লন্ডনের বাসিন্দা মায়রা জুলফিকার পাকিস্তানে সোমবার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। পরের দিন তার জানাজা শেষে পাকিস্তানেই লাশ দাফন করা হয়।
জানা গেছে, খুন হওয়ার প্রায় দু’সপ্তাহ আগে তিনি তার জীবনের ওপর হুমকির কথা লাহোরের পুলিশকে জানিয়েছিলেন। লাহোরে ভাড়াফ্ল্যাটে সোমাবার ২৪ বছর বয়সী মায়রা জুলফিকারকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর ১৩ দিন আগে তিনি এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাকে বন্দুকের মুখে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ এনে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন।
বিবিসি আইনি নথিপত্র দেখে জেনেছে যে আইনের স্নাতক এই তরুণীকে হুমকি দিচ্ছিলেন দু’জন পুরুষ। তারা দু’জনেই তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।
পাকিস্তানের পুলিশ হত্যার তদন্ত শুরু করেছে। তবে এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, লাশের ময়নাতদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
‘তোমাকে খুন করব’
পুলিশের কাছে ২০ এপ্রিল দায়ের করা অভিযোগপত্রে মায়রা জুলফিকার এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে লিখেছেন, ওই ব্যক্তি তাকে বন্দুক দেখিয়ে অপহরণ করে ও তার কয়েক দিন আগে তার ওপর যৌন হামলার চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, পথচারীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। কিন্তু ওই ব্যক্তি তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুমি পালাতে পারবে না। আমি তোমাকে খুন করব।’
মায়রা জুলফিকার লাহোর শহরের স্বচ্ছল একটি এলাকায় একটি ভবনের উপরের তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতেন। এলাকাবাসী বলেছে, পুলিশ আগে অভিযুক্ত অপহরণের সাথে জড়িত একটি গাড়ির সন্ধানে ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ নিতে এসেছিল।
নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন প্রতিবেশী বিবিসিকে বলেছেন, ওই ফ্ল্যাট থেকে প্রায়ই চিৎকার করে তর্কবিতর্কের শব্দ শোনা যেত। একবার একাধিক পুরুষকে রাস্তা থেকে ছুরি দেখিয়ে মায়রা জুলফিকারকে হুমকি দিতে দেখা গেছে। এসব বক্তব্য নিয়ে পুলিশের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে পুলিশ কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সোমবার সকালে ওই ফ্ল্যাটের গৃহ পরিচারিকা মায়রা জুলফিকারের লাশ দেখার পর জরুরি ব্যবস্থায় খবর দেন। মায়রা জুলফিকারকে দু’বার গুলি করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, তার শ্বাসরোধও করা হয়ে থাকতে পারে।
বাসিন্দারা ভোরবেলা চিৎকার শুনতে পান বলে বর্ণনা করেন।
ওই তরুণী পারিবারিক একটি বিয়েতে যোগ দিতে প্রায় দু’মাস আগে মা-বাবার সাথে পাকিস্তানে যান। তার মা-বাবা পরে ব্রিটেনে ফিরেন। কিন্তু তরুণী মায়রা জুলফিকার একাই পাকিস্তানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মঙ্গলবার লাহোরে মায়রা জুলফিকারের দাফন হয়। এ সময় তার বাবা উপস্থিত ছিলেন। তিনি মেয়ের জানাজা ও দাফনে যোগ দিতে লন্ডন থেকে পাকিস্তানে যান।
পশ্চিম লন্ডনে যেখানে তার পরিবার থাকেন, ওইখানেও আইনের স্নাতক মায়রা জুলফিকারের জানাজা হয়। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতরের তথ্য অনুযায়ী মায়রা জুলফিকার বেলজিয়ামের নাগরিক। কিন্তু তিনি বাস করতেন লন্ডনে।
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply