ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকার সর্বদক্ষিণের নগরী রাফায় হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। ইসরাইলি কর্মকর্তারা শুক্রবার এতথ্য জানিয়েছেন। ইসরাইলি হামলার মুখে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি এখানে আশ্রয় নিয়েছে।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ইসরাইল রাফায় বড় ধরনের হামলা শুরু করলে ব্যাপক বেসামরিক প্রাণহানি ঘটবে। তাছাড়া গাজাজুড়ে মানবিক সঙ্কট আরো প্রকট হবে।
ইসরাইলি হামলার অনুমোদন করার প্রেক্ষাপটে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বিয়েরবক টুইটে বলেছেন, রাফায় বড় ধরনের হামলা যৌক্তিক হতে পারে না। সেখানে ১০ লাখের বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছে। তাদের আর কোথায় যাওয়ার জায়গা নেই। আর লোক যাতে না মরে এবং পণবন্দীরা যাতে মুক্তি পেতে পারে, সেজন্য অবিলম্বে মানবিক অস্ত্রবিরতি প্রয়োজন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতোপূর্বে বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়া হামলা চালানো হবে ’রেড লাইন’ অতিক্রম করা।
নেতানিয়াহু শুক্রবার ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে যুদ্ধ মন্ত্রিসভায় আলোচনার পর রাফায় হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।
হামাসের প্রস্তাবে তিনটি পর্যায়ে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ইসরাইলি নারী, শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ লোকদের মুক্তির কথা বলা হয়েছে। বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে আটক কয়েক শ’ ফিলিস্তিনির মুক্তি দাবি করেছে। এসব ফিলিস্তিনির মধ্যে হত্যা মামলার আসামিও রয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়ে হামাস এবং তাদের সহযোগিরা প্রায় ২৫০ ইসরাইলি এবং অন্যান্য দেশের লোককে বন্দী করে। ওই সময় প্রায় ১,২০০ লোক নিহত হয়। নভেম্বরে বন্দীদের প্রায় অর্ধেক মুক্তি পায়। ইসরাইল মনে করছে, হামাসের হাতে এখনো ১৩০ জনের মতো বন্দী রয়েছে। এছাড়া ৩২ জন মারা গেছে।
নেতানিয়াহুর অফিস হামাসের নতুন প্রস্তাবকে ‘অবাস্তব’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে তারা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধিদল পাঠাবে বলে জানিয়েছে। কাতার মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা পালন করছে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, যেকোনো আলোচনায় হামাসের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্যই সম্ভবত ইসরাইল রাফায় হামলার কথা ঘোষণা করেছে।
নেতানিয়াহুর অফিস বলেছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেইসাথে রাফা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতিও চলছে। তবে কখন থেকে হামলা শুরু হবে, সে ব্যাপারে কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি। তবে বড় ধরনের হামলার জন্য কয়েক সপ্তাহের প্রস্তুতি দরকার। ইসরাইল বলছে, সেখানে কয়েক হাজার হামাস যোদ্ধা অবস্থান করছে।
এদিকে ইসরাইল সরকার রাফা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরানোর জন্য বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা ঠিকাদারের সাথে আলোচনা করছে। এতে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে। ইসরাইল চাচ্ছে, অন্যান্য দেশ যাতে এই ব্যয়ভার বহন করে।
ইসরাইলি হামলায় গাজায় ইতোমধ্যেই ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
সূত্র : আল জাজিরা, গার্ডিয়ান এবং অন্যান্য
Leave a Reply