায়
সাইপ্রাস থেকে একটি নতুন সামুদ্রিক করিডোর দিয়ে আসা একটি ত্রাণবাহী জাহাজ শুক্রবার গাজায় খাদ্যদ্রব্য নামানো শুরু করেছে। গাজার জনগণ খাদ্যের ভয়াবহ সঙ্কটে রয়েছে।
এএফপি ফুটেজ অনুযায়ী, ওপেন আর্মস নামের একটি জাহাজ একটি বজরা টেনে মঙ্গলবার সাইপ্রাস থেকে যাত্রা শুরু করে। একই নামের স্প্যানিশ দাতব্য সংস্থা মতে,এটি পাঁচ মাসেরও বেশি যুদ্ধের পরে দুর্ভিক্ষের হুমকির মুখোমুখি গাজাবাসীদের জন্য দুইশত টন খাদ্য বহন করছে।
ওপেন আর্মসের সাথে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য সংস্থা, ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন জানায় তারা লার্নাকার সাইপ্রিয়ট বন্দরে শিম, টিনজাত মাংস, ময়দা, চাল এবং খেজুরের সরবরাহ সহ আরেকটি জাহাজ প্রস্তুত করছে। তবে, তারা গাজায় সাহায্য আনার জন্য স্থলপথে প্রবেশের সুবিধার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলে, জাহাজটি থেকে মাল খালাসের সময়ে তারা জেটির চারপাশের ‘অঞ্চল সুরক্ষিত’ করার জন্য সৈন্য মোতায়েন করেছিল। তারা বলে, ‘জাহাজটি একটি ব্যাপক নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্যে দিয়ে গেছে।’
হামাস-শাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র শনিবার ভোরে বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় গাজায় ১২৩ জন নিহত হন যাদের মধ্যে ৩৬ জন নিহত হন যখন বাস্তুচ্যূত লোকেদের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে আঘাত হানা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান শহর খান ইউনিসে এবং উত্তরের এলাকাগুলিতে যেখানে মানবিক পরিস্থিতি বিশেষভাবে ভয়ঙ্কর সেখানে বিমান হামলা এবং সংঘাত চালানো হয়।
রমজানের প্রথম শুক্রবার হাজার হাজার মুসলমান প্রচণ্ড নিরাপত্তা এবং প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে ইসরাইল-অধিভুক্ত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে অংশ নেয়।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় শুক্রবার বলে, তিনি রাফায় একটি অভিযানের জন্য সামরিক বাহিনীর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। তবে অভিযান নিয়ে কোনও বিশদ বিবরণ বা সময়রেখা প্রদান করা হয়নি। রাফায় গাজা ভূখন্ডের বেশিরভাগ লোক আশ্রয় নিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা, যাদের মতে নির্ভরযোগ্য বেসামরিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা ছাড়া রাফাতে হামলা একটি ‘লাল রেখা’ হবে, তারা বলেন যে নেতানিয়াহুর অনুমোদিত পরিকল্পনাটি তারা দেখেননি।
শান্তিতে ‘বাধা’
হামাসের এক কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, একটি নতুন যুদ্ধবিরতি এবং পণবন্দী চুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আলোচনায়, হামাস ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের সাথে কয়েক ডজন ইসরাইলি পণবন্দী বিনিময়ের জন্য একটি নতুন প্রস্তাব পেশ করেছে।
তিনি বলেন, হামাস চায় এটি ‘গাজা ভূখণ্ড থেকে (ইসরাইলিদের) সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে যাক’।
প্রস্তাবটিতে প্রায় ৪২ জন পণবন্দীর মুক্তির কথা থাকবে, যাদের পণবন্দীর প্রতি ২০ থেকে ৫০ জন বন্দী অনুপাতে ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময় করা হবে বলে কর্মকর্তাটি বলেন। পূর্ববর্তী প্রস্তাবে দেয়া এ সংখ্যা ছিল প্রতি ১ জনে প্রায় ১০০-জন। সেটি এখন কমিয়ে আনা হয়েছে।
‘পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে’ জোর প্রচেষ্টা
গাজার ২৩ কোটি মানুষকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহের মাত্র একটি ভগ্নাংশ পৌঁছাচ্ছে। আর তাই আসন্ন দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করেছে।
সড়কপথে ত্রাণবাহী স্বল্প সংখ্যক ট্রাক প্রবেশ করায়, বিমান ও সমুদ্রপথে ত্রাণ সরবরাহ করতে প্রচেষ্টা বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে।
গাজার নিকটতম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ সাইপ্রাসও বলেছে তারা একটি দ্বিতীয়, বড় ত্রাণবাহী জাহাজ প্রস্তুত করছে।
সূত্র : আল জাজিরা, ভয়েস অব আমেরিকা, জেরুসালেম পোস্ট এবং অন্যান্য
Leave a Reply