মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রুর পর এবার ঝুঁকির মুখে পড়েছে উখিয়া উপজেলার পালংখালীর আঞ্জুমান পাড়া সীমান্তের ১০ হাজারের বেশি মানুষ। বিশেষ করে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সীমান্তের অদূরেই সংঘটিত ভয়ানক গোলাগুলির পর আতঙ্কের মুখে পড়েছেন তারা। বিভিন্ন দোয়া ও কালেমা পড়ে তারা রাতে ঘুমাতে যান।
সরেজমিনে কথা হলে এমন আতঙ্কের কথা জানান বৃহত্তর আঞ্জুমান পাড়া সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় নুরুল আবছার ও মরিয়ম বেগম জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রুসহ আশেপাশের সীমান্তে গোলাগুলি ঘটলেও এক সপ্তাহে আগে আঞ্জুমান পাড়া সীমান্তেও গোলাগুলি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে চার দিন আগে বিমান থেকে একটি গোলাবর্ষণ ও মঙ্গলবারের গোলাগুলির ঘটনাটি ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। যার ভীতি এখনো কাটছে না।
পালংখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাফরুল ইসলাম জানান, ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত বৃহত্তর আঞ্জুমান পাড়ার দক্ষিণ ফাঁড়িরবিল ও পূর্ব ফাঁড়িরবিল সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া, চাম্বাকাটা, বলিপাড়া, কোয়াইংচিপং ও মেধিপাড়া বরাবর পাহাড়ি এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এত দিন এই দিকে গোলাগুলি হয়নি। এক সপ্তাহে ধরে প্রতিদিন গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। ব্যাপকভাবে সংঘটিত মঙ্গলবারের গোলাগুলির ঘটনাটি স্থানীয়দের মনে চরমভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এতে আঞ্জুমান পাড়ার ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিরাপত্তার ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তবে গতকাল ও আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি।
পূর্ব আঞ্জুমান পাড়ার বাসিন্দা মো: ফরিদ বলেন, ‘গোলাগুলির ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ায় আমরা বেশি ভয়ের মধ্যে রয়েছি। মঙ্গলবারের গোলাগুলির পর এমন ভয় লেগেছে যা বলে বুঝানো যাবে না। বাংলাদেশী নাগরিক হলেও বাড়িতে থাকতে ভয় হচ্ছে। মঙ্গলবারের ঘটনার পর অনেকে দ্রুত সরে যাওয়ার জন্য কাপড়-চোপড় গুছিয়ে রেখেছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। আবার কখন গোলাগুলির শব্দ শুনি তার জন্যে আতঙ্কে আছে অনেকে।’
দক্ষিণ ফাঁড়িরবিল এলাকার বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, ‘ওপারের গোলাগুলিতে এপারে যেভাবে চাপ পড়ে তাতে ভয় না পেয়ে উপায় নেই। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত অধিকাংশ বাসিন্দা বেশ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। কখন গোলা এসে পড়ে তা নিয়ে এক অনিশ্চয়তায় সময় কাটছে আমাদের।’
স্থানীয় মৎস্য ঘেরশ্রমিক আবদুল কাদের বলেন, ‘বসতি একটু দূরে হলেও সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে এপারের মৎস্য ঘের ও ধানক্ষেত। তাই সীমান্তের কাছে না গিয়ে উপায় নেই। কিন্তু যেতে গেলেই ভর করছে আতঙ্ক। অনেকে পেটের দায়ে কাজ করতে গেলেও অনেকে আবার কাজ-কর্ম বন্ধ রেখেছে।’
দক্ষিণ ফাঁড়িবিল মোড়ের দোকানদার বেলাল উদ্দীন বলেন, ‘এলাকার লোকজনের মুখে মিয়ানমারের গোলাগুলিই সারাদিনের আলোচনার বিষয়। দোকানের এসে সবাই সারাক্ষণ এই নিয়ে আলাপ-আলোচনায় মেতে থাকে আর মিয়ানমারের দিকে তাকিয়ে থাকে।’
বাংলাদেশীদের ঝুঁকির বিষয়ে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আঞ্জুমান পাড়ার সীমান্তের বাসিন্দাদের ঝুঁকির বিষয়টি আমরা সব সময় পর্যবেক্ষণে রাখছি। ইতোমধ্যে প্রশাসনের উচ্চ মহল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনের তালিকা তৈরির কথাও বলেছে। সে মোতাবেক বিজিবির সাথে সমন্বয় করে স্থানীয় ইউপি সদস্য তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।’
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, ‘উখিয়া সীমান্তে ঝুঁকির মুখে বাসিন্দাদের বিষয়ে আমরা তাদের খোঁজখবর রাখছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষা বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত থেকে আরো তিন শতাধিক পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন। সীমান্ত ঘেঁষে অব্যাহত সংঘর্ষ এবং শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন হতাহতের ফলে বিজিবির পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন।
Leave a Reply