করোনা মহামারী শুরুর কারণে সংক্রমণ রুখতে গত বছরের মার্চ থেকেই বিভিন্ন বড় বড় শহরে শুরু হয় লকডাউন। এ সময় যেমন কলকারখানা বন্ধ ছিল, তেমনি বন্ধ ছিল যানবাহন চলাচলও। কিন্তু তার পরও ওই বছর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১০ মাইক্রোগ্রাম পিএম ২.৫ (সূক্ষ্ম ধূলিকণা) থাকলে তাকে মানুষের জন্য সহনীয় হিসেবে ধরা হয়। সেখানে গত বছর বাংলাদেশের বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে দূষণের পরিমাণ ছিল ৭৭.১ মাইক্রোগ্রাম। তালিকায় বাংলাদেশের পরের দুই অবস্থানেই ছিল প্রতিবেশী দুই দেশ পাকিস্তান (৫৯.০) ও ভারত (৫১.৯)। ওই বছর বিশ্বের শীর্ষ ৫০ দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায়ও আছে বাংলাদেশের নাম। এ ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকাকেও ছাড়িয়ে গেছে পার্শ্ববর্তী জেলা শহর মানিকগঞ্জ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের গত বছরের শীর্ষ ৫০ দূষিত বায়ুর শহরের এ তালিকা প্রকাশ করেছে। উল্লেখযোগ্য হলো- তালিকার ৫০ শহরের মধ্যে ৪৯টিই অবস্থিত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও চীনে। এর মধ্যে দূষিত বায়ুর দিক থেকে ১৬তম অবস্থানে আছে মানিকগঞ্জ ও ২৩তম অবস্থানে রাজধানী ঢাকা। ওই বছর বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দূষিত বায়ুর শহর ছিল যথাক্রমে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের হোতান, ভারতের উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ,
বুলান্দশহর, বিসরাখ জালালপুর ও রাজস্থানের ভিওয়াদি। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের বাইরে একমাত্র দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ২৫তম অবস্থানে আছে ইন্দোনেশিয়ার সাউথ টাঙ্গিরাঙ।
তালিকার তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর ১২ মাসে মানিকগঞ্জের বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে সূক্ষ্ম ধূলিকণার উপস্থিতি ছিল যথাক্রমে জানুয়ারিতে ১৬২.৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৮০, মার্চে ১০৮.৩, এপ্রিলে ৭১.৮, মেতে ৪৯, জুনে ২৮.৩, জুলাইয়ে ২০.৮, আগস্টে ২১, সেপ্টেম্বরে ২৬.১, অক্টোবরে ৫৭.১, নভেম্বরে ১১১.৫ ও ডিসেম্বরে ১৮১.৮ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ ওই বছর গড়ে মানিকগঞ্জের বাতাসে সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ ছিল ৮০.২ মাইক্রোগ্রাম। অন্যদিকে ২৩তম অবস্থানে থাকা ঢাকায় জানুয়ারিতে ১৮৪.৪, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৭.১, মার্চে ৯৪.৩, এপ্রিলে ৫৪, মেতে ৩৮.৬, জুনে ২৮.৫, জুলাইতে ২৪.২, আগস্টে ২৪.৫, সেপ্টেম্বরে ৩০.৩, অক্টোবরে ৫১.৭, নভেম্বরে ৮২.৬ ও ডিসেম্বরে ১৬৫.৭ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ ঢাকায় বাতাসে সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ ছিল গড়ে ৭৭.১ মাইক্রোগ্রাম।
মূলত যানবাহনের ধোঁয়া ও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি হয় পিএম ২.৫। একে ফুসফুস ক্যানসারের অন্যতম এজেন্ট হিসেবে শনাক্ত করেছে ডব্লিউএইচও। ডব্লিউএইচওর মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১০ মাইক্রোগ্রাম পিএম ২.৫ থাকলে তাকে সহনীয় বলা যেতে পারে। সেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, মঙ্গোলিয়া ও আফগানিস্তানে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫ ছিল গড়ে ৭৭ থেকে ৪৭ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে।
Leave a Reply