1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩২ অপরাহ্ন

শাহেদ-সাবরিনা, পাপিয়াদের পতন সিনহা-রায়হানে কেঁদেছে দেশ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০

বছরের শুরুতে ধর্ষণের ঘটনা মহামারি আকার ধারণ করেছিল। বছরের শেষে অবশ্য এই মহামারির রাশ টানা গেছে নানা কঠোর ব্যবস্থা নেয়ায়। করোনা মহামারির শুরুর পর রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক শাহেদ করিম ও চিকিৎসক ডা. সাবরিনা চৌধুরীদের প্রতারণার কাণ্ডে হতবাক পুরো দেশ। যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার হেরেমখানার তথ্য প্রকাশের পর তা রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল ঝড় তোলে। করোনা মহামারির মধ্যেই কক্সবাজারে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড কাঁদিয়েছে পুরো দেশবাসীকে। সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যার ঘটনাও দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলে।

সিনহা হত্যাকাণ্ড: ৩১শে জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ নিহত হন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।

এ ঘটনায় চারটি মামলা হয়। তিনটি মামলা করে পুলিশ বাদী হয়ে সিনহা ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে। আর সিনহার বোন   শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ৫ই আগস্ট টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে এই চারটি মামলার তদন্ত করে ১৩ই ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে র‌্যাব। এরমধ্যে নয়জন টেকনাফ থানা পুলিশের, তিনজন এপিবিএন’র বরখাস্তকৃত সদস্য এবং তিনজন বেসামরিক ব্যক্তি। মামলার তদন্ত করেন র‌্যাব’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম। দীর্ঘ তদন্তের পর তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগ পত্রে টেকনাফ থানার সাবেক বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ডা. সাবরিনার করোনা টেস্ট জালিয়াতি: চিকিৎসক সংগঠনের নেতা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের বশ করে জেকেজি হেল্‌থ কেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষার অনুমতি নিয়েছিলেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী। কোনোরকম পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়াই মানুষকে জাল সনদ দিয়ে প্রায় আট কোটি হাতিয়ে নিয়েছিলেন এই দম্পতি। বিনামূল্য করোনা পরীক্ষার অনুমতি থাকলেও জুনের শেষদিকে অভিযোগ আসে বুকিং বিডি ও হেল্‌থকেয়ার নামে দু’টি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল জেকেজি। নমুনা পরীক্ষা না করে রোগীদের ভুয়া সনদও তারা দিচ্ছিলেন। এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২শে জুন জেকেজি হেল্‌থ কেয়ারের সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে তেজগাঁও থানা পুলিশ জেকেজি’র সিইও আরিফুল হক চৌধুরী, তার বোন জেবুন্নেছাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। ১২ই জুলাই ডা. সাবরিনাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। আরিফুল ও সাবরিনাকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ডিবি’র তদন্তকারীরা। সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গ করায় সাবরিনাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তদন্তকালে ডিবি জেকেজি’র কম্পিউটার থেকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ১৯৮৫টি ভুয়া রিপোর্ট তারা পেয়েছে। তদন্ত শেষে ডা. সাবরিনাসহ আট জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ডিবি।

ক্যাসিনো হোতা এনু-রূপনের বাসায় টাকার খনি: ২৫শে ফেব্রুয়ারি ক্যাসিনো কাণ্ডে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রূপন ভূঁইয়ার ঢাকার ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্র্রিটের ১১৯/১ মমতাজ ভিলা নামের একটি বাসার নিচতলায় অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই অভিযানে র‌্যাব তাদের বাসার পাঁচটি লকার থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা (১২ বস্তা), ১ কেজি স্বর্ণ, ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরসহ বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে র‌্যাব। অভিযানের পর মনে হয়েছে এটি কোনো বাসা নয় যেন বড় কোনো ব্যাংকের শাখা। ২০১৯ সালের ১৮ই সেপ্টেমর র‌্যাব ঢাকার ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে র‌্যাব তাদের বাসায় অভিযান চালায়। তার কয়েকদিন পর ২৪শে সেপ্টেম্বর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পরিচালক ও গেণ্ডারিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রূপন ভূঁইয়ার বাড়ি ও তাদের এক কর্মচারী ও বন্ধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি সিন্দুক থেকে ৫ কোটি টাকা, আট কেজি স্বর্ণ ও ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ওই সময় তাদের দুই ভাই ও তাদের সহযোগী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি র‌্যাব। ওই সময় র‌্যাব জানিয়েছিল, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনা করে এই দুইভাই বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। টাকা রাখতে বেশি জায়গার প্রয়োজন তাই তারা স্বর্ণ কিনে রেখেছিলেন। কারণ কম জায়গায় অনেক টাকার স্বর্ণ রাখা যায়। ওই ঘটনার পরে দু্‌ই ভাইয়ের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়।

বহুরূপী রিজেন্ট শাহেদ: রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ করিমের প্রতারণা দেখে স্তম্ভিত হয়েছিলেন দেশবাসী। বহুরূপী এই সাহেদ টেলিভিশন টকশোতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন অপরাধ, দুর্নীতি, রাজনীতি নিয়ে কথা বলতো। নিজেকে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে দাবি করতেন। করোনা পরীক্ষার ভুয়া প্রতিবেদন নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া ও নানা প্রতারণার অভিযোগে গত ৬ ও ৭ই জুলাই উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল এবং রিজেন্ট গ্রুপের অফিসে অভিযান চালায় র‌্যাব। এটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ছিল অথচ হাসপাতালটির কোনো লাইসেন্সই ছিল না। ওই অভিযানে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা বন্ধ করে দেয়া হয়। হাসপাতালে অভিযানের পরপরই লাপাত্তা হন শাহেদ। কিছুদিন পর সাতক্ষীরার দেবহাটা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়াকাণ্ড: ২২শে ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা পাপিয়া রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তুলেছিলেন পাপের সাম্রাজ্য। অবৈধ-অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে কামিয়ে নিয়েছিলেন কোটি কোটি টাকা। যুব মহিলা লীগ নেত্রীর পরিচয়ে অভিজাত ব্যক্তি ও  রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে হেন অপরাধ নেই যা পাপিয়া করেননি। বিয়ের পর স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের হাত ধরে রাজনীতি ও অপরাধকাণ্ডে জড়ান পাপিয়া। মাসের পর মাস ব্যবহার করেছেন পাঁচ তারকা হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট। চলাফেরা করতেন সামনে পিছনে গাড়ির বহর নিয়ে। প্রভাবশালী অনেক রাজনীতিকের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগে তাদের সঙ্গে ছবি তুলে প্রকাশ করেছেন নানা মাধ্যমে। অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা, জাল নোটের ব্যবসা, তদবিরবাজি, চাঁদাবাজি, জিম্মি করে টাকা আদায়, নারীদের দিয়ে অনৈতিক ব্যবসা, অশালীন ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং, অন্ধকার জগতের সব পথেই পা দিয়েছেন তিনি। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন অপরাধ জগতের রানী। বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট করেছেন। বিদেশে টাকা পাচারসহ বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন।

এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণ: ২৫শে সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কর্তৃক গণধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ (২১)। ছাত্রাবাসের আঙ্গিনায় স্বামীকে আটকে রেখে প্রাইভেটকারের ভেতর ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়। পুলিশ নির্যাতিত নারীকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ওসিসিতে তিনদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। ওই রাতেই গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে মহানগরের শাহ্‌পরাণ থানায় আওয়ামী লীগ নেতা রঞ্জিত সরকারের অনুসারী ছয় ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেন। গ্রেপ্তারের পর আটজন আসামিকে পর্যায়ক্রমে পাঁচদিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় তারা। জবানবন্দিতে প্রধান আসামি সাইফুর, তারেক, শাহ মাহবুবুর ও অর্জুন লস্কর ধর্ষণের কথা স্বীকার করে। রবিউল ও মাহফুজুর ধর্ষণে সহায়তা করার কথা স্বীকার করে। সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রহমান ওরফে রাজন ও আইনুদ্দিন জবানবন্দি দেন। পুলিশ এই আটজনকে অভিযুক্ত করে ৩রা ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে।

পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যা: মাত্র ১০ হাজার টাকা না পেয়ে ১১ই অক্টোবর ভোরে সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে এনে অমানবিক নির্যাতন করেন এসআই আকবর ভূঁইয়াসহ আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে ১২ই অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। রায়হান হত্যা মামলায় এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর, হাসান উদ্দিনসহ পাঁচ জনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ৯ই নভেম্বর কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামি এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

টাকার কুমির স্বাস্থ্যর গাড়িচালক মালেক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা আব্দুল মালেক (৬৩) গাড়িচালক হয়ে টাকার কুমির হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের গাড়ি ব্যবহার করতেন মালেক। প্রভাবশালী এই গাড়িচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ, বদলিসহ নানা অনিয়ম করে শ’ শ’ কোটি টাকার মালিক। ২০শে সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের গাড়িসহ আরও তিনটি প্রকল্পের গাড়ি নিজের কব্জায় রেখেছিল। অধিদপ্তরের নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে ক্রয়, টেন্ডারবাজি ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com