ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যুর চার ঘণ্টা পর মারা গেছেন ছেলে। আজ শুক্রবার দুপুরে তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন হরিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ জিয়াউল হাসান মুকুল।
মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- হরিপুর উপজেলার দনগাঁওয়ের গ্রামের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী (৭০) ও তার ছেলে আজগর আলী (৫৫)। আজগর আলী হরিপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও স্থানীয় শীতলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
আজগর আলীর খালাতো ভাই হরিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান মুকুল বলেন, ‘ইয়াকুব আলী বেশ কয়েক দিন ধরে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছিলেন। গত ২৫ জুন ইয়াকুব আলী হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যান। এ সময় তার শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে করোনা পরীক্ষা করতে পরামর্শ দেন। পরে পরিবারের লোকজনেরা ইয়াকুব আলীকে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে ইয়াকুব আলীর করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং তার শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইয়াকুব আলীর ছেলে আজগর আলীর শরীরেও করোনার উপসর্গ দেখা দিলে গত ৩০ জুন হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরে ফলাফলে তারও শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ওইদিনই আজগর আলীকেও দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
জিয়াউল হাসান মুকুল বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার ইয়াকুব আলী দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে আসার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আজগর আলীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে আজগর আলীও মারা যায়।’ তবে ইয়াকুব আলী করোনা নেগেটিভ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন, না পজিটিভ অবস্থাতেই বাড়ি ফেরেন, এ সম্পর্কে তার পরিবার থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পরও জেলায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমছে না। এ অবস্থায় সকলকে আরও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। সচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। তাহলে করোনা ভাইরাসকে মোকাবেলা করা সম্ভব। অন্যথায় সামনে ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।’
ঠাকুরগাঁও জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭৬টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে নতুন করে ১২৫ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। যা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলার কেউ মারা যাননি। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলায় করোনায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫০৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৪৫ জন এবং মারা গেছেন ৮৩ জন।
Leave a Reply