1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪১ অপরাহ্ন

ঢামেক হাসপাতালে ঠাঁই নেই রোগী নিয়ে ছোটাছুটি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগী রাখার ঠাঁই নেই। দূর-দূরান্ত থেকে করোনা রোগী এনে সিট খালি না পেয়ে এ দিক-ও দিক ছোটাছুটি করছেন তাদের স্বজনরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শতকরা ৭৫ ভাগ রোগী বিভিন্ন জেলা থেকে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। আর ২৫ ভাগ রোগী রাজধানী ও তার আশপাশ থেকে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢামেকে করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৭ জন। এক দিক দিয়ে লাশ বের করা হচ্ছে, অন্য দিক দিয়ে করোনা আক্রান্ত জরুরি রোগীর ভিড় বাড়ছে। কেউ আবার আইসিইউ না পেয়ে ছোটছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। অনেকেই আবার সিট পাওয়ার আসায় অপেক্ষা করছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। স্বজনরা অপেক্ষা করছেন কেউ রিলিজ নিয়ে বাসায় গেলে সেই সিটটা যদি কপালে জোটে।

আইসিইউ একটি সিট পাওয়া যেন একটি সোনার হরিণ পাওয়ার মতো। গতকাল শক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের জরুরি বিভাগের সামনে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল একটি লাশ। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে আছে চারপাশ। মৃতের নাম সামছুল আলম (৮১)।

গোপালগঞ্জের মোকছেদপুরের বাসিন্দা। মৃতের মেয়ে সাহারা বেগম জানান, ‘আমার বাবা শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। প্রথমে তাকে রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা দ্রুত আইসিইউতে নেয়ার কথা জানান। তখন তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েক দিন রেখে গত বৃহস্পতিবার ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করি। এখানে আইসিইউ না পেয়ে তাকে রাখা হয় সাধারণ একটি বেডে। গতকাল শুক্রবার সকালে বাবা মারা যান।

এ সময়ে দেখা হয় মিরপুর পল্লবী এলাকার বাসিন্দা আবুল মিয়ার সাথে। তার স্ত্রী জাহানারা বেগম (৩৮) এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছেন। এখন শুরু হয়েছে শ্বাসকষ্ট। পরে কোনো উপায় না পেয়ে প্রথমে মিরপুর ১ নম্বর ডেলটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসরা তাকে রাখেনি। পরে সেখান থেকে টেকনিক্যালস্থ ডায়াবেটিস জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেও একই অবস্থা। পরে সেখান থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেও ঠাঁই হয়নি। পরে বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নিয়ে আসা হয়। এখানে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করানোর পরে ওয়ার্ড বয়রা তাকে অক্সিজেন দিয়ে ওয়ার্ডে নিয়ে যান।

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা হাফিজ মিয়া (৫৬)। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করান স্বজনরা।

রোগীর ছেলে কামরুজ্জামান জানান, এখানে চিকিৎসারত ছিলেন তিনি। বিকেলে চিকিৎসকরা জানান তাকে আইসিইউতে নিতে হবে। কিন্তু এখানে আইসিইউ না পেয়ে দুপুরে হাসপাতালে লোকজনদের মাধ্যমে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি আক্ষেপ করে বললেন বাইরে আইসিইউতে অনেক খরচ কি আর করার আগে রোগীকে তো বাঁচাতে হবে।

করোনা ইউনিটের জরুরি বিভাগে ভর্তির রেজিস্টার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢামেকে ৫৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

করোনা ইউনিটের ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজউদ্দিন জানান, তাদের এখানে কোনো সিট ফাঁকা নেই, কিন্তু রোগীর চাপ খুবই বেশি। তাই হাসপাতাল পরিচালকের নির্দেশে অতিরিক্ত সিট বসিয়ে অনেক রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। আবার অনেক রোগী ফ্লোরে রাখা হচ্ছে। হাসপাতালে করোনা ইউনিটে সব মিলে সাড়ে ৭০০ সিট আছে। কিন্তু রোগী আছে ৮০০র বেশি।

তিনি আরো জানান, এক দিকে রোগী মারা যাচ্ছে অন্য দিকে আবার রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।
করোনা ইউনিটের একজন নার্স জানান, যেসব রোগীর এক থেকে দুই লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, তাদের সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যাদের বেশি লাগছে তাদের কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। তারপর যাদের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়, তাদের হাইফ্লো মেশিনের মাধ্যমে দেয়া হয়।

ঢামেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরে কোনো রকম বেড ফাঁকা থাকছে না। একটি বেড ফাঁকা হতেই আরেকজন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয় ৬৯ জন। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৫৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৮ জন রোগী। শুক্রবার রোগী ভর্তি হয় ৫৩ জন।

রোগীর স্বজনরা আইসিইউ না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখন সোনার হরিণ। এখানে তো সিরিয়াল লেগেই থাকে। একটি সিট ফাঁকা হতেই সিরিয়াল দেয়া রোগীদের স্থানান্তরিত করা হয়। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। খারাপ রোগীদের জন্য সিটের বাইরেও অনেক রোগী ভর্তি দিয়েছি। তাদের শেয়ার করেও রাখছি।

তিনি আরো বলেন, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে শতকরা ৭৫ ভাগ রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য এসেছেন। রোগীর চাপ বেশি থাকার কারণে সবদিকেই হিমসিমের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আমরা সর্বাধিক চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদের সেবা দেয়ার জন্য।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com