কারাগারে তার সমালোচক আলেক্সি নাভালনির রহস্যমৃত্যু নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে বিশ্বজুড়ে। ইউক্রেন যুদ্ধে প্রতিদিন রুশ সেনাদের মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘতর হওয়ায় দেশের অন্দরেও দানা বাঁধছে ক্ষোভ। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) শুরু হচ্ছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। চলবে রোববার পর্যন্ত। রুশ সংবাদমাধ্যমের পূর্বাভাস, ‘অল রাশিয়া পিপল্স ফ্রন্ট’-এর প্রার্থী তথা বর্তমান প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে মূল লড়াই রুশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী নিকোলাই খারিতনভ। লড়াইয়ে রয়েছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির লিওনিদ স্লুৎস্কি এবং ‘ইউনিয়ন অফ প্রোগ্রেসিভ পলিটিক্যাল ফোর্সেস’-এর ভ্লাদিস্কভ ডাভানকোভও।
তবে গত আড়াই দশকে কার্যত বিরোধীহীন হয়ে পড়া রুশ রাজনীতিতে পুতিন কার্যত অপ্রতিরোধ্য বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন। তাদের মতে, ক্রেমলিনের লক্ষ্য হলো, আগের চারটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় পুতিনের ভোটবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। এর আগে ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ভোটে পুতিন সাড়ে ৭৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও সেই জোর করে ব্যালট বাক্স জাল ভোট ভর্তি করা, জালিয়াতি এবং ভোটে বাধাদানের অভিযোগ উঠেছিল পুতিন-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এবার পুতিন-বিরোধী জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ বরিস নাদেজদিনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আগেই।
২০১৮-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় পুতিন ‘কথা দিয়েছিলেন’, ২০২৪ সালের পরে আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন না। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওই সিদ্ধান্ত বদলেছেন তিনি। গত ২৩ বছর ধরে রাশিয়ায় কার্যত দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে আছেন পুতিন। ২০০০ সালের মে মাস থেকে ২০০৮ সালের মে পর্যন্ত উপর্যুপরি দু’টি নির্বাচনে জিতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন তিনি। তৎকালীন রুশ আইন অনুযায়ী দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে থাকা যেত না। তাই অনুগত দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট করে নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন পুতিন।
এর পরে ২০১২ সালে দ্বিতীয় দফায় (তৃতীয় নির্বাচন জিতে) ছ’বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হন পুতিন। পুনর্নির্বাচিত হন ২০১৮-য়। টানা দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্যই ২০২১ সালেই আইন পরিবর্তন করেছিলেন সোভিয়েত জমানায় গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির সাবেক প্রধান পুতিন। পঞ্চম বার (দ্বিতীয় মেয়াদে টানা তৃতীয়বার) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে ২০৩০ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন তিনি।
এবারের প্রেসিডেন্ট ভোটে পুতিনের জয় কার্যত নিশ্চিত বলেই ধারণা রুশ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বেশিভাগের। অর্থাৎ, তার সামনে এখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই নেতার রেকর্ড ভাঙা সময়ের অপেক্ষা। টানা ২৪ বছর ক্রেমলিনে ক্ষমতায় ছিলেন জোসেফ স্তালিন এবং লিওনিদ ব্রেজনেভ। এবার মস্কোর কুর্সিতে বসতে পারলে নতুন নজির স্থাপন করবেন পুতিন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
Leave a Reply