ছেলেমেয়ে উভয়ে যখন প্রাপ্তবয়সে উপনীত হয় তখন পিতামাতা সন্তানদের বিয়ের চিন্তা করেন। এক্ষেত্রে বর্তমানে পাত্রপাত্রীর যোগ্যতা নির্ণয় করা হয় পুরুষের উপার্জন আর নারীর সৌন্দর্যের ওপর। কিন্তু শুধু এতটুকুর ওপর ভিত্তি করা আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
ইসলাম বলছে- চারটি ক্ষেত্রে স্বামী উপরে থাকতে হবে। না হয় স্ত্রীর অবজ্ঞার পাত্র হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। সেগুলো হলো- বয়স, উচ্চতা সম্পদ ও বংশমর্যাদা।
আর চার ক্ষেত্রে স্ত্রী উপরে থাকতে হবে- সৌন্দর্য শিষ্টাচার, বিনয়, তাকওয়া-পরহেযগারি ও স্বভাব-চরিত্র।
সাধারণত কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করে নারীদের বিয়ে করা হয়। প্রথমত সম্পদের কারণে। কোন নারী সম্পদশালী হলে তার জন্য সবাই বিয়ের বার্তা পাঠায়, যাতে তার সম্পদ দিয়ে নিজেও ধনী হতে পারে।
দ্বিতীয়তো নারীর বংশমর্যাদার কারণে বিয়ে করা হয়। তৃতীয়তো নারীর রূপ সৌন্দর্য। চতুর্থ তার ধর্মপরায়ণতা ও খোদাভীতি দেখে বিয়ে করা হয়।
জীবনের চাওয়া যদি সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করা হয় তাহলে এর থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। যদি মূলভিত্তিই দুর্বল হয় তবে জীবন কীভাবে উন্নত হবে। যদি শুধু রূপই দেখেন তাইলে বাহ্যিক এ সৌন্দর্য কদিন থাকে? এটা মাত্র কয়েক বছরের জন্য। যৌবন রুপ সব সময় থাকে না। যার ভিত্তিই দুর্বলের উপর স্থাপিত ঘরও দুর্বল হবে।
ভালোচরিত্র এবং ভদ্রতা এমন এক জিনিস যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। তাই এ ভিত্তির ওপর যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হবে সে ঘর দীর্ঘস্থায়ী ও মজবুত হবে। এজন্য ধর্মপরায়ণতা ও সৎচরিত্রের দিকে লক্ষ্য রেখে স্ত্রী নির্বাচন করতে হবে।
কারণ রূপবতী স্ত্রীকে স্বামী যখন দেখে তখন তার চোখ শীতল ও আকর্ষিত হয়, আর গুণবতী স্ত্রীকে স্বামী যখন দেখে তখন তার মন শীতল হয়। তাই চোখকে সাময়িক শীতল করার চেয়ে নিজের মনকে শান্ত ও শীতল করাই সবচেয়ে উত্তম।
এক হাদিসে আছে, দুনিয়ার সবকিছুই ভোগ করার জন্য আর এ দুনিয়ার অন্যতম ভালো উপভোগ্য বস্তু হচ্ছে সতী স্ত্রী।
আল্লাহ তাআলা যাকে সতী স্ত্রী দিয়েছেন বুঝতে হবে আল্লাহ তায়ালা তাকে সবচেয়ে বড় সম্পদ দান করেছেন।
হাদিসে রয়েছে, সমস্ত কাজের বদলা নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। নিয়তে যখন শুধু সম্পদ আশা হবে তখন দেখা যাবে ঝগড়া ফাসাদ লেগেই আছে। নিয়তে যদি শুধুই রূপ সৌন্দর্য হয়,তখন আপনি দেখবেন ঝগড়া ফাসাদ মনোমালিন্য লেগেই আছে।
আর যখন গুণ ও বংশমর্যাদা দেখে বিয়ে করা হয় তখন উদ্দেশ্য থাকে আমি পবিত্রতার সঙ্গে জীবন কাটাতে চাই। যখন উদ্দেশ্য এই থাকে তখন সঠিক নিয়তের কারণে ঘর আবাদ হয়ে যায়।
হাদিসে আছে, আল্লাহভীতির পর মানুষ যে জিনিস থেকে সবচেয়ে বেশি লাভমান হয় তা হচ্ছে পুণ্যবান স্ত্রী। তাকে যদি কোন কাজের নির্দেশ দেয়া হয় তবে সে তা পালন করে। যখন তার দিকে চোখ তুলে তাকানো হয় তখন মন শান্ত ও খুশি হয়ে যায়। যদি স্বামী কখনো এমন কসম খায় যা তার স্ত্রীর পূরণ করার মতো তবে স্ত্রী তা পূরণ করে। আর যদি কখনো সে তার স্ত্রী থেকে দূরে কোথাও যায় তবে স্ত্রী তার মাল সামানা জিনিসপত্র ও নিজের ইজ্জত হেফাজত করে। ( ইবনেমাজাহ)
এ হাদিসে পূণ্যবান স্ত্রী গুণ বলা হয়েছে।
একবার রাসুলে করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে আলোচনা হচ্ছিল দুনিয়ার নারীদের মধ্যে সেরা নারী কে? অনেকজন অনেক রকম করে সেরা নারীদের গুণ বলছিল। এভাবে আলোচনা চলতে থাকল।
হযরত আলী ( রা.) কোনো কাজে ঘরে গেলেন। তিনি হযরত ফাতেমাকে (রা.) বললেন- রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে- দুনিয়ার সেরা নারী কে? এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
হযরত ফাতেমা (রা.) বললেন- আমি কি বলব দুনিয়ার সেরা নারী কে? হজরত আলী (রা.) বললেন অবশ্যই বলো। ফাতেমা ( রা.) বললেন- সেরা নারীর গুণ হলো- সে নিজেও বেগানা কোনো পুরুষের দিকে তাকায় না আর কোনো বেগানা পুরুষও তার দিকে চোখ তুলে তাকায় না।
হযরত আলী (রা.) মজলিসে ফিরে এলেন এবং রাসূলকে (সা.) বললেন, আল্লাহর রাসূল আমার স্ত্রী ফাতেমা সেরা নারীর গুণ এই বলেছেন যে, কোনো বেগানা পুরুষের দিকে তাকিয়ে দেখে না আর কোনো বেগানা পুরুষও তার দিকে ফিরে তাকায় না।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- হ্যাঁ ফাতেমা ঠিকই বলেছে এটিই সেরা নারীর গুণ। আর নারীদের মধ্যে লজ্জার আভাস থাকা, এটা মৌলিক বিষয় যে নারীর চেহারায় লজ্জার ঝলক থাকে তার মনও লজ্জাশীলতায় ভরপুর থাকে, নারীদের মধ্যে লজ্জা থাকা অন্য রকম একটা গুণ বলে বিবেচিত হয়।
নারীদের মাঝে তিনটি গুণ অবশ্যই থাকা প্রয়োজন- প্রথম গুণ হচ্ছে নারীদের মধ্যে ভাষার মিষ্টতা থাকা। তথা যা কিছু বলেন তা কানে মিষ্টি মধুর মতো মনে হয়। এমন নয় যে সবসময় স্বামীকে বকাঝকা করতে থাকে, বাচ্চাদের নিয়ে চিল্লাচিল্লি গালিগালাজ করতে থাকে।
দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে- তার মনে কল্যাণ কামনা থাকা। তথা তার মন মানসিকতা ভালো হয়। তৃতীয় গুণ হচ্ছে- তার হাত সবসময় কাজে লেগে থাকা। এসব গুণ যে নারীর মাঝে পাওয়া যাবে সে নিশ্চিত আদর্শ ও গুণবতী স্ত্রী হিসাবে জীবন কাটাতে পারবে।
আল্লাহতাআলা আমাদের সঠিক জীবনসঙ্গী নির্ণয় করার তৌফিক দান করুন। আমিন
লেখক: শিক্ষার্থী জামিয়াতুন নূর আল কাসেমীয়া উত্তরা ঢাকা।
Leave a Reply