1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩১ অপরাহ্ন

মুনের সর্বনাশা ক্ষোভ : মা-বাবা-বোনকে হত্যা, স্বামী হাসপাতালে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

রাজধানীর কদমতলীতে পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ সেবনের মাধ্যমে অচেতন করে মা-বাবা-বোনকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করার পর স্বামী ও সন্তানকেও হত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেছেন মেহজাবিন ইসলাম মুন (২৪) নামে এক তরুণী। পরিবারের সবার প্রতি সর্বনাশা ক্ষোভ থেকে গত শুক্রবার গভীর রাতে এ হত্যাকাণ্ডের পর সকালে জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইনে ফোন করে ওই তরুণী বলেন- ‘তিনজনকে খুন করেছি, তাড়াতাড়ি আসেন, তা না হলে আরও দুজনকে (স্বামী-সন্তান) খুন করব।’

খবর পেয়ে গতকাল শনিবার সকালে কদমতলী থানাধীন মুরাদপুর এলাকার ২৮, লালমিয়া সরকার রোডের ছয়তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মেহজাবিনের বাবা মাসুদ রানা (৫০), মা মৌসুমী ইসলাম (৪২) ও ছোট বোন জান্নাতুল মোহিনীর (২০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বাড়ি থেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় মেহজাবিনের দ্বিতীয় স্বামী শফিকুল ইসলাম অরণ্য (৪০) এবং তার প্রথম সংসারের ছয় বছরের মেয়ে মারজান তাবাসসুম তৃপ্তিয়াকেও। তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ হত্যায় অভিযুক্ত মেহজাবিনকে গ্রেপ্তার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে এর আদ্যোপান্তও জানিয়েছেন তিনি। ফোন পাওয়ার পরপরই সেখানে হাজির না হলে দ্বিতীয় স্বামী শফিকুল ইসলাম ও মেয়ে তৃপ্তিয়াকেও মেরে ফেলতেন মেহজাবিন। এমন ধারণা করে পুলিশ বলছে- এর আগে প্রথম স্বামীকে খুন করে মেহজাবিন পাঁচ বছর জেল খেটেছিলেন।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহামেদ জানান, নিহত মাসুদ রানা প্রবাসে ছিলেন। তিন মাস আগে ওমান থেকে ফিরে কদমতলীর মুরাদপুর এলাকার ওই বাসায় স্ত্রী, দুই মেয়ে ও বড় মেয়ের জামাইকে নিয়ে বসবাস করতেন মাসুদ রানা। মেহজাবিন জানিয়েছেন, বাবা যখন প্রবাসে ছিলেন, তখন তার মা দুই মেয়েকে দিয়ে দেহব্যবসা করাতেন। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন মেহজাবিন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। তার বিয়ের পর ছোট বোনকে দিয়ে এ ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যে তার স্বামী ছোট বোনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এ ছাড়া মেহজাবিনের বাবা মাসুদ রানা ওমানে আরেকটি বিয়ে করেছেন। এসব মিলিয়ে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ থেকে পরিবারের সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মেহজাবিন। পরিকল্পনা অনুযায়ী বেড়ানোর ছুঁতোয় বাসায় এসে শুক্রবার রাতে কৌশলে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে চায়ের সঙ্গে চেতনানাশকজাতীয় কিছু খাওয়ান মেহজাবিন। এতে সবাই অচেতন হয়ে যায়। এর পর তিনি সবার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে মা-বাবা ও বোনকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে খুন করে স্বামী-সন্তানকেও হত্যা করতে উদ্যত হন। সকাল ৮টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশ দ্রুত না পৌঁছলে স্বামী ও সন্তানকেও মেরে ফেলার হুমকি দেন মেহজাবিন। ঘটনাস্থল থেকে সংকাটাপন্ন অবস্থায় মেহজাবিনের স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি আরও জানান, মেহজাবিনের একার পক্ষে তিনটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গ্রেপ্তার এ তরুণীর কাছ থেকে এ কা- সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। যেহেতু সম্পত্তির বিষয় রয়েছে, তাই মেহজাবিনের স্বামীকেও সন্দেহের বাইরে রাখা যাচ্ছে না। প্রয়োজনে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে, বলেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৌসুমি ফল নিয়ে শ্বশুরের বাসায় আসেন তিনি। রাত ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যদের ফল ও চা দেয় মেহজাবিন। শফিকুল না খেতে চাইলেও তাকে এক প্রকার জোর করা হয়। ওই চায়ে হয়তো ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিল। যে কারণে তা খাওয়ার পর কিছুই মনে করতে পারছেন না তিনি। পরদিন দুপুরে নিজেকে আবিষ্কার করেন হাসপাতালের বিছানায়। ওই চা একই সঙ্গে তার শ্বশুর, শাশুড়ি ও শ্যালিকাও পান করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছুই ধারণা করতে পারছেন না জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, মেহজাবিনের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির কারও সম্পর্ক ভালো ছিল না। প্রায়ই তাদের মধ্যে কলহ চলত। মেহজাবিন বেশ কয়েক মাস ধরে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করত। কাজ থেকে বাসায় ফিরে তাকে পাওয়া যেত না। তালা মারা থাকত বাসা। কারণ জিজ্ঞেস করলে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করত। বৃহস্পতিবারও ঝগড়া করে তার বাবার বাড়ি চলে আসে। যদিও হত্যাকা-ের পেছনে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুলকে দায়ী করছেন নিহতদের পরিবারের স্বজনরা।

নিহত মৌসুমী ইসলামের বড় বোন জাহানারা বলেন, মেহজাবিনের ছোট বোন মোহিনীর সঙ্গে স্বামীর পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এ জন্য তাদের পরিবারে ঝগড়া হতো। তবে শুক্রবার কী ঘটেছিল, তা আমি জানি না। তবে আমাদের ধারণা, পরকীয়ার কারণেই এ ঘটনা ঘটতে পারে।

মেহজাবিনের চাচাতো বোন শিলা জানান, ছয় বছর আগে মেহজাবিন মুন ও শফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। এর পর পরিবার থেকে মেনে না নেওয়ায় মেহজাবিনের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু বছরখানেক হলো মেহজাবিনকে মেনে নেয় পরিবার। এতেই বাধে বিপত্তি। মেহজাবিন তার পরিবারের সবাইকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে তার প্রথম বিয়ে হয়েছিল। ওই স্বামীকেও খুন করেছিল মেহজাবিন। সেই মামলায় মেহজাবিনসহ তার নিহত বাবা-মা ও বোনের জেল হয়। পাঁচ বছর জেল খেটে তারা জামিনে ছাড়া পায়। গত শুক্রবার স্বামী-সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে মেহজাবিন। এসেই ছোট বোন জান্নাতুলের সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে বলে বাবা-মাকে অভিযোগ করে। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয় তাদের। এর জের ধরেই হয়তো নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে মেহজাবিন।

নিহতের প্রতিবেশী সাইজুদ্দিন জানান, জায়গা-সম্পত্তি নিয়েও পরিবারের সঙ্গে বিরোধ ছিল মেহজাবিনের। সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য প্রায়ই বাবা-মাকে চাপ দিতেন তিনি। এ নিয়ে এর আগে সালিশও হয়েছে। সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মেহজাবিন এ হত্যাকা- ঘটাতে পারে, ধারণা তার।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com