1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

রাঙামাটির থেগা সীমান্তে সেতু বানাতে চায় ভারত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২

রাঙামাটির বরকল উপজেলার থেগা বাজার সীমান্তে সেতু বানাতে চায় ভারত। উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সড়ক পথে মিজোরাম রাজ্যের যোগাযোগ স্থাপন। ভারতের এ প্রস্তাবে বাংলাদেশের সম্ভাব্য লাভ ও ক্ষতি জানতে চেয়েছে ট্যারিফ কমিশন। এছাড়া দেশটির প্রস্তাবিত ওই রুটের বাংলাদেশ অংশের বর্তমান অবস্থাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এর আগে গত বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি স্পর্শকাতর হিসেবে পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল।

ট্যারিফ কমিশন থেকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ভারতের প্রস্তাবটি মাল্টিমোডাল ভিত্তিক, যার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দূরত্ব সড়কপথে এবং রাঙামাটি থেকে থেগামুখ পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার নদী পথে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে বাংলাদেশ ও ভারতের (মিজোরাম) মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এমন বাস্তবতায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অভিমত চেয়েছে ট্যারিফ কমিশন। এজন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর থেকে মতামত নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। ইতিবাচক মন্তব্য এসেছে সেখান থেকেও।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে থেগা সেতু নির্মিত হলে। দুর্গম অঞ্চলে সেতুটি নির্মাণের ফলে বাণিজ্য সুবিধা বাড়বে। এ সেতু হবে ভারতের অনুদানে। এটি দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন। এর আগে আরেকটি সেতু করা হয়েছে; নাম ফেনী সেতু। এখন থেগা সেতু নির্মাণে যৌথভাবে জরিপকাজও সম্পন্ন হয়েছে। জানামতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়ে গেছে। এ ধরনের সেতু হলে সহজ হবে উভয় দেশের বাণিজ্য।

জানা গেছে, থেগা সেতুর ফলে বাংলাদেশের ওপর প্রভাবের বিষয়ে সওজ বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে থেগা পর্যন্ত নদী পথে ও সড়ক পথে মাল্টিমোডাল ভিত্তিতে পণ্য পরিবহন চালু হবে। এতে করে ‘এনোয়াল এভারেজ ডেইলি ট্রাফিক (এএডিটি)’ বাড়বে। থেগা সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে। সহজ হবে উন্নত ও নিরাপদ যোগাযোগ। দুই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। এছাড়া ২৩ কিলোমিটার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হওয়ায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সওজ।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়কের (অক্সিজেন-হাটহাজারী পর্যন্ত) সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়কে যানজট থাকে। ভবিষ্যতে এ অংশটি চার লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীত করতে হবে। এ রুটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সওজ জানিেেছ, রাঙামাটি শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরত্বে চট্টগ্রাম বন্দর। ওই ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে ৩৭ কিলোমিটার রাঙামাটি সড়ক বিভাগের আওতাধীন। সড়কটি প্রস্থে ৭ দশমিক ৩ মিটার। চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের চট্টগ্রাম-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়কের অক্সিজেন থেকে হাটহাজারী পর্যন্ত ১২.৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি চার লেন প্রশস্ততায় আছে। হাটহাজারী থেকে রাউজান রাবার বাগান পর্যন্ত চার লেন প্রশস্তকরণের কাজ চলমান।

সূত্র মতে, রাঙামাটির বরকলের থেগা বাজার সীমান্তে থেগা নদীর সেতু নির্র্মাণে ভারত পাঁচ বছর ধরে চিঠি চালাচালি করছে। ত্রিপুরার সাব্রুম শহরকে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সড়ক পথে যুক্ত করতে গত বছরের মার্চে খাগড়াছড়ির রামগড়ে ফেনী নদীর ওপর ভারতীয় অর্থায়নে নির্মিত সেতু উ™ে^াধন করা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় বরকল সীমান্তে সেতু নির্মাণ করতে প্রস্তাব দেয় ভারত। ভারতীয় অংশের থেগা নদী বাংলাদেশে প্রবেশের পর কর্ণফুলী নামে পরিচিত। মিজোরামের লুসাই পাহাড়ে উৎপন্ন কর্ণফুলী নদী রাঙামাটির কাপ্তাই লেক হয়ে চট্টগ্রাম পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। নদীটি চট্টগ্রাম বন্দরের লাইফলাইন হিসেবে খ্যাত।

এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেগা সেতুর ব্যাপারে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল। সেখানে বলা হয়, থেগা সেতুর নির্মাণ এলাকাটি সীমান্তের কাছে ‘কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ’। সেতু নির্মিত হলে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তায় প্রভাব পড়তে পারে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনাচারের ওপর দৃশ্যমান প্রভাব পড়তে পারে। থেগা নদী কর্ণফুলীতে পানির জোগান দেয়, ফলে সেতু নির্মিত হলে কর্ণফুলী নদীর ওপর বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠিতে বলেছে, ভারতের প্রস্তাবিত থেগা সেতু নির্মাণে অনাপত্তি প্রদানের আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু তাদের নয়, সীমান্তে সেতু নির্মাণে আপত্তি রয়েছে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর। কারণ, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা রয়েছে। রাঙামাটিতে গত কয়েক বছরে অনেক মানুষ নিহত হয়েছে এসব গোষ্ঠীর হানাহানিতে। সেনাবাহিনীর টহলেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমন ‘স্পর্শকাতর’ এলাকায় আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপিত হলে স্থানীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে। এছাড়া সেতু নির্মিত হলে বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে মহাসড়ক নির্মাণ করতে হবে। যাতে পরিবেশের ক্ষতি হবে। স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনাচার ও জীবিকার ঐতিহ্যে বিঘœ ঘটাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com