কক্সবাজারের পর্যটন এলাকায় পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। কিন্তু স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (এসটিপি) রয়েছে মাত্র চারটি হোটেলে। যার কারণে ভয়াবহ দূষণের মধ্যে পড়েছে পর্যটন এলাকা।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, কক্সবাজারে এসটিপি রয়েছে তিনটি পাঁচ তারকা ও একটি তিন তারকা হোটেলে। এছাড়া এসটিপিবিহীন তারকা মানের আরো আটটি হোটেল রয়েছে।
কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সংলগ্ন এলাকায় মাঝারি, ছোট, বড় আবাসিক হোটেল রয়েছে পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে শুধু পর্যটন শহরে রয়েছে সাড়ে তিন শতাধিক হোটেল।
তিনি জানান, তারকা মানের হোটেলকে নিজস্ব এসটিপি করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে অন্যান্য সব হোটেলের জন্য সেন্ট্রাল এসটিপি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ আইন না মেনে কক্সবাজার পর্যটন এলাকায় গড়ে উঠেছে শত শত আবাসিক হোটেল, বহুতল ভবন, স্টুডিও এপার্টমেন্ট। কক্সবাজার শহরের সাড়ে তিন শতাধিক আবাসিক হোটেলকে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (এসটিপি) স্থাপনের নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ হোটেলে এসটিপি করার জায়গা নেই। তাই জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার পৌরসভা ও পরিবেশ অধিদফতরের সমন্বয়ে সেন্ট্রাল এসটিপি করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
তিনি আরো বলেন, এসটিপি না থাকায় ভয়াবহ পবিবেশ দূষণের কবলের পড়েছে পর্যটন জোন। পয়ঃনিষ্কাশনের ময়লাপানি আসে নালায়। যার কারণে পর্যটন এলাকায় থাকা নালা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
সেভ দ্য ন্যাচার এর চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইন জানান, দেশবিদেশের পর্যটকরা নির্মল পরিবেশে ভ্রমণ করতে কক্সবাজারে আসেন। কিন্তু নানা কারণে এখানকার পরিবেশ দূষিত হওয়ায় পর্যটকদের মাঝে কক্সবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। হোটেলে এসটিপি স্থাপন না করায় পর্যটন শহরের পরিবেশ দূষিত হয়েছে। পর্যটকদের নাকে মুখে হাত দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ভয়াবহ দূষণে পড়েছে পর্যটন জোন। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটি দুর্গন্ধের শহরে পরিণত হবে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুনাইদ জানান, এসটিপি স্থাপন তো দূরের কথা, এখনো পরিবেশ আইন না মেনে যেভাবে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। এতে বসবাস অনুপযোগী হয়ে উঠছে পুরো শহরটি। তাই বর্তমান পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে নির্মাণাধীন ভবনগুলোর স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন। আর যারা আগে নির্মাণ করেছে তাদের স্থাপনা পরিবেশবান্ধব করতে পুনঃসংস্কার করা জরুরি। সেইসাথে এসটিপি বাধ্যতামূলক করা দরকার।
তিনি আরো বলেন, পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করে। তাদের মলমূত্র এসটিপি ছাড়াই সাধারণ টয়লেট রিং এ জমা হয়। সেখান থেকে সরাসরি যায় নালায়। আর নালা থেকে সরাসরি যাচ্ছে স্থানীয় বাঁকখালী নদীতে। আর বাকঁখালী নদী হয়ে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। এসটিপি না থাকার কারণে পর্যটন, এলাকা, নদী ও বঙ্গোপসাগর দূষিত হচ্ছে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে পর্যটকরা যেমন বিমুখ হবে, তেমনি স্থানীয়দের জন্য বসবাস অনুপোযোগী হয়ে পড়বে এই কক্সবাজার শহর।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, দ্রুত সময়ে সেন্ট্রাল এসটিপি করা হবে। তা না হলে দূষণের মুখে পড়বে পর্যটন শহর কক্সবাজার শহর। তবে বর্তমানে যে সব নালা নর্দমা রয়েছে তা নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে।
সূত্র : ইউএনবি
Leave a Reply