বিশ্বজুড়ে নতুন বর্ষকে বরণ করতে যখন উন্মাদনা, তখন বারুদের গন্ধে বাতাস তিক্ত হয়ে ওঠে গাজায়। মানুষ জীবন বাঁচাতে প্রাণপণ লড়াই করছে। অব্যাহত বোমা হামলায় তাদের জীবন ত্রাহি ত্রাহি। একদিকে পেটে খাবার নেই, পান করার পানি নেই, চিকিৎসায় ওষুধ নেই, তার ওপর বোমা, গুলিতে প্রতিদিন মানুষ লাশ হচ্ছেন। এমন নির্মমতার শিকার গাজাবাসী, ফিলিস্তিনিরা যেন বাঁচার অধিকার হারিয়েছেন। তাদের ওপর ইসরাইল যা খুশি তা-ই করতে পারে। ফিলিস্তিনের গাজায় তাই নতুন বর্ষবরণের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। নতুন বছর ২০২৪ সালকে বোমা হামলার বছর হিসেবে শুরু করে ইসরাইল। গাজার খান ইউনুসে হামাসের সঙ্গে তাদের তীব্র লড়াই চলছিল। ৩১শে ডিসেম্বর দিবাগত রাতে দখলীকৃত পশ্চিমতীরের বিভিন্ন অঞ্চলেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল ইসরাইলিরা।
এর মধ্যে আছে কালকিলিয়ার আল বিরেহ সিটি, নাবলুসের পশ্চিমে বেইত লিবিয়া, হেব্রনের উত্তরে বেইত উম্মার, জেনিনের বারতা’হ। এসব হামলায় বেশ কিছু নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছেন। গাজার পূর্বাঞ্চলে জয়তুন এলাকায় একদল নিরীহ মানুষকে টার্গেট করে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান। এতে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফা বলেছে, মধ্য গাজায় আল মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়িতে ড্রোন ব্যবহার করে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে বেশ কিছু নিরীহ মানুষ আহত হয়েছে। এর বেশির ভাগই শিশু। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতেও হামলা হয়েছে। সেখানে আহতদেরকে নেয়া হয়েছে আল আকসা হাসপাতালে। ৭ই অক্টোবর থেকে কমপক্ষে ২১ হাজার ৮২২ ফিলিস্তিনিকে নির্বিচারে হত্যা করেছে ইসরাইল। তাদের হামলায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৬ হাজার ৪৫১ জন। গাজা থেকে ইসরাইল তার রিজার্ভ সেনাদের প্রত্যাহার করে নেবে। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যত যুদ্ধের জন্য শক্তি সঞ্চয় করবে।
ওদিকে লোহিত সাগরে হুতিদের তিনটি বোটে হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। এতে কমপক্ষে ১০ হুতি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
গাজায় গণহত্যার জবাবে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেড ইসরাইলে কমপক্ষে ২০টি রকেট ছুড়েছে। দখলীকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক লরা খান বলছেন, জনগণ একটি অ্যাপ ব্যবহার করছে। তাতে দেখা যায় কোন এলাকায় সাইরেন বাজানো হয়েছে। আপনি দেখতে পাবেন বেশির ভাগই তেল আবিবের দক্ষিণে এবং গাজার উত্তরে বাজানো হয়েছে। অসংখ্য সাইরেন বাজানো হয়েছে। বেশির ভাগই জেরুজালেমের বাইরে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে। এর পরই হামাসের পক্ষ থেকে ওই রকেট হামলা চালানো হয়েছে।
ওদিকে নতুন বর্ষ বরণের প্রাক্কালে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ ফিলিস্তিনিদের এভাবে হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছেন। পাকিস্তানের লাহোরে জনগণ রাস্তায় নেমে আসেন। তারা ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে বিক্ষোভ করেন। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটের বাইরে সমবেত হন। বাগদাদের তাহরির স্কয়ারে একটি ক্রিসমাসের ট্রিকে গাজার শিশুদের মৃতদেহকে কাফন পরানো অবস্থায় বোঝায়- এমন আইটেম দিয়ে সাজানো হয়।
অন্য এক খবরে বলা হয়েছে, দখলীকৃত পশ্চিমতীরের দক্ষিণে মাসাফার ইয়াত্তা এলাকা থেকে দু’ব্যক্তিকে চোখ বেঁধে হ্যান্ডকাফ পরিয়েছে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা। মাসাফার ইয়াত্তা গ্রামপ্রধান নিদাল ইউনুস বলেন, বসতি স্থাপনকারীরা সেনাবাহিনীর পোশাক পরে সেখানে উপস্থিত হয় এবং মাহমুদ ইসা মোহাম্মদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় মাহমুদ তার ভেড়া চড়াচ্ছিলেন। এরপর বসতি স্থাপনকারীরা অন্য একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে।
Leave a Reply