কক্সবাজারের টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দুই নেতাকে মারধরের ঘটনাকে ‘পারিবারিক ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করেছেন উখিয়া-টেকনাফের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। শনিবার আমাদের সময়কে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে মারধর করেননি তিনি। যাদের মারধরের কথা বলা হচ্ছে, তারা (ইউছুপ মনু ও ইউছুপ ভূট্টো) তার আপন মামাতো ভাই ও মামাতো ভগ্নিপতি।
বদি বলেন, ‘টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জেলা কমিটির নেতাদের সামনে তারা (মারধরের শিকার ব্যক্তি) অশোভন আচরণ করেছেন। এতে সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ কারণে রক্তের আত্মীয় হিসেবে আমার ভাই ও ভগ্নিপতিকে শাসন করেছি।‘
সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের টেকনাফ পৌর কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অন্তত আড়াই বছর আগে। মাত্র দুটি ছাড়া অন্যসব ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিলও সম্পন্ন করতে পারেনি পৌর কমিটি। ওয়ার্ড কমিটির নেতারা পৌর কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন বর্ধিত সভায়। পৌর কমিটির নেতারা ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে আসছিল।’ এ নিয়ে টেকনাফ পৌর কমিটির দুই নেতা ও তার দুই আত্মীয় জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সামনে অশোভন আচরণ করায় শাসিয়েছেন।
গত শুক্রবার বিকেলে টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বদি ও তার ভাইসহ সমর্থকদের হাতে দুই নেতা মারধরের শিকার হওয়ার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
মারধরের শিকার ব্যক্তিরা হলেন- টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইউছুপ মনু ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ ভূট্টো। তাদের মধ্যে মনু বদির মামাতো ভাই এবং ভূট্টো মামাতো বোনের স্বামী।
ভিডিওতে দেখা গেছে, সভা মঞ্চের আসন থেকে দাঁড়িয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহ আলম রাজা কাউকে লক্ষ্য উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করছেন। এ সময় সভায় উপস্থিত কয়েকজন নেতাকর্মীও তার (শাহ আলম রাজা) সঙ্গে উত্তেজিত স্বরে কথা বলেন। এক পর্যায়ে মঞ্চ থেকে উঠে বদি কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরেই কয়েকজন লোককে সঙ্গে বদি সভা কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপরই বদির ছোট ভাই আব্দুর শুক্কুর আক্রমণ করেন মনুর ওপর। এ সময় আরও কয়েকজন মিলে মনুকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে হামলাকারীদের সঙ্গে যোগ দেন বদিও। তিনিও মারধর করেন।
মনুকে বাঁচাতে আসেন টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ ভূট্টো ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক। হামলাকারীরা তাদেরও মারধর করেন।
ইউছুপ মনু বলেন, ‘সভায় বদি সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে পৌর কমিটির নেতাকর্মীদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের মতামত প্রধান্য দেন। এ নিয়ে আমি প্রতিবাদ জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হন। এতে তার সঙ্গে আমার বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বদি বেরিয়ে যান। পরে বদি তার ভাই আব্দুর শুক্কুর ও ভাগ্নে নুর মোহাম্মদ ওরফে লাস্টটিপসহ কয়েকজন সমর্থক ক্যাডার নিয়ে হলরুমে প্রবেশ করেন। এরপরই আমার ওপর তারা হামলা চালায়।’
মারধরের শিকার ইউছুপ ভূট্টো বলেন, ‘বদি ও তার সমর্থকরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সামনেই সভাস্থলে মনুকে মারধর শুরু করে। তাকে বাঁচাতে গেলে আমার ওপরও তারা হামলা চালায়।’
এ বিষয়ে টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, সম্মেলন প্রস্তুতি নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে বদি ও তার সমর্থকদের হাতে পৌর আওয়ামী লীগের দুই নেতা মারধরের শিকার হয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক কমিটির নেতা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী রণজিত দাশ বলেন, ‘ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসায় আমরা (জেলার নেতারা) সভা কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাই। আমাদের অনুপস্থিতিতে হলের ভেতরে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এরপর উভয়পক্ষকে নিয়ে সভাস্থলে ঘটনার ব্যাপারে একটি সমাধান দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক। তারপরও ঘটনার ব্যাপারে যদি কারো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় সেটার ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply