পাকিস্তানে নির্বাচন-পরবর্তী অনিশ্চয়তাপূর্ণ পরিবেশে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো জারদারিকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছে দলটি। শনিবার রাতে পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফের সাথে বৈঠকে এই দাবি উত্থাপন করেছেন পিপিপির সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আসিফ জারদারি।
পিএমএল-এন-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আসিফ জারদারি কেবল বিলাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রীর পদ দেয়ার দাবিই জানাননি, এছাড়া আরো আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পদ দাবি করেছেন।
শাহবাজ শরিফ দলের নেতাদের জারদারির সাথে তার বৈঠকের ফলাফল নিয়ে আলোচনাকালে তা প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, শাহবাজ বলেছেন যে এর বিনিময়ে পিপিপি পাঞ্জাবে সরকার গঠন করার ব্যাপারে পিএমএল-এনকে সমর্থন দেবে।
এদিকে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি পৃথক এক মন্তব্যে বলেছেন, তার দলের সমর্থন ছাড়া কেন্দ্র, পাঞ্জাব বা বেলুচিস্তানে কেউ সরকার গঠন করতে পারবে না। তার দল সংলাপের জন্য প্রতিটি দলের কাছে উন্মুক্ত। কারণ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সমঝোতার দরকার।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তার দল পিএমএল-এন, পিটিআই বা অন্য কোনো দলের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেনি। ফলাফল চূড়ান্ত হওয়ার পর দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তারাই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।
এদিকে পাকিস্তানে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে তেহরিক-ই-পাকিস্তান (পিটিআই)-সংশ্লিষ্ট পার্লামেন্ট সদস্যরা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা প্রায় ১০০ আসনে জয়ী হয়েছে। ফলে অঘোষিতভাবে তারাই পার্লামেন্টে একক বৃহত্তম দল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৩টিতে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৩টিতে এবং এমকিউএম-পি ১৭টিতে জয়ী হয়েছে।
ইসলামাবাদ থেকে আল জাজিরার কামাল হায়দার বলেন, ‘এটা সম্ভবত পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচন।’
তিনি বলেন, পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান গোহার আলি খান তার দলের কেন্দ্রীয় ও পাঞ্জাবে সরকার গঠনের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। এছাড়া খাইবার পাকতুনখাওয়া প্রদেশেও তার দল বিপুল বিজয় পেয়েছে।
তবে নওয়াজ শরিফও বিজয় দাবি করেছেন।
পাকিস্তানি বিশ্লেষক জাইগাম খান বলেছেন, বর্তমান অবস্থার নিরসন হওয়ার দুটি পথ আছে। খুব সম্ভবত ইমরান খানের পিটিআইকে বাদ দিয়ে অন্য সকল দল একটি জোট সরকার গঠন করতে পারে। এতে পিএমএল-এন, পিপিপি, জামায়াতে ইসলামি এবং দলগুলো শরিক হবে।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিকল্পটি হলো পিটিআইয়ের সাথে পিপিপি যোগ দিয়ে সরকার গঠন করবে। তবে প্রায়োগিকভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে সম্ভাবনা খুবই কম।
উল্লেখ্য, ইমরান খানের সরকার পতনের পর পিএমএল-এন এবং পিপিপি ও অন্য দলগুলো মিলে সরকার গঠন করেছিল।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে পিটিআই সরকার গঠনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন পিটিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর খান। একই আজ রোববার পিটিআই দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গহর আলী খান দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি তাদের সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানাবেন। শনিবার নিজের বক্তব্যে তিনি জানান, যেহেতু জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন, তাই সংবিধান অনুযায়ী তাদের সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে গহর খান বলেন, অপর দুই দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) বা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) কিংবা অন্য কোনো দলের সাথে জোট করার কোনো পরিকল্পনা নেই দলটির। ‘এখন পর্যন্ত যে ফলাফল এসেছে, তাতে এটি স্পষ্ট যে পিটিআই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে। তা ছাড়া পাঞ্জাবের প্রাদেশিক আইনসভায় আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছি।’ ‘যেহেতু এককভাবে সরকার গঠনের সুযোগ আমাদের রয়েছে, তাই জোট গঠনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। পিএমএলএন অথবা পিপিপির সাথে কোনো যোগাযোগও আমাদের হয়নি।’
Leave a Reply