ক্রমেই জোরালো হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরাও। শুধু খুলে দেয়ার পক্ষে দাবি নয়; পাশাপাশি কিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে তার একটি রূপরেখাও বাতলে দিয়েছেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও সরকারের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায়। তারা প্রত্যেকেই বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর কোনো বিকল্প নেই।
এ দিকে গতকাল রোববার শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি রাজধানীতে শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যেহেতু শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে তাই সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে না নামলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন নয়া দিগন্তকে বলেন, দীর্ঘ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের এখনি ক্লাসে ফেরাতে নারাজ। তবে আমাদের কাছে বিকল্প অনেকগুলো অপশন রয়েছে। বিশেষ করে প্রতি শুক্র ও শনিবার সারা দেশের অফিস-আদালত বন্ধ থাকে। করোনা সংক্রমণের মধ্যেও এ দুই দিন এসএসসি পরীক্ষার্থী, এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শেষবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, শিক্ষার পথ রুদ্ধ করে মূলত জাতিকে ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশকে এই ক্ষতি হতে রক্ষা করতে শুক্র ও শনিবার হলেও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা উচিত। করোনা সংক্রমণের উচ্চহারের সময়েও এ দু’দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে বলেছেন, অনেক সময় চলে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে এখন চিন্তাভাবনা করতে হবে। বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদের মতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে চিন্তা না করে এলাকাভিত্তিক চিন্তা করতে হবে। যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কম সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগে খুলে দেয়ার পক্ষে মত দেন তিনি।
সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে বক্তব্য আসছে। প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা নিয়ে বেশ জোরেশোরে কথা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বিষয়টি এখন সরকারের উচ্চমহলের মুখে মুখে। একই সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা বলছেন, তারাও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নির্ভর করছে সরকারের ওপর। আমরা সরকারি নির্দেশনা পেলে সশরীরে পাঠদান শুরু করব। এ বিষয়ে আমাদের সক্ষমতা রয়েছে। আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস খোলারও সব প্রস্তুতি আমাদের আছে।
অন্য দিকে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস)। বিশেষ করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিনের জন্য হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট বুঝতে সুবিধা হবে বলে জানান শিক্ষক নেতারা।
সমিতির সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র নজরুল ইসলাম রনি জানান, দীর্ঘ ১৭ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীরা বইয়ের জগৎ ছেড়ে ফেসবুক বা পাবজি গেমে কিংবা নেশার জগতে আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং মানসিক সমস্যায় ভুগছে। বর্তমানে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট আদান-প্রদান চলছে; কিন্তু শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট ভালোভাবে বুঝতে পারছে না বলে জানা গেছে। তাদের সাথে মতবিনিময় বা সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিনের জন্য হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট বুঝতে সুবিধা হবে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি বুঝে অন্যান্য শ্রেণীর ক্লাসও চালু করা যেতে পারে।
সর্বশেষ গতকাল রোববার শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির বক্তব্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অচিরেই খুলে দেয়ার একটি আভাস পাওয়া গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আমরা সবসময় ভাবছি, আজকে নতুন করে ভাববার কিছু নেই, আমরা আগে থেকেই ভাবছি, পরিকল্পনা করছি। আর সেগুলো বাস্তবায়ন করছি। যেখানে যতটুকু সম্ভব, পরিস্থিতি যতখানি এলাও করছে আমরা তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার এখন নিম্নগামী। কাজেই আমরা আশা করি, সবাই যদি যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তাহলে মৃত্যুর হার আরো নেমে যাবে। ব্যাপক হারে করোনারোধী টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শনাক্ত হার ৫ শতাংশে না নামলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
Leave a Reply