কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও আরেকটি খেলা চলছে। সেটা খেলা বলতে বাধ্য হচ্ছি এজন্য যে, আমাদের জাতীয় নেতারা রাজনীতির মতো একটি সিরিয়াস বিষয়কে খেলা বলেই প্রচার করছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘খেলা হবে!’ রাজনীতিতে কৌশল হতে পারে। যে কৌশল আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেছিলেন ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে। সেই সব কৌশলের নীতি-নৈতিকতার তর্কে না গিয়েও বলা যায়, কৌশল রাজনীতিতে প্রয়োজন হয়। কিন্তু রাজনীতিকে খেলায় পরিণত করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত বা গ্রহণযোগ্য তা সুধীজনকে বিচার করতে হবে।
তবে হ্যাঁ, নারায়ণগঞ্জের জেলা পর্যায়ের কোনো নেতার মুখে ‘খেলা হবে’ কথাটা মানায়। বিশেষ করে যার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ কথিত আছে, তিনি এ ধরনের বাক্য চয়ন করতেই পারেন। কিন্তু যখন জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের মুখে ‘খেলা হবে’ বলতে শোনা যায় তখন তো সেটি চিন্তার বিষয় হয়ে যায়। আমরা আমাদের রাজনীতিকে কোথায় নিয়ে গিয়েছি বা নিয়ে যেতে চাচ্ছি! এই খেলা কিসের খেলা? কৌশল, নাকি মারামারি? অনেকে বলছেন, সেই খেলাই হয়েছে ভোলা, বরগুনা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট এবং সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিরোধী রাজনীতির নেতাকর্মীকে হত্যার মাধ্যমে। তাছাড়া মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা, নির্বিচারে ধর-পাকড়, ক্ষমতাসীন দলের লাঠিয়ালদের দ্বারা বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হামলা এবং উল্টো হামলার শিকারদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার ইত্যাদিই কি সেই কথিত খেলা? তবে এই খেলাতো চলছে গত ১৪ বছর যাবৎ। আমাদের নেতারা যদি এসবকে খেলা বুঝিয়ে থাকেন তবে তা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং আওয়ামী লীগের জন্য তা লজ্জাজনক। যে দলটি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া, যে দলটি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে সেই দলটির ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে কি এসব খেলা বেমানান নয়? আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জনাব তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘খেলা হবে। এটা রাজনৈতিক স্লোগান নয়, হতে পারে না। আমার বিবেক বলে-এই স্লোগান এভাবে না দেওয়াই উচিত’ (প্রথম আলো : ০৪/১২/২০২২)।
আর ‘খেলা হবে’ বলতে যদি রাজনৈতিক কৌশল বুঝানো হয় তবে এখানেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বই প্রকাশিত হচ্ছে। কারণ এই খেলায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ ডিফেন্সিভ অবস্থানে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবল যারা পর্যবেক্ষণ করছেন তারা স্পষ্টতই বুঝেন, যে দল ডিফেন্সিভ বা আত্মরক্ষায় চলে যায় তারা জয়ের জন্য খেলেন না। অপর দিকে যারা আগে-ভাগে বা অফেন্সিভ খেলেন তারাই জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামেন এবং জয় লাভ করেন। আবার সামরিক বিশারদগণও জানেন যে, আত্মরক্ষার মূলমন্ত্র হলো, অ্যাগ্রেসিভনেস বা আক্রমণাত্মক পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা। অর্থাৎ আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিপক্ষকে ব্যস্ত ও ক্লান্ত করে করে তার আক্রমণের স্পৃহা বা শক্তি ক্ষয় করে ফেলা। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, আওয়ামী লীগ দেশের সর্ববৃহৎ এবং ক্ষমতাসীন দল হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান রাজনীতির খেলায় ডিফেন্সিভ হয়ে পড়েছে। আর বিএনপি নামক প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক খেলার ইনিশিয়েটিভ বা অনুঘটন হাতে নিয়ে নিয়েছে। সা¤প্রতিককালে তাই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বিএনপির চালের প্রতিক্রিয়ায় পরিণত হয়ে পড়েছে এবং তারা বিএনপির প্রোগ্রামের পেছনে পেছনে ছুটছে! অর্থাৎ দীর্ঘ ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে বিরোধী শিবিরে থেকেও, দীর্ঘদিন অত্যাচার-নির্যাতনে নির্মূলের সম্মুখীন হয়েও বর্তমানে বিএনপি আওয়ামী লীগকে খেলাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে এবং সন্ত্রাসীদের হামলায় বিরোধী নেতাকর্মী নিহত হওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে, সাফাই গাইতে হচ্ছে। আর বিএনপি এসব হত্যাকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগের ওপর চাপাচ্ছে। বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশগুলোর আয়োজন করলে আওয়ামী লীগ তার প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করছে। তাছাড়া চট্টগ্রামে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে যোগদান না করার জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতার হুমকি-ধমকির খবর জানা গেছে।
ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, ফরিদপুর, বরিশাল এবং রাজশাহীর সমাবেশে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ২-৩ দিন ধরে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে সর্বাত্মক পরিবহন ধর্মঘট করা হয়েছে। সরকারের চাপের মুখেই পরিবহন মালিকদের ধর্মঘট বলে বিএনপি অভিযোগ করছে। এছাড়া প্রতিটি স্থানেই সমাবেশের আগে-পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ব্যাপক শোডাউন করার চেষ্টা করেছে এবং এই জনসমাগমে মানুষ আসতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তথাপি মানুষ সাঁতার কেটে, কলার ভেলায় চড়ে নদী পার হয়ে সমাবেশে আসার চেষ্টা করেছে এবং মারধরের শিকার হয়েছে। এ ধরনের হামলার শিকার, বরিশাল অঞ্চলের বিএনপির একজন সাবেক এমপি আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। কুমিল্লা বিভাগের গণসমাবেশের প্রচারণা চালানোর সময় পুলিশের গুলিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির এক তরুণ কর্মী নিহত হওয়ার খবর এসেছে।
অন্য দিকে আওয়ামী লীগও বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে। ঢাকায় যুবলীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমাবেশ, যশোরের জনসমাবেশ, গাজীপুরের যুবসমাবেশ এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মহাসমাবেশ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় সম্মেলনগুলো সফলতার সাথে সম্পন্ন হলেও দুর্মুখরা এগুলোকে বিএনপির বিভাগীয় সম্মেলনগুলোর পাল্টা সম্মেলন হিসেবেই প্রচার করছে। বিএনপির সমাবেশগুলোতে সব ধরনের বাধার সৃষ্টি করে, আওয়ামী লীগ নিজেরা রাষ্ট্রের সব রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে সেসব সম্মেলনের আয়োজন করছে সেগুলোকে সমালোচকরা বিএনপির সমাবেশের সাথে তুলনা করে বিএনপির পাল্লাকেই ভারী বলে প্রচার করছে। আওয়ামী লীগের নেতারা আশ্চর্যজনকভাবে দুই দলেরই সমাবেশগুলোতে সমবেত জনসংখ্যার অবিশ্বাস্য সব পরিসংখ্যান দিচ্ছেন! তাদের সমাবেশে বিএনপির চেয়ে অনেক বেশি জনসমাগম হয়েছে বা বিএনপির সমাবেশে মাত্র কয়েক হাজার লোক এসেছে বা সেখানে শুধু সন্ত্রাসীরাই সমবেত হয়েছে ইত্যাদি বলে আওয়ামী নেতারা বরং নিজেদের দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে ফেলছেন। কারণ, একপক্ষের সমাবেশে স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী যোগ দিচ্ছেন। সমাবেশ হচ্ছে কোনো ধরনের বাধাবিপত্তি তো দূরের কথা বরং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে, বিশাল নয়নাভিরাম মঞ্চ প্রস্তুত করে, বিরিয়ানির প্যাকেট বিতরণ করে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অন্য দিকে আরেক পক্ষের সমাবেশে কর্মী-সমর্থকরা যোগ দিচ্ছেন সম্ভাব্য সব ধরনের বাধা অতিক্রম করে, মারধর, হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের ভয় মাথায় নিয়ে, খেয়ে না খেয়ে। একপক্ষের সমাবেশ সফল করার জন্য প্রাচীর ভাঙা হচ্ছে আর অন্যপক্ষের সমাবেশ ব্যর্থ করার জন্য কয়েক স্তরের বাধার প্রাচীর সৃষ্টি করা হয়েছে। তথাপি দেশের বিরোধী দলের দ্বিতীয় সারির নেতার নেতৃত্বে সভায় নেমেছে জনতার ঢল। তাই সাম্প্রতিক এসব সমাবেশকে কেউ কেউ অসম প্রতিযোগিতা বা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে বিএনপির দ্বিতীয় ধাপের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা হিসেবে বলতে চাচ্ছেন। অর্থাৎ প্রতিযোগিতাটা হচ্ছে শতভাগ প্রস্তুতি নেয়া দুরন্ত প্রতিদ্ব›দ্বীর সাথে একজন অনুপস্থিত প্রতিযোগীর। প্রতিযোগিতাটা হচ্ছে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সিংহাসনের কঠোর হুঙ্কারের বিপরীতে শূন্য চেয়ারের অশ্রুত ডাকের।
রাজনীতির মাঠে ডিফেন্সিভে যাওয়ার ফলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে আরো অঘটন ঘটছে যা ঐতিহ্যবাহী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে কলংকিত করছে। বরিশালে আগৈলঝারায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ৩০টি দোকান বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের অপরাধ ছিল বিএনপির খুলনার সমাবেশে যোগদান করা। পরে ২৯টি দোকান খুলে দেওয়া হলেও আকরাম খান নামক বিএনপি কর্মীর দোকান একমাস যাবৎ বন্ধ রাখা হয়েছিল এবং তার মোটরসাইকেল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল পুলিশে অভিযোগ করার অপরাধে (প্রথম আলো: ০৪/১২/২০২২)! একটি আদালতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বাদি করজোড়ে বলেছে, এই মামলার আমি কিছুই জানি না! মামলায় বর্ণিত ককটেলের কোনো আওয়াজও আমরা শুনতে পাইনি। গত পহেলা ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের সখীপুরে পুলিশ ককটেল বিস্ফোরণ হওয়ারও এক ঘণ্টা আগেই চারজন বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে বিস্ফোরণের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে (০২/১২/২০২২)! ঢাকায় এক যুবদল কর্মীকে বাড়িতে রাতের বেলা না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপির নেতৃবৃন্দ পুলিশের দেওয়া ১৬৯টি ‘গায়েবি’ মামলার তালিকা হস্তান্তর করেছেন আইজিপি মহোদয়ের কাছে। এরকম অসংখ্য অসম্ভব ঘটনাসমূহ ঘটছে বিএনপির চলমান আন্দোলন এবং জনসমাবেশগুলোকে ঘিরে।
আর ঢাকার ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ নিয়ে ঘটেছে সব তুলকালাম কাণ্ডগুলো। প্রথমে বিএনপিকে বলা হলো ঢাকা মহানগরীর বাইরে কোথাও মহাসমাবেশ করার জন্য। এরপর বলা হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার জন্য। সেই সাথে ছাত্রলীগের সম্মেলন ঠিক করা হলো ৮ ও ৯ ডিসেম্বর। ৯ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষ হলে কিভাবে পরদিন একই স্থানে বিএনপির মহাসমাবেশ করা সম্ভব হবে? তবে বিএনপি গোঁ ধরে বসল, নয়াপন্টনেই তাদের সমাবেশ করবে। এতে ছাত্রলীগের সম্মেলন তিন দিন এগিয়ে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর ঘোষণা দেওয়া হলো। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ডিফেন্সিভের পর আরো ডিফেন্সিভে চলে গেল। কিন্তু বিএনপি নয়াপল্টনের ভেনুতে অনড় হয়ে রইল। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে ২৬টি শর্ত চাপিয়ে দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করার জন্য জোরের সাথে বলা হলো। এই ২৬টি শর্তের বেড়াজাল দেখে সচেতন মহল অবাক হয়ে পড়ল! এসব অসম্ভব সব শর্তে সমাবেশের অনুমোদন শুধুই হাস্যরসিকতার সৃষ্টি করছে রাজনৈতিক মহলে! আর দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের তো নয়ই। এরই মধ্যে নয়াপল্টনে বিএনপির অফিসে পুলিশ রেইড করলে সমর্থকদের সাথে মারামারি বেধে যায়। এতে একজন কর্মী নিহত হয়। বেশ কয়েকজন মাঝারি সারির নেতা গ্রেফতার হন এবং বিএনপি অফিস থেকে বস্তাভরা ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ অভিযোগ করে। এই অভিযোগ ব্যাপক প্রশ্ন ও কৌতূহল সৃষ্টি করে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোমা রাখার ঘটনায় উল্টো পুলিশকেই অভিযুক্ত করা হয়। এরপর গভীর রাতে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নাশকতার মামলায় জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। সমাবেশের মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে গোলাপবাগ মাঠের অনুমতি দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমাবেশস্থল পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ স্মরণকালের বিশালতম মহাবেশের রূপ নেয়। এতে দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে ছাড়াই বিএনপি তৃতীয় সারির নেতাদের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সম্পন্ন করে তাদের সামর্থ্যরে জানান দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। কিন্তু এই সমাবেশ ব্যর্থ করার জন্য সরাসরি বাধার পাশাপাশি হাজারো অদৃশ্য বাধার সৃষ্টি করা হয়েছিল। পাঁচ দিন আগে থেকেই ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে চেকপোস্ট স্থাপন, মেসে-হোটেলে তল্লাশি, সমাবেশে আগত সন্দেহে মারধর, সরকারি দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দ্বারা হাত ভেঙে দেওয়া ও পুড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি, এমনকি পথচারীদের সেলফোনের ব্যক্তিগত বিষয়াদি যাচাই করা এবং সমাবেশের দিন অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, ইত্যাদি সবই করা হয়েছে। অন্যদিকে সমাবেশ চলাকালে ঢাকাজুড়ে প্রায় ৩৫ হাজার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন, পাড়ায়-পাড়ায় আওয়ামী নেতা-কর্মীদের লাঠি হাতে পাহারা, হেলিকপ্টার ও ড্রোন উড়িয়ে আকাশ থেকে পাহারা দিয়ে ভীতির সৃষ্টি করা হয়েছে। এমনকি সমাবেশস্থলের ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ডিফেন্সিভ হওয়ার আকেরটি আলামত হলো, বিএনপির একজন মধ্যম সারির নেতার ‘১০ ডিসেম্বরের পরের দেশ চালানোর’ ঘোষণার স্টান্টবাজিকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ ভয়াতুর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এমনকি বিএনপি না বললেও আওয়ামী নেতৃবৃন্দ ১০ তারিখের সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য উপস্থিতি নিয়ে হইচই বাধিয়ে দেন। এদিকে বিএনপি নয়াপল্টনের ভেন্যু থেকে সরে গোলাপবাগে সমাবেশ করাকে আওয়ামী লীগের মহাসচিব বিএনপির অর্ধেক পরাজয় বলে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। আসলে এটা কি বিএনপির অর্ধেক পরাজয় নাকি আওয়ামী লীগের পরিপূর্ণ পরাজয়, তা সচেতন নাগরিকগণ বিচার করতে পারবেন।
বিশ্বকাপ ফুটবলের মাঠে যেমনটি ডিফেন্সিভ খেলা মোটেও জয় লাভের লক্ষণ নয়, তেমনি রাজনীতির ময়দানে জয়লাভ করতে হলে রাজনীতির বলটি নিজেদের দখলে রাখতে হয়। কিন্তু বর্তমান রাজনীতির মাঠ দেখে মনে হচ্ছে, সেই বলটি আওয়ামী লীগের দখলে নেই। তাইতো আওয়ামী লীগকে বিএনপির প্রোগ্রামের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পাল্টা প্রোগ্রাম দিতে হচ্ছে। তবে এগুলো হতেও পারে আওয়ামী লীগের স্বাভাবিক রাজনীতির গতি-প্রকৃতি। কিন্তু দিন শেষে তো সেগুলোকে কাকতালীয়ভাবে পাল্টা প্রোগ্রাম বলেই মনে করছে সাধারণ মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে সাধারণের আকাঙ্ক্ষা হলো ঐতিহ্যের প্রতীক এবং স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দলটি তাদের স্বাভাবিক রাজনীতিটাই করবে এবং দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরে দায়িত্বশীল রাজনীতির খেলা খেলবে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Leave a Reply