করোনা আক্রান্ত মায়ের কোল জুড়ে আসে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান। কিন্তু সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটিও করোনা আক্রান্ত। হাসপাতালেই মারা যায় নবজাতকটি। আর এই শোক সইতে না পেরে নিজের মুখের হাইফ্লো নজেলের অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিজেও মৃত্যুবরণ করলেন মা। একই সঙ্গে মা ও সন্তানের দাফন হলো।
হৃদয়বিদারক এ ঘটনায় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি চিকিৎসকরাও। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত রবিবার রাতে ঘটে এ ঘটনা। গতকাল সোমবার বিকালে মা ও সন্তানদের দাফন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিবেক’। ওই মা তার স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরবে প্রবাসজীবন কাটাচ্ছিলেন। সম্প্রতি তারা দেশে এসেছেন।
‘বিবেক’ এর কর্ণধার সমাজসেবক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, করোনাকালে আমরা অন্তত ১৬০ জনের মৃতদেহ দাফন করেছি। এ ঘটনাটি ছিল অত্যন্ত ব্যতিক্রমী ও হৃদয়বিদারক। ঘটনাটি কারও চোখের পানিই আটকাতে পারেনি। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
জানা গেছে, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের হরিশাপুর গ্রামের মো. সোহেল পাটোয়ারীর স্ত্রী ফারজানা আক্তার (২৭) গর্ভাবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৭ মে থেকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি ছিলেন। গত রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু মা ফারজানা আক্তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে শিশুর শরীরেও এর প্রভাব ছিল, যার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়।
পরিবারের সদস্যদের কাছে সন্তানের মৃত্যু সংবাদ শুনে সহ্য করতে না পেরে তিনিও নিজের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলেন। জানতে পেরে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে আবার মাস্ক পরিয়ে যান। তিনি মাস্ক পরতে অনীহা প্রকাশ করেন। ফারজানা আক্তার এ সময় ডাক্তারদের বলেন, আমার সন্তান যখন বেঁচে নেই তখন আমারও বেঁচে থেকে লাভ নেই। ডাক্তাররা জোরচেষ্টা করেন। তিনি মাস্ক পরবেনই না। এ পরিস্থিতিতে মা ফারজানা আক্তার কিছুক্ষণ পরে নিজেও মৃতুর কোলে ঢলে পড়েন।
Leave a Reply