পবিত্র কাবা ঘরের মূল তাওয়াফের স্থানে (মাতাফ) করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ার পরই সৌদি সরকার গত বৃহস্পতিবার আকস্মিক তাওয়াফ ও সায়ি সাময়িক বন্ধ করে দিয়ে চার দিনব্যাপী বিশেষ এন্টি ভাইরাস পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছে।
সেখানে মাকামে ইব্রাহিমে দায়িত্ব পালনকারী ১৫ জন খাদেম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিষয়টি প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে বলে সৌদি আরবের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সৌদি আরবে সরকারিভাবে এ পর্যন্ত পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানানো হলেও প্রকৃতপক্ষে এই অংশ অনেক বেশি। এর মধ্যে মসজিদুল হারামের কাবা শরিফ এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী আক্রান্ত ১৫ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
জানা যায়, মাতাফের মাকামে ইব্রাহিম এলাকাটিতে তাওয়াফকারীরা তাওয়াফ শেষে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়সহ দোয়া করে থাকেন। এ ছাড়া পবিত্র কাবার দরজাও মাকামে ইব্রাহিম বরাবর হওয়ায় ওমরাহ যাত্রীসহ তাওয়াফকারীদের ভিড় বেশি থাকে ওই এলাকায়। অনেকে মাকামে ইব্রাহিম স্পর্শও করে থাকেন। এই কারণেই আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে মাকামে ইব্রাহিম এলাকায় করোনাভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি প্রদেশের ২৩ জন আরব আমিরাত হয়ে সম্প্রতি গোপনে ইরান সফর করে দেশে ফেরার পর তাদের শরীরেও করোনার অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এ জন্যই সৌদি কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার ইরানের বিরুদ্ধে তাদের নাগরিকদের পাসপোর্ট স্টাম্পলিং ও ঘোষণা ছাড়াই দেশে প্রবেশ করতে দিয়ে দায়িত্বহীন আচরণ করার অভিযোগ করে। যদিও বিষয়টি প্রকাশ করা হচ্ছে না।
জানা গেছে, সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সবগুলো ঘটনাই ইরান ফেরত নাগরিকদের। এ জন্য সৌদি সরকার ইরান সফরকারীদের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ইতোমধ্যেই গালফ দেশের নাগরিকদেরও সৌদি আরবে প্রবেশের আগে দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণের পরই প্রবেশ করতে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
সৌদি আরব গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওমরাহ ও ভিজিট ভিসায় সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পর গত বুধবার মক্কার বাইরের লোকদেরও ওমরাহ পালন ও মসজিদে নববীতে গমণ নিষিদ্ধ করে। পরদিনই হঠাৎ করে পবিত্র কাবার তাওয়াফ, সাফা মারওয়ায় সায়ি বন্ধ করে দেয়। তবে গতকাল সকালের দিকে সাময়িকভাবে আবারো কাবা চত্বর খুলে দেয়ার খবর পাওয়া যায়। তবে ওমরাহ যাত্রীরা মসজিদ দু’টিতে প্রবেশ করতে পারবে কি না তা জানানো হয়নি।
সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আপাতত, কাবার মাতাফ এলাকা এশার নামাজের পর থেকে ফজর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে। ওমরাহ পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আগ পর্যন্ত এই অবস্থা বহাল থাকবে। করোনাভাইরাস যাতে না ছড়াতে পারে তার জন্য পূর্ব সতর্কতার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে খবরে বলা হয়।
গত বৃহস্পতিবার কাবার মূল চত্বরে তাওয়াফ বন্ধ করে দেয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লোকশূন্য কাবা এলাকার বিভিন্ন ছবি প্রকাশিত হয়। অনেকে তাদের জীবদ্দশায় তাওয়াফশূন্য এমন কাবার ছবি না দেখার কথাও জানান।
Leave a Reply