আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ লোভী। তারা খুব দ্রুত অতি ধনী হয়ে যেতে চান। আর এ রকম ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে তারা তাদের অধীনস্থ কর্মচারীদের ঠকান। স্বাধীনতার ৫১ বছরেরও দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশের ব্যবসায়ীদের একটি অংশ তাই বেপরোয়া হয়ে চলতে পারছেন। সরকার ভেদে তাদের জুলুম খুব বেশি হেরফের হয় না। এর প্রভাবে রাষ্ট্র বড় বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
গত ১২ মে দেশের এক দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- যুক্তরাষ্ট্রের ডিএফসি তহবিলের সুবিধা পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
এই প্রতিবেদন থেকে প্রথম কয়েকটি বাক্য এখানে তুলে ধরছি- শ্রমিকদের নির্বিঘ্নে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারসহ কর্মপরিবেশের নিরাপত্তাঘাটতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আর্থিক সংস্থার (ডিএফসি) তহবিল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। বুধবার সকালে রাজধানীর আমেরিকান সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপপ্রশাসক ইসোবেল কোলমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।
আমি নিজে কয়েকটি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি। দেখেছি পোশাক শিল্পমালিকদের নির্দয় আচরণ। তাদের অনেকে মিথ্যা কথা বলেন। মিথ্যা বলার প্রশিক্ষণও দেন। এসব মিথ্যা প্রশিক্ষণের জন্য তারা লোকও রাখেন। যাদের অনেকের পদবির নাম এডমিন অফিসার, এডমিন ম্যানেজার, কমপ্লায়েন্স অফিসার, কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার, এইচআর অফিসার, এইচআর ম্যানেজার ইত্যাদি। পোশাক শিল্পমালিকদের অনেকে আবার চাটুকারিতাও খুব পছন্দ করেন। তারা তাদের নীতিবিবর্জিত কর্ম নির্বিঘ্নে সম্পাদন করার জন্য সেসব চাটুকারদের কাজে লাগান।
যখন বিদেশী বায়ার শিল্পকারখানায় ভিজিট করতে যান তখন তাদের বলা হয়- এখানে ট্রেড ইউনিয়ন আছে, এখানে আট ঘণ্টার পর ডিউটি করানো হয় না, এখানে বিশুদ্ধ পানি খাওয়ানো হয়, এখানে শিশুশ্রমিক নেই, এখানে প্রেগন্যান্সি নারী কর্মচারীদের বেতন দিয়ে ছুটি দেয়া হয়, এখানে পরিবেশসম্মত চাইল্ড কেয়ার আছে, এখানে সবধরনের কাজ যথেষ্ট নিরাপত্তার সাথে করা হয়, বেতন ৭ তারিখের আগে- ইত্যাদি বহু মিথ্যা কথা। বাস্তবে কারখানার শ্রমিকরা এসব অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ভুয়া ট্রেড ইউনিয়ন দেখানো হয়। শ্রমিকদের নানা রকম হয়রানি করা হয়। নির্যাতন করা হয়।
শ্রমিকদের হয়রানি এবং নির্যাতন করতে তারা তাদের পালিত চাটুকার কর্মচারীদের কাজে লাগান, পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগান, ভাড়া করা মাস্তানকে কাজে লাগান, দুষ্ট নোংরা চরিত্রের তথাকথিত শ্রমিকনেতা-নেত্রীদেরও কাজে লাগান। আর এসব সম্ভব করেন টাকা দিয়ে। শ্রমিক ঠকানোর জন্য তাদের টাকার অভাব হয় না।
বাংলাদেশে এখন এ ধরনের একটি অপশক্তি বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে। তারা টাকার কুমির হয়ে ব্যাংক করছেন, ইউনিভার্সিটি করছেন, মেডিক্যাল করছেন, টিভি চ্যানেল খুলছেন, পত্রিকা বের করছেন। ইত্যাদি শত রকমের ব্যবসার দোকান খুলে বসছেন। তারা চিন্তা করছেন না দেশটি কিভাবে ভালো চলবে। দেশের অর্থনীতি কিভাবে শক্তিশালী হবে, টেকসই হবে। কিভাবে বেকারমুক্ত বাংলাদেশ হবে। এর ফল হচ্ছে উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশকে নেতিবাচকভাবে দেখছে। অর্থনৈতিক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে আমাদের বাদ রাখছে।
Leave a Reply