ইসরাইলের ১২ মন্ত্রী এবং জোট সরকারের ১৫ এমপি গাজা উপত্যকায় হামাসকে পরাজিত করার পর আবারো ইহুদি বসতি নির্মাণ এবং সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার কথা ঘোষণা করেছেন। রোববার আবেগপ্রবণ এক সমাবেশে তারা এই ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী এবং আল্ট্রান্যাশনালিস্ট রিলিজিয়াস জায়নিজম পার্টির নেতা নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের জোরাল ঘোষণা দেন।
ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভিরও একই ধরনের ঘোষণা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানান।
উপস্থিত অন্যান্য মন্ত্রী এবং এমপিও একই কথা বলেন।
উল্লেখ্য, ইসরাইল ২০০৫ সালে গাজা থেকে তাদের সৈন্য এবং বসতি সরিয়ে নেয়। ১৯৬৭ সালের অবস্থানের আলোকে ওই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল তারা। ২০০৭ সাল থেকে সেখানে হামাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর পরই ইসরাইল এবং মিসর গাজার ওপর ভয়াবহ অবরোধ আরোপ করে।
অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু উপস্থিত ছিলেন না। তিনি রোববার রাতে গাজায় পুনঃবসতি স্থাপনের বিরোধিতা করে বলেন, এটি তার সরকারের গ্রহণযোগ্য নীতি নয়।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আগামী সপ্তাহে
গাজায় গণহত্যা বন্ধ করার জন্য ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসবে। শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি এই ঘোষণা দিয়েছেন।
আলজেরিয়া বুধবারের বৈঠক আহ্বান করেছিল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি ‘ইসরায়েলি দখলদারিত্বের ওপর আরোপিত অস্থায়ী ব্যবস্থার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের ঘোষণার বাধ্যতামূলক প্রভাব ফেলবে।’
শুক্রবার আইসিজে বলেছে, ইসরাইলকে অবশ্যই হামাসের সাথে যুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে এবং গাজায় মানবিক সাহায্যে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়নি।
জাতিসঙ্ঘ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেছেন, সিদ্ধান্তটি ‘স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, তারা যা চাইছে তা করার জন্য আগে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।’
তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘সম্ভাব্য গোলযোগের জন্য প্রস্তুত থাকুন।’ কারণ, আলজেরিয়া নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আরব গ্রুপের পক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেবে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত নিরাপত্তা পরিষদ ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর সর্বশেষ শুধুমাত্র দু’টি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে।
ডিসেম্বরে যখন ইসরাইলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল,তখন নিরাপত্তা পরিষদ গাজার অবরুদ্ধ জনসংখ্যার জন্য বিপুল পরিমাণ সাহায্য পাঠানোর দাবি করেছিল।
হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ইসরাইলে প্রায় ১,১৪০ জন মারা গেছে। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
হামাস প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করে। ইসরাইল দাবি করেছে, তাদের মধ্যে এখনো প্রায় ১৩২ জন গাজায় আটক রয়েছে। কমপক্ষে ২৮ জন বন্দীকে হামাস হত্যা করেছে।
ইসরাইল হামাসকে দমন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অভিযান শুরু করলে গাজার ২৬,০৮৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।
আন্তর্জাতিক আদালত প্রায় চার মাসব্যাপী যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেয়া থেকে বিরত থাকার সময় ইসরাইলকে ১৯৪৮ সালের জাতিসঙ্ঘ গণহত্যা কনভেনশন মেনে সবকিছু করার পরামর্শ দিয়েছে।
সূত্র : টাইমস অব ইসরাই, এএফপি এবং অন্যান্য
Leave a Reply