পারিবারিক আবহের রোমান্টিক বা সমসমায়িক গল্পে ঢালিউড যখন দর্শকের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলছে, ঠিক তখনই এ দেশের চলচ্চিত্রে এসএস প্রডাকশনের হাত ধরে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের প্রবেশ। তার খোলামেলা ঊরু দেখতে যুবকরা হুমড়ি খেয়ে পড়লে পারিবারিক আবহে সিনেমা উপভোগ করার যে ট্রেন্ড, তাতে চিড় ধরে। সেই দেখানো পথে পরবর্তীকালে এ দেশের অনেকেই চলেছেন। তাদের সে চলার গতি এতটাই প্রবল ও প্রতাপে মেশানো ছিল যে, পুরো চিত্রজগৎ তখন নিয়ন্ত্রিত হতো ঊরু দেখানো বিকিনি বা ক্লিভেজ দেখানোর দাপটে। ফলে জ্যামিতিক হারে পারিবারিক ছবির দর্শক কমতে থাকে। অন্যদিকে সিনেমা হলও বন্ধ হতে শুরু করে। এই ধারা যখন ঊর্ধ্বমুখী, ঠিক তখনই বিপরীত স্রােতে গিয়ে অশ্লীল এই ট্রেন্ডের ঝুঁটি মুঠোবন্দি করতে এগিয়ে এলেন ইন্ডাস্ট্রির প্রায় নবাগত এক সহকারী পরিচালক এসএ হক অলিক। এমএ শহীদের কাহিনি অবলম্বনে ও চিত্রনায়ক রিয়াজের প্রযোজনায় নির্মাণ করলেন ‘হৃদয়ের কথা’। সময় বিবেচনায় সিনেমার শিরোনামটি যেন সিনেমা হলে ফিরতে চাওয়া পারিবারিক দর্শকের মনের কথা। সিনেমা নির্মাণে যে ধরনের টাইমিং, নামকরণ প্রয়োজন- তার সবটাই অলিক ঢেলে দিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর সব অশুভ যেন বৈশাখী ঝড়ের তা-বে পালিয়ে গেল। ছবিটি ওই সময় ব্যাপক ব্যবসা করে। চারদিকে তখন অলিকের নামে রোশনাই ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ছবির গান আজও মানুষের মুখে মুখে। সেই থেকে অলিক দর্শকের আপনার মানুষ হয়ে গেলেন। এর পর নির্মাণ করলেন রিয়াজ-পূর্ণিমা জুটিকে নিয়ে ‘আকাশছোঁয়া ভালোবাসা’। ধারাবাহিক সে সিনেমাটিও ব্যবসায়িকভাবে সফল। একটু বিরতি নিয়ে বানালেন ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’ ও ‘এক পৃথিবী প্রেম’।
ছয় বছরের বিরতি দিয়ে ফের এসএ হক অলিক বানালেন গ্রামীণ আবহের কাহিনিনির্ভর ‘গলুই’ সিনেমা। এটি প্রযোজনা করছে টিওটি ফিল্মস। সরকারি অনুদানে নির্মিত সিনেমাটি ইতোমধ্যে দুই কোটির কাছাকাছি খরচ হওয়ার সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ব্যাপক আয়োজন, গল্পের ট্রিটমেন্ট, গানে বৈচিত্র্য ছবিটিকে দীর্ঘদিন পর গ্রামীণ পটভূমি আবহমান বাংলাকে মনে করাবে বলে নির্মাতার বিশ^াস। তার সেই বিশ^াসের ওপর ভর করে আলোচনার শীর্ষে এখন ‘গলুই’। তাই আলোচনাকে আশীর্বাদজ্ঞানে অলিক প্রত্যাশা করছেন ঈদে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ‘গলুই’। যদিও তিনি এ প্রতিবেদন প্রকাশ পর্যন্ত কতটি প্রেক্ষাগৃহ চূড়ান্ত করেছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান জানাতে পারেননি, তবুও ত্রিশের ঊর্ধ্বে সংখ্যাটি চল্লিশ ছুঁয়ে যেতে পারে বলে সিনেমা হল সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
অন্যদিকে ব্যবসায়িক মারপ্যাঁচের বাজারে সাধারণ দর্শকের ভাবনা ভিন্ন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রভূমি বলে পরিচিত জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর মার্কস অলিকের দিকে। তাদের ভাষ্য- এখনো টিভিতে ‘হৃদয়ের কথা’ দেখি। গানগুলো ছুঁয়ে যায়। সে বিবেচনায় আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি নিকটস্থ প্রেক্ষাগৃহে ‘গলুই’ উপভোগ করার। আমরা জানি, অলিকের ছবি মানে নিরেট পারিবারিক আবহের রোমান্টিক অনুষঙ্গ। তাই আশা করছি, তিনি গ্রামীণ আবহের এমন কোনো ছবিই নির্মাণ করেছেন- যেটা তার প্রথম ছবিকেও ছাড়িয়ে যাবে।
Leave a Reply