ডিবি গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মগবাজার এবং মোহাম্মদপুরের পশ্চিম কাটাসুর এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে চারজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গেপ্তারকৃতরা হলো ১. লেলিন শেখ ২. মো. আশরাফুল ইসলাম ৩. জিল্লুর রহমান খান এবং ৪. সাইফুল ইসলাম @ শাওন। গ্রেপ্তারকৃতদের হেফাজত থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত ২টি মোটরসাইকেল, ২টি হেলমেট, ছিনতাইকৃত ৩৪ লাখ টাকা, ৪ হাজার পিস ইয়াবা, ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত দুইটি শার্ট, একটি প্যান্ট, দুই জোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবি জানিয়েছে, গত বছর ১৪ ডিসেম্বর দুপুর ১৩: ৪৫টায় একজন সরকারি কর্মকর্তা তার বোনের এমব্রয়ডারি মেশিন বিক্রি করা ১১ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার উদ্দেশ্যে মিরপুর ১১ নাম্বার থেকে অরিজিনাল ১০ নাম্বারের দিকে রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন। মিরপুর বাংলা স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছালে রিকশার পিছন দিক থেকে একটি মোটরসাইকেলে চলা দুইজন ছিনতাইকারীর একজন ভিকটিমের হাঁটুর উপরে রাখা ব্যাগটিকে আচমকা টান মেরে নিয়ে প্রশিকার রাস্তার দিকে চলে যায়। ভিকটিম বহু ধাওয়া করে এই ছিনতাইকারী দলকে আটকাতে পারেনি। এ সংক্রান্তে পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়েছিলো। যার নাম্বার ৬৪।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পুলিশ নিশ্চিত হয় মোটরসাইকেলে চলা এই দুইজন ছিনতাইকারীর একজন লেনিন শেখ, অপরজন মোঃ আশরাফুল ইসলাম।
গত ১৪ মার্চ জনৈক ভিকটিম মিরপুর ১১ নাম্বারের সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে ৪ লাখ ৯ হাজার ৭০০ টাকা উত্তোলন করে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম হয়ে ১০ নাম্বারের দিকে যাচ্ছিলেন। সকাল অনুমান ১১:৩৫ টায় একটি মোটরসাইকেলে চলা দুইজন ছিনতাইকারী পিছন থেকে রিকশাটিকে অনুসরণ করে। ইনডোর স্টেডিয়ামের কাছাকাছি পৌঁছালে মোটর সাইকেলের পিছনে বসা ছিনতাইকারী রিকশাতে থাকা আরোহীর কাছ থেকে টাকা ভর্তি ব্যাগটি ছিনতাই করে ৬ নাম্বার বাজারের দিকে দ্রুত চলে যায়। ১৪ মার্চই পল্লবী থানায় মামলা হয়।
সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশ নিশ্চিত হয় মোটরসাইকেলের চলা এই দুইজন ছিনতাইকারীর একজন জিল্লুর রহমান খান, অপরজন সাইফুল ইসলাম @ শাওন।
পরিচয় : গেপ্তারকৃত ২টি দলের এক দলের পাইলট হলো আশরাফুল ইসলাম @ ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ। আশরাফ ধানমন্ডিস্থ একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ভালো একটি টেক্সটাইল কোম্পানিতে চাকরি করতো। টেক্সটাইল কোম্পানির যে মিনি ট্রাক ড্রাইভারকে দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ টেক্সটাইল সামগ্রী এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় আনা-নেওয়া করাতো সেই ড্রাইভারের কাছেই দীক্ষা গ্রহণ করেছে দিনে দুপুরে ছিনতাই করার। ইঞ্জিনিয়ার আশরাফের এই ছিনতাই গুরু হলো মো. লেনিন শেখ। বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুরে। লেলিন পেশায় মিনি ট্রাক ড্রাইভার। লেলিন শেখের অন্য শিষ্যদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাইফুল ইসলাম @ শাওন এবং জিল্লুর রহমান খান। এই শাওন এবং জিল্লুর দুইজনেই এক সময় মগবাজারস্থ একটি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ছিল। ড্রাইভার হওয়ায় এ সকল ছিনতাইকারী ঢাকা শহরের অলিগলি, রাস্তাঘাট ভালো করে চিনে এবং মোটর সাইকেল চালনায় দুরন্ত দক্ষতা অর্জন করেছে।
যেভাবে ছিনতাই করে : এই ছিনতাইকারী দলগুলোর মূল অস্ত্র ভালো ব্র্যান্ডের একটি মোটরসাইকেল। যেকোনো পরিস্থিতিতে মোটর সাইকেল চালনায় দক্ষ একজন ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলের পাইলট হয়। অপরজন পিছনে বসে রিকশাতে ব্যাগ নিয়ে চলতে থাকা পুরুষ অথবা মহিলা ভিকটিমকে খোঁজে। ভিকটিমকে বহনকারী রিকশাটিকে অপেক্ষাকৃত কম যানজট যুক্ত এলাকায় পেলেই ছিনতাইকারী দলটি পিছন থেকে পাশে এসে আচমকা টান মারে ব্যাগটি নিয়ে হাই স্পিডে পালিয়ে যায়। ছিনতাইকৃত টাকা ভাগ করে নেয় সমানুপাতিক হারে। আর গেজেট এবং গিয়ার্স বিক্রি করে দেয় কয়েকটি নির্দিষ্ট চোরাই মালের ক্রেতার কাছে। এ সকল চোরাই মালের ক্রেতাদেরকে ও শনাক্ত করা হয়েছে। অধিকাংশ সময়ই ছিনতাইকারীদের কাছে কোন অস্ত্র থাকে না বলে চেকপোষ্টে এদেরকে সন্দেহ করা হয় না। মাদক সেবন এবং মেয়েদেরকে নিয়ে ফুর্তি করার জন্যই এ ছিনতাইকারীরা সুযোগ পেলেই নিয়মিত ছিনতাই করে আসছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
ডিএমপি’র ডিসি (ডিবি) মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ৪ ছিনতাইকারী মিরপুর, পল্লবী, বনানী, গুলশান ধানমন্ডি, আগারগা ও তেজগাঁও এলাকায় ১০০ টির বেশি ছোট-বড় ছিনতাই করার কথা ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে। ছিনতাইকারী লেলিন শেখ এবং শাওনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ, মিরপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শেরেবাংলানগর, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, কাশিয়ানী প্রভৃতি থানায় এক ডজনের ও বেশি ছিনতাইসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এই ছিনতাইকারীদের অন্যান্য শিষ্য এবং চোরাই মালের নিয়মিত ক্রেতাদেরকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
Leave a Reply