1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ পূর্বাহ্ন

একমুখ দাড়ি-গোঁফ : সূক্ষ্ম রাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছেন রাহুল গান্ধী!

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৩

কেউ করেছেন কৌতুক। গেরুয়া শিবিরের নেতারা টিপ্পনিও কেটেছেন। আর নেটদুনিয়াতে তো নানা মতের ঝড়। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীর নয়া লুক নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। শুধু এ নিয়ে যেন হেলদোল নেই খোদ রাহুলের। একমুখ দাঁড়িগোফ নিয়েই ভারতের পথে পথে হেঁটে চলেছেন তিনি। বার্তা একটাই, ঘৃণার বাতাবরণ সরিয়ে দেশে ভালোবাসার কথা ছড়িয়ে দেয়া। ক্ষমতাসীন দল উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপির রাজনৈতিক আদর্শের মোকাবেলা করতে পথকেই নতুন পথ হিসাবে বেছে নিয়েছেন রাহুল। তবে তার যে এই বেশ-বদল, তা কি নেহাতই স্টাইল! নাকি যাকে ফ্যাশন দুনিয়ায় বলা হয়, ‘কেয়ারফুলি কেয়ারলেস’ তাই-ই রপ্ত করেছেন রাহুল। ভারত-জোড়ো-যাত্রা যেমন সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে, তেমনই রাহুলের এই রূপ-বদল নিয়েও হচ্ছে বিস্তর আলোচনা।

রাহুল গান্ধী যে এই প্রথম দাড়ি রাখছেন তা নয়। ক্লিন শেভ লুকে তাকে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় বটে, তবে এর আগেও তাকে দাড়ি রাখতে দেখেছেন দেশবাসী। তা নিয়ে রাজনীতির অন্দরে চলত মশকরাও। কেউ কেউ আড়ালে বলতেন, পার্লামেন্টের চলতি সেশনের মধ্যেই তিনি বিদেশ চলে যেতে পারেন, তাই পরিচয় গোপন করতেই হঠাৎ হঠাৎ একমুখ দাড়িগোঁফ রাখেন রাহুল। এ অবশ্য আড়ালের রাজনোইতিক রসিকতা। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে, রাজনৈতিক জীবনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একমুখ দাড়ি-গোঁফ নিয়েই দেশবাসীর সামনে ধরা দিয়েছেন রাহুল। প্রশ্ন হলো, তাহলে তার এবারের লুক নিয়ে কেন এত আলোচনা? নেহাত স্টাইল স্টেটমেন্ট বলেই তো তা উড়িয়ে দেয়া যেত। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের নেতারা যেভাবে এই নিয়ে মন্তব্য করতে শুরু করেছেন, তাতে রাহুলের এই রূপবদলকে নেহাত স্টাইল বলে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। বিজেপি-শাসিত আসাম রাজ্যের মুখমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এই প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধীকে ইতিমধ্যেই ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সাথে তুলনা করেছেন। আবার ভারতের মন্ত্রী রামদাস আটওয়ালে বলেছেন, রাহুল গান্ধীর দাড়ি বাড়ছে মানেই লোকসভায় কংগ্রেসের আসন বাড়বে, এমনটা ভাবা কোনো কাজের কথা নয়। ভারত-জোড়ো-যাত্রা যে শাসকদলকে খানিকটা হলেও চিন্তিত করেছে, তা এই ধরনের মন্তব্য থেকে কিছুটা অনুমান করা যায়। এদিকে নেটদুনিয়ার রসিক বাসিন্দারা তো কার্ল মাক্সের সাথে রাহুলের ছবি জুড়ে ইতিমধ্যে পোস্টও করে ফেলেছেন।

রাহুলের রূপ-বদল নিয়ে টুকটাক মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতারাও। এ প্রসঙ্গে জয়রাম রমেশের মন্তব্য, ‘তারা দেশ বদলাতে এসেছেন, বেশ নয়’। অর্থাৎ বেশভূষা বা চেহারায় বদলটা বড় ব্যাপার নয় বলেই সাব্যস্ত করতে চেয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এ নিয়ে বেশ কিছু মতবাদও ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। বলা হচ্ছে, এই যাত্রাই এখন রাহুল গান্ধীর ধ্যানজ্ঞান। তাই দাড়ি কাটার মতো সময়ই পাচ্ছেন না রাহুল। নেতারা যেখানে গাড়ি ছাড়া একটুও নড়েন না, সেখানে রাহুল পায়ে হেঁটে দিনের পর দিন মানুষের সাথে যোগাযোগ করছেন। এরপর আর তার নিজের চেহারার দিকে লক্ষ্য করার সময় নেই। এই মতবাদ একটা কথাই তুলে ধরতে চায় যে রাহুল গান্ধীর কাছে এই যাত্রা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দ নয়, ভারতবর্ষের আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখাই যে তার লক্ষ্য, খুব সঙ্গোপনে এই রূপবদলে হয়তো সে কথাই বলে চলেছেন রাহুল। তবে মোক্ষম একটি কথা বলেছেন দিলীপ চেরিয়ান।

কমিউনিকেশন কনসালট্যান্ট এবং পলিটিক্যাল ক্যাম্পেনের উপদেষ্টা হিসেবে তিনি বিখ্যাত। তিনি কিন্তু রাহুল গান্ধীর এই দাড়ি রাখাকে স্রেফ স্টাইল বলে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না। বরং তার মতে, রাহুল যেন নিজেকে একজন ভিক্ষুক সন্ন্যাসী হিসেবেই তুলে ধরছেন। মাধুকরী ব্রত নিয়ে যে সন্ন্যাসীরা এই দেশে ঘুরতেন বা ঘোরেন, অনেকটা সেরকমভাবেই সাধারণ মানুষের মাঝে ধরা দিচ্ছেন রাহুল। আর জনতার সাথে এই পায়ে পা মিলিয়ে চলার দরুন, সাধারণ মানুষ রাহুলকে একজন ‘ভ্রাম্যমাণ ফকির’ হিসাবেই দেখছেন। ঠিক এইখানেই সহায়ক হচ্ছে রাহুলের একমুখ দাড়ি-গোঁফের এই লুক। একটু পিছু ফিরে তাকালে দেখা যাবে, নিজেকে একজন ফকির হিসেবেই একদা তুলে ধরেছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। সেদিন ওই ইমেজের জবাব দেয়ার মতো পুঁজি রাহুলের হাতে ছিল না। আজ যখন সেই মোদির রাজনৈতিক আদর্শেরই মোকাবেলা করতে তিনি পথে নেমেছেন, তখন পাল্টা নিজেকে সন্ন্যাসী কিংবা ফকির হিসেবেই তিনি নিজেকে তুলে ধরতে চান। এবং তাদের চেহারার যেরকম ছবি জনমানসে ধরা আছে, সেই রূপেই তিনি সামনে এসেছেন। তাই হয়তো রাহুলের যাত্রার মতো তার লুকও ভাবিয়েছে শাসকদলের নেতাদের। প্রত্যাশিতভাবেই ছুটে এসেছে টিপ্পনি-মশকরা। আর উত্তরে নীরব থেকেছেন রাহুল।

ভারত-জোড়ো-যাত্রার সাফল্য ভারতের ভোটবাক্সের রাজনীতিতে কতটা প্রতিফলিত হবে, তা অবশ্য বহু অঙ্ক পেরিয়েই বোঝা সম্ভব। তবে ইতিমধ্যে তা যে যথেষ্ট আলোচনা এবং আগ্রহের জন্ম দিতে পেরেছে, তা বলাই যায়। আর তাই রাহুলের একমুখ দাড়ি-গোঁফ আপাতভাবে হয়তো কিছুই নয়। তবু তার নেপথ্যে যে একরকমের সূক্ষ্ম রাজনৈতিক বার্তাও থেকে যাচ্ছে, তা-ও একেবারেই অস্বীকার করা যায় না।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন


নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com