মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য উত্তপ্ত। সেখানে জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির সামনে দাঁড়াতেই পারছে না সেনাবাহিনী। তাদের আক্রমণে গত তিনদিনের যুদ্ধে কমপক্ষে ৮০ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। এ দাবি করেছে আরাকান আর্মি। তারা বলেছে, আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে চারটি সামরিক পরিবহন হেলিকপ্টার ব্যবহার করে রামরি শহরে মোতায়েন করা হয়েছে ১২০ সেনা সদস্যকে। এসব সেনাকে নেয়া হয়েছে আয়েওয়ার্দি রিজিয়নের কিওনপিয়াও শহরের ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৩৬ এবং রাখাইনের অ্যান টাউনের লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৩৭৩ ঘাঁটি থেকে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য ইরাবতী।
আরাকান আর্মির দাবি, শনিবার যুদ্ধে তারা সেনাবাহিনীর ৬০ সদস্যকে হত্যা করেছে। এদিন তাদের ওপর সামরিক জান্তা আকাশপথে ভারি হামলা করে। তারা বলেছে, প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ নিহত সেনাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরাকান আর্মির হামলায় আরও নিহত হয়েছেন ২০ সেনা সদস্য।
সোমবার পোন্নাগিউন, মংডু এবং বুথিডাং শহরে সামরিক জান্তার শক্ত ঘাঁটিতে অব্যাহত হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। রাখাইনজুড়ে সাধারণ মানুষের অবস্থানকে লক্ষ্য করে সেনাবাহিনী হামলা জোরালো করলেও তারা ধারাবাহিকভাবে অবমাননাকর পরাজয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। আরাকান আর্মি বলেছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১টা ৪৫ মিনিটে মিনবায়া শহরের মিন ফু গ্রামে একটি সরকারি হাসপাতালে সামরিক জান্তার যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এতে রোগী ও স্টাফরা আহত হয়েছেন। এ সময় আটক করা সেনা সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন হাসপাতালের স্টাফরা।
স্থানীয় মিডিয়া বলছে, মঙ্গলবার সকালে আলাদা এক হামলা চালানো হয়েছে মিনবায়ার থাই কান গ্রামে এবং পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলে। ওই গ্রামে সামরিক বাহিনী বিমান থেকে বোমা হামলা করেছে। স্কুলটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাস্তুচ্যুত মানুষ। হামলায় তাদের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ হামলায় স্কুলভবন, ঘরবাড়ি এবং যানবাহন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আরাকান আর্মির কমান্ডার মেজর জেনারেল তুন মায়াত নাইং সামরিক জান্তা মিন অং হ্লাইং ও তার জেনারেলদেরকে রাখাইন রাজ্যে পরাজয় স্বীকার করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আহ্বান জানিয়েছেন নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ ও যুব শ্রেণির ওপর হামলা না চালাতে। সোমবার এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন- আপনার সামরিক দক্ষতা এবং কঠোর কাজের প্রতি আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু নিশ্চিতভাবে এই যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন আপনি। পরাজয় স্বীকার করে নেয়াই হচ্ছে আপনার জন্য একমাত্র এবং সবচেয়ে উত্তম উপায়।
উল্লেখ্য, আরাকান আর্মি হলো জাতিগত থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের তিনটি পক্ষের একটি। এই জোট শাসকগোষ্ঠী বিরোধী ‘অপারেশন ১০২৭’ পরিচালনা করছে উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে গত ২৭শে অক্টোবর থেকে। এই জোট এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ টি শহর এবং কয়েকশত সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে। এর মধ্যে আছে কয়েকটি সামরিক কমান্ড সেন্টার। একই সঙ্গে দখল করেছে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলো। মধ্য জানুয়ারিতে সামরিক জান্তার সঙ্গে চীনের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এই জোট। তারপর থেকে শান রাজ্যে অপারেশন স্থগিত আছে। তবে রাখাইন রাজ্যে, চিন রাজ্যের দক্ষিণে পালেতোয়া শহরে অপারেশন ১০২৭ অব্যাহত আছে। সেখানে তারা এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭০টি সামরিক ঘাঁটি ও সাতটি শহর দখল করেছে।
Leave a Reply