হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভাঙছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা অর্জনে স্বপ্ন দেখিয়ে সহযোগিতার পরিবর্তে নিজেরাই এখন স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে উচ্চ শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি। অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তির যোগ্যতায় গ্রেড পয়েন্ট বাড়িয়ে অনেক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার পথকেই রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইতোমধ্যে মাঠে নামতে শুরু করেছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন, স্মারকলিপি এমনকি রাজপথে বৃহত্তর আন্দোলনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এ দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতায় জিপিএ নম্বর বাড়ানোর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিভাবক, ছাত্র সংগঠন, শিক্ষার্থী ও দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি আবেদনে জিপিএ বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে বলে মন্তব্য করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। একই সাথে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শুরু হওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি আবেদনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন যোগ্যতা জিপিএ ৩ দশমিক ৫ করা হয়েছে। আগে কম থাকলেও এবার তা বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নতুন নিয়ম বাতিলের দাবিতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও ভর্তিচ্ছুরা বেশ কয়েক দিন ধরেই রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন শুরু করেছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদনে জিপিএ বাড়ানোয় কম জিপিএ প্রাপ্তরা ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। এটি বাতিলে তারা আন্দোলন শুরু করেছেন। তাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে সারা দেশে বড় ধরনের আন্দোলন শুরু করা হবে। বিক্ষুব্ধ এক শিক্ষার্থী নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার এসএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ ৩ দশমিক ০৬ এবং এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ ৪ দশমিক ৪২। ফলে আমি ভর্তি আবেদনের সুযোগ পাব না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন করতে না পারায় আমার স্নাতকে পড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। কেননা এই জিপিএ দিয়ে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন করতে পারব না। গত বছর মানবিকের ক্ষেত্রে এসএসসিতে জিপিএ ২ দশমিক ৫ পেলেই আবেদন করা যেত। এবার এক লাফে সেটি ৩ দশমিক ৫ করা হয়েছে। এর পরিবর্তন দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি মানা না হলে সারা দেশে শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে আন্দোলন শুরু করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, জিপিএ বাড়ানোয় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গের পথে। অনেকের স্বপ্ন ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু জিপিএ কন্ডিশনের কারণে অনেকে আবেদন করতে পারবেন না। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্নের কথা বিবেচনা করে জিপিএর শর্ত কমানো উচিত।
বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হঠাৎ এই সিদ্ধানের ফলে অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ হবে। তারা হয়তো আর উচ্চ শিক্ষার জন্য কোথাও আবেদনই করতে পারবেন না। তাই তাদের এভাবে বাদ দেয়া ঠিক হয়নি। তবে হ্যাঁ, ধাপে ধাপে এটা করা যেতে পারে। তাতে সবার মধ্যেই একটি প্রস্তুতি থাকবে। কম জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই বিকল্প কোনো চিন্তা মাথায় রাখতে পারবে। কারো কোনো স্বপ্ন ভঙ্গ হবে না।
অভিভাবকদের মধ্যে অনেকেই জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না পারলে অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়তো আর পড়ালেখাই করতে পারবে না। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চালিয়ে অনেকের পক্ষেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হবে না।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মানবিক শাখায় আবেদনের যোগ্যতা রাখা হয়েছে এসএসসিতে ৩ দশমিক ৫ ও এইচএসসিতে ৩। আর ব্যবসায় শিক্ষা শাখা ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে জিপিএ ৩ দশমিক ৫ পেলে তারা আবেদন করার যোগ্য হবেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিন (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো: নাসির উদ্দিন বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি কলেজে অর্নাস প্রথম বর্ষে ৩ লাখ ৯৩ হাজার সিটে ভর্তিতে প্রায় ছয়-সাত লাখ আবেদন আসে। অনার্সে কিছুটা কোয়ালিটি (মান) বাড়াতে এবার জিপিএ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: মশিউর রহমান শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ভঙ্গের বিষয়ে বলেন, উচ্চ শিক্ষার জন্য কারো স্বপ্ন ভঙ্গ হবে না। কেননা যারা অনার্সে ভর্তি হতে পারবে না তাদের জন্য তো ডিগ্রি পাস কোর্স খোলা থাকছেই। এতে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া আমরা শিক্ষার মান ও গুরুত্ব বাড়াতে চলতি বছরে ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে জিপিএ পয়েন্ট বাড়িয়েছি। এটি কলেজ শিক্ষকদের দাবি ছিল।
Leave a Reply