‘চলচ্চিত্রের অবস্থা খুব একটা ভালো না।’ এমন কথা প্রায়ই শোনা যায় এই অঙ্গন সংশ্লিষ্ট মানুষের মুখে। ফলে নির্মাণ কমে গেছে। ফলে কাজ পাচ্ছেন না অনেকে। নিজেদের মাঠেই আধিপত্য হারাচ্ছেন অভিনয়শিল্পী থেকে পরিচালক! তা হলে আধিপত্য বিস্তার করছেন কারা? এই উত্তর সাধারণ দর্শকও জানে। কারণ এখন চলচ্চিত্রে আধিপত্য বিস্তার করছেন টিভি তারকারা। অনেকেই বলে থাকেন টাকা দিয়ে সিনেমা দেখা মানুষ কখনো ফ্রিতে দেখা তারকাদের দেখতে গাঁটের পয়সা খরচ করবেন না। এই খোঁড়া যুক্তি ভুল প্রমাণ হয়েছে অনেকবার। দর্শক এখন গাঁটের পয়সা খরচ করে টিভি তারকাদেরই দেখছেন। দেখছেন তাদের নির্মিত চলচ্চিত্র।
জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, তারিক আনাম খান, জয়া আহসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ফজলুর রহমান বাবু, ইরেশ যাকের, জাকিয়া বারী মম এখন সিনেমার নিয়মিত অভিনয়শিল্পী। আবার মীর সাব্বির, হৃদি হক ও আনিসুর রহমান মিলনরা নির্মাণও করছেন চলচ্চিত্র।
জাহিদ হাসান টিভি নাটকের সফল অভিনেতাদের একজন। পাশাপাশি তার অভিনীত প্রতিটি চলচ্চিত্রই দর্শকনন্দিত। শ্রাবণ মেঘের দিন, মেড ইন বাংলাদেশ, আমার আছে জল, প্রজাপতি, হালদা ও সাপলুডু নামের সিনেমাগুলোতে অভিনয় করে তিনি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করছেন। শ্রাবণ মেঘের দিন ছবিতে অভিনয় করে জাহিদ হাসান প্রথম ১৯৯৯ সালে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান।
টিভি নাটক দিয়ে চলচ্চিত্রে সফল হওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকার নাম জয়া আহসান। নাটকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় তিনি পুরোপুরি সরে যান টিভি পর্দা থেকে। এখন তার অভিনীত চলচ্চিত্রের জন্য বসে থাকেন দর্শক। ব্যাচেলর, ডুবসাঁতার, গেরিলা, চোরাবালি, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী, জিরো ডিগ্রী, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২, দেবী জয়া অভিনীত এগুলো দেশীয় চলচ্চিত্র। এর বাইরে তিনি অভিনয় করছেন কলকাতার জনপ্রিয় অনেক চলচ্চিত্রে। যেখান থেকে তিনি অর্জন করছেন পুরস্কার। আবার টিভি নাটকেই বেশি দেখা যায় কিন্তু মাঝে মাঝে হাজির হন চলচ্চিত্রে এমন সফল তারকা আছেন মোশাররফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও চঞ্চল চৌধুরী।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারেও টিভি তারকাদের বাজিমাত। অন্তত গত পাঁচ বছরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা সেই কথাই বলছে। অভিনেতা, অভিনেত্রী, পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা, অভিনেত্রী, খলনায়ক, কৌতুক অভিনেতার মতো গুরুত্বপূর্ণ শাখায় পুরস্কার পেয়ে আসছেন টেলিভিশনের শিল্পীরা। ২০১৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে যৌথভাবে শাকিব খানের সঙ্গে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান মাহফুজ আহমেদ। মাহফুজ আহমেদ টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীর একজন। সেবার সেরা অভিনেত্রী হয়েছিলেন জয়া আহসান। পার্শ্বচরিত্রের সেরা অভিনয়শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছিলেন গাজী রাকায়েত, খল চরিত্রে ইরেশ যাকের। এরা সবাই টিভি নাটকের তারকা। ২০১৯ সালে চলচ্চিত্রের নিয়মিত অভিনয়শিল্পীদের কেউই পুরস্কার পাননি। সেই তালিকায় ছিলেন টেলিভিশনের তারিক আনাম খান, সুনেরা বিনতে কামাল, ফজলুর রহমান বাবু, জাহিদ হাসান ও নার্গিস আক্তার।
আবার টিভি ক্যামেরার সামনে থাকা কিছু মানুষ হঠাৎ চলে যাচ্ছেন পেছনে। অভিনয়শিল্পীর জায়গা থেকে গিয়ে বসছেন পরিচালকের আসনে। সেই দলের তিন তরুণ মীর সাব্বির, হৃদি হক ও আনিসুর রহমান মিলন। নাটকে অভিনয় করা এই তারকারা এবার হতে যাচ্ছেন চলচ্চিত্রের পরিচালক। প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্র পরিচালনায় আসছেন মীর সাব্বির। প্রথমবার সরকারি অনুদানের জন্য চিত্রনাট্য জমা দিয়েই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অনুদান পেয়ে গেছেন তিনি। নির্মাণ করছেন নিজের প্রথম ছবি রাত জাগা ফুল। ১৯৭১ : সেই সব দিন নামে একটি ছবি পরিচালনা করছেন মঞ্চ ও টেলিভিশনের অভিনেত্রী হৃদি হক। চলচ্চিত্রে এটি তার প্রথম কাজ। অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন নাটকেরও নির্মাতা। ১৯৯৯ সালে পরিচালনা শুরু করে দীর্ঘ বিরতি দেন তিনি। পরে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর নিয়ম করে একটি নাটক নির্মাণ করেন এ অভিনেতা। নির্মাতা হিসেবে হাত ঝালাইয়ের পর তিনি ভাবছেন সিনেমা নিয়ে। রেডবক্স নামে যে ছবিটি তিনি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন, সেটি সিনেমা বটে, তবে প্রদর্শনভাবনার দিক থেকে এটি ওটিটি প্ল্যাটফরমের কনটেন্ট।
Leave a Reply