ইউরো কাপে গত শনিবার ছিল ঘরের মাঠে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ডেনমার্কের প্রথম ম্যাচ। সেদিন দেশের ফুটবল দলকে সমর্থন দিতে কোপেনহেগেনের পারকেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলো হাজারো ফুটবল সমর্থক। কিন্তু বিরতির আগমুহূর্তের ঘটনা নিস্তব্ধ করে দেয় গোটা মাঠকে। মাঠেই জ্ঞান হারান ক্রিস্টিয়ান এরিকসন। চলে তার জীবন বাঁচানোর লড়াই। শেষ পর্যন্ত সতীর্থ ও চিকিৎসকদের সহযোগিতা বৃথা যায়নি। বেঁচে গেছে এরিকসনের জীবন। ফিরে আসে ফুটবল বিশ্বে স্বস্তি।
ম্যাচের ৪২ মিনিটে টাচলাইনের একটু সামনে বল রিসিভ করার আগমুহূর্তে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান এরিকসন। অজ্ঞান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের রাস্তা পরিষ্কার করেন ডেনিশ অধিনায়ক সিমন কায়ের। দ্রুত ছুটে যান চিকিৎসাকর্মীরাও। ডেনমার্কের জাতীয় দলের চিকিৎসক মর্টেন বোয়েসেন বুঝতে পারেন, এক সেকেন্ডও নষ্ট করা যাবে না।
বোয়েসেন বলেছেন, ‘সে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল। আমি তার হৃদস্পন্দনও অনুভব করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে পরিস্থিতি পাল্টে গেলো। সবাই দেখেছেন যে আমরা তাকে সিপিআর দিতে শুরু করলাম।’
পরের ১০ মিনিট ছিল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসের সবচেয়ে আতঙ্কিত মুহূর্ত। বেশ কয়েকজন চিকিৎসাকর্মী চেস্ট কম্প্রেশন দিয়ে এরিকসনকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। ওই সময় সতীর্থরা কান্না করছিলেন। গ্যালারিতেও চলছিল প্রার্থনা। সবার দৃষ্টি থেকে এরিকসনকে আড়াল করতে সতীর্থরা তাকে ঘিরে রেখেছিলেন।
শেষ পর্যন্ত নিস্তব্ধতা ভেঙে পারকেন স্টেডিয়ামে ভর করে উল্লাস। এরিকসনের অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর তাকে স্ট্রেচারে করে নেওয়া হয় হাসপাতালে। বোয়েসেন বলেছেন, ‘চিকিৎসাকর্মী ও অন্য স্টাফদের কাছ থেকে অনেক অনেক দ্রুত সহযোগিতা এসেছিল। তাদের সহযোগিতায় আমাদের যা করণীয় ছিল সেটাই করেছি। আমরা ক্রিস্টিয়ানকে ফেরাতে পেরেছি।’
গত শনিবার রাতেই জ্ঞান ফিরে পান এরিকসন। ছিলেন কোপেনহেগেন হাসপাতালে। সেখান থেকে তার জ্ঞান ফেরার খবর পেয়ে স্টেডিয়ামের দর্শকরা আনন্দে ফেটে পড়েন। ফিনল্যান্ডের সমর্থকরা ক্রিস্টিয়ান, ক্রিস্টিয়ান চিৎকার করতে থাকেন। জবাবে ডেনিশ সমর্থকরাও চিৎকার করেন, এরিকসন, এরিকসন।
শুরুতে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও পরে ম্যাচ চালিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বৈঠক করে উয়েফা। তারা শনিবার রাতেই কিংবা পরের দিন রোববার দুপুরে ম্যাচ খেলার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এরিকসন ভিডিও কলের মাধ্যমে সতীর্থদের ম্যাচ শেষ করার আহ্বান জানালে তারা খেলতে রাজি হন। ম্যাচটি ফিনল্যান্ডের কাছে তারা হারে ১-০ গোলে।
কিন্তু ফলের চেয়েও যেটা সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার তা হলো আবার খেলোয়াড়দের মাঠে নামা। কোচ ক্যাস্পার হুলম্যান্ড বলেছেন, ‘এই ধরনের অনুভূতি নিয়ে কেউ খেলতে পারে না। আমরা যে চেষ্টা করেছি তা অসাধারণ।’
Leave a Reply