বায়তুল মোকাররম এলাকার বার্ডস আই রুফটপ রেস্টুরেন্টে বসে আওয়ামী লীগ নেতা টিপু মার্ডারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। মামলার চার্জশিটে পুলিশ এই তথ্য উল্লেখ করেছে। ওই বৈঠকে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, আওয়ামী লীগ নেতা কাউন্সিলর মনসুর ও সোহেল শাহরিয়ারসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, টিপু হত্যাকাণ্ডে সর্বশেষ সভাস্থল ৬৫/১ পুরানা পল্টনের বায়তুল ভিউ টাওয়ারের বার্ডস আই রুফটপ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কনভেনশন হল, যেখানে বসে আসামিরা সর্বসম্মতিক্রমে ভিকটিম জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে সুমন সিকদার ওরফে মুসা আদালতে ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দী প্রদান করেছে তা পর্যালোচনা করে দেখা যায় টিপু হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত ছিল মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। যে টিপুকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। আকাশ যে মোটরসাইকেলটি নিয়ে ঘটনা ঘটায় তা চালাচ্ছিল শামীম। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের ১০-১২ তারিখ মুসা আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ তালুকদারকে ফোন দেয় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে ভর্তির বিষয়ে। আশরাফ তালুকদারের সাথে তার ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। ছোটখাটো কাজ লাগলে আশরাফ তালুকদারকে বললে তিনি করে দিতেন। বিনিময়ে সে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লোকজন ও খরচাপাতি দেয়। ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ সে আশরাফ তালুকদারের ছোটভাই টিটুকে ফোন দিলে তাকে বায়তুল মোকাররমের মেইন গেটের বিপরীতে রুফটপ রেস্টুরেন্টে যেতে বললে মুসা সেখানে যায়। সেখানে গিয়ে আশরাফ তালুকদার, মনসুর, মারুফ রেজা সাগর, সোহেল শাহরিয়ার রানা, রানা মোল্লা, ঘাতক সোহেল, আমিনুল, বাবুল তালুকদার, সোহেল শাহরিয়ারের ছোট ভাই রিফাত, টিটু ও খায়রুলদেরকে দেখতে পায়। সেখানে মূলত ঠিকাদারি ও স্কুলে ভর্তি নিয়ে কথা শুরু হয়। সাগর ডিসের ব্যবসা করে।
সাগরের লোক ডিসের লাইন দিতে গেলে জাহিদুল ইসলাম টিপুর লোকজন সাগরের লোকদের মারধর করে এবং এই নিয়ে সাগর মামলা করলেও পুলিশ টিপুর লোকদের গ্রেফতার করেনি। টিপু নাকি সাগরের নামে মতিঝিলের পুলিশের ডিসির কাছে বিচার দেয়। তখন সাগর রাগারাগি করে বলে আপনাদের সাথে রাজনীতি করে লাভ নেই। আমরা এলাকা ছেড়ে চলে যাবো। সোহেল শাহরিয়ার রানা রেগে বলে টিপু ভাই টেন্ডারের সবকিছু করে কিন্তু সঠিক হিসাব দেয় না। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ওই দিন রেস্টুরেন্টে টিপুর প্রতি সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করে। মুসার জবানবন্দীর উদ্ধৃতি দিয়ে চার্জশিটে পুলিশ উল্লেখ করেছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ভর্তির কথা উঠলে সোহেল বলে যে, জিসান ও মানিক ভাই যে এক শ’ ছাত্রের ভর্তির কথা বলল তার কী হলো। তখন মনসুর বলে তিনি নাকি টিপু ভাইয়ের সাথে কথা বলেছেন। টিপু ভাই ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে রাজি না এবং জিসান ও মানিককে ভর্তি দিতে হলে নিজেদের ভাগ থেকে দিতে হবে। তখন সোহেল শাহরিয়ার রানা রিফাতের মোবাইল দিয়ে মানিক ভাইকে ফোন দিয়ে জিসান ভাইকে কনফারেন্সে আসার জন্য বলে। তখন জিসান ভাই কনফারেন্সে আসে। তখন জিসান ও মানিক ভাই আশরাফ ভাই ও মনসুর ভাইয়ের সাথে রাগারাগি করে। জিসান ভাই বলে আমাদের দরকার হলে বলেন আমরা সাহায্য করব। জিসান ভাই বলে লাগলে খালেদ ও টিপু ভাইয়ের লোকজনকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিবো। জিসান ও মানিক আশরাফ ভাই ও মনসুর ভাইকে বলে টিপু ভাইকে মেরে ফেলতে হবে। কারণ টিপু ভাই না থাকলে সবাই সুবিধা পাবে। মুসার জবানবন্দীর উদ্ধৃতি দিয়ে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে বর্তমানে টিপু ভাই না থাকায় সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী হলো আশরাফ ভাই ও মনসুর ভাই।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাত ১০টা ২০ মিনিটে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় পাশে থাকা রিকশা আরোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এই ঘটনায় শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি। এই ঘটনায় মোট ৩৩ জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দিয়েছে।
Leave a Reply