রাজধানীতে আবারো এডিস মশার অত্যাচার বেড়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক জরিপে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২২টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন মাত্রার ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার মশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু করেছে দুই সিটি করপোরেশন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুইজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা দুইজনই ঢাকার বাসিন্দা। তবে এ সময়ে ঢাকার বাইরের কোনো হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন দু’জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট আটজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ছয়জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন দু’জন। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি ছিলেন ১৮৮ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন ১৮১ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যু নেই। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করে। সেই বছর এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। মারা যান ১৪৮ জন। করোনা মহামারীর মধ্যে ২০২০ সালে ডেঙ্গু তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করে ডেঙ্গু।
এ দিকে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রাজধানীর দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের ১১০ স্থানে ডেঙ্গুর প্রকৃত অবস্থা নিয়ে মাঠপর্যায়ে চালানো প্রাক-মৌসুম এডিস সার্ভেতে এ আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালিত এ জরিপে উত্তর সিটির ৬৩টি এবং দক্ষিণ সিটির ৯৬টি বাড়িতে এডিস মশা অতিরিক্ত মাত্রায় চিহ্নিত হয়েছে। জরিপে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২২টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন মাত্রার ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় ৯৪ দশমিক ৯ শতাংশ কিউলেক্স মশা আর বাকি ৫ দশমিক ১ শতাংশ এডিস মশা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে নির্মাণাধীন ভবনে, যা ৪২ দশমিক ১১ শতাংশ, বহুতল ভবনে ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, একক ভবনে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ, সেমিপাকা/বস্তি এলাকায় ৯ দশমিক এবং পরিত্যক্ত (ফাঁকা) জমিতে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) উচ্চমাত্রার ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলোÑ পুরান ঢাকার মদন মোহন বসাক রোড ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড। দয়াগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ৪০ নম্বর ওয়ার্ড এবং ডিস্ট্রিলারি রোড ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড। মশার ঘনত্ব পরিমাপক ব্রুটো ইনডেক্স অনুযায়ী এসব এলাকায় মশার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি।
মধ্যম মাত্রার ডেঙ্গুঝুঁিকতে থাকা ডিএসসিসির ওয়ার্ডগুলো হলোÑ রাজারবাগ ও চামেলীবাগ এলাকা নিয়ে গঠিত ১৩ নম্বর ওয়ার্ড; ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা এবং পূর্ব রায়েরবাজার নিয়ে গঠিত ১৫ নম্বর ওয়ার্ড; শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা মোটর এলাকা নিয়ে গঠিত ২১ নম্বর ওয়ার্ড এবং লালবাগ ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ২৩ নম্বর ওয়ার্ড। মধ্যম মাত্রার ডেঙ্গুঝুঁকিতে থাকা ডিএনসিসির ওয়ার্ডগুলো হলোÑ পল্লবী ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ৬ নম্বর ওয়ার্ড, মহাখালী ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ২০ নম্বর ওয়ার্ড এবং লালমাটিয়া ও মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ড। ব্রুটো ইনডেক্স অনুযায়ী, এসব এলাকায় মশার ঘনত্ব ১০ থেকে ১৯ শতাংশ।
এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ আরো ওয়ার্ড হলোÑ ডিএসসিসির ৮, ১৪, ২০, ৩৫, ৪৬ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ড এবং ডিএনসিসির ১০, ১৩, ১৬, ২৭, ৩০ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড। ব্রুটো ইনডেক্স অনুযায়ী, এসব এলাকায় মশার ঘনত্ব ১০ শতাংশ।
ডিএসসিসির অর্ধশতাধিক এলাকায় অভিযান : ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশা নির্মূলে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএসসিসি জানিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার সাতটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে। যে কারণে গতকাল থেকে সচেতনতামূলক তিন দিনের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রথম দিনে ১৩, ১৫, ২১, ২৩, ৩৮, ৪০ ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ধশতাধিক এলাকায় লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড করা হয়। অভিযানকালে প্রায় ৬৯টি স্থাপনা ও বাসাবাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। অভিযানে এডিস মশার সেসব আধার ও প্রজননস্থল ধ্বংস করা হয় এবং আগামীতে এডিস মশার প্রজননস্থল পাওয়া গেলে জরিমানা করা হবে বলে সতর্ক করা হয়। আগামী ১৫ জুন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও জানিয়েছে ডিএসসিসি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেসব এলাকায় মশার ঘনত্ব বেশি পাওয়া গেছে, সেসব এলাকার ড্রেন ও জলাশয়ে আবারো গাপ্পি মাছ ছাড়া হচ্ছে এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানো ও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
Leave a Reply